1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি অধরা

১৫ আগস্ট ২০২১

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের পাঁচজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার এখনও কোন অগ্রগতি নেই৷ এরমধ্যে তিনজন কোথায় আছেন সে বিষয়েও সরকারের কাছে কোন তথ্য নেই৷

https://p.dw.com/p/3z0im
ছবি: Bdnews24.com

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয়জনের এখন পর্যন্ত ফাঁসি হয়েছে৷ বাকি আছেন আরো পাঁচজন৷ তারা হলেন আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী৷ রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী ক্যানাডায় অবস্থান করছেন৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ তাদের ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন সময়ে আবেদন জানালেও দেশ দুটির সরকারের কাছ থেকে কোন সাড়া মিলেনি৷ অন্যদিকে আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিন কোথায় আছেন সেই খোঁজ এখন পর্যন্ত পায়নি সরকার৷

খুনিদের ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘দুটোর খবর জানি, তিনটার কোনো খবর জানি না৷ যে দুজনেরটা জানি, তাদের ফেরানোর কোনো আপডেট নাই৷’’ তিনি জানান, অ্যামেরিকা সরকারকে নতুন করে কোন তথ্য দেয়নি৷ অন্যদিকে ক্যানাডা এখন পর্যন্ত কোন তথ্যই দেয়নি৷

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন সরকার এই ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যারা সর্বোচ্চ আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত, তাদের (মধ্যে) যাদের ব্যাপারে এই রায় এখনো কার্যকর করা যায়নি তারা পলাতক থাকার কারণে, এবং দুজন দুটি দেশে থাকার কারণে, তাদেরকে ফিরিয়ে এনে এই রায় কার্যকর করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর৷’’

যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় মৃত্যুদণ্ড দেন৷ আপিলের রায়ে তিনজন খালাস পান৷ বাকি ১২ জনের মধ্যে আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর বের হয়৷

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে৷ সেসময় পলাতক ছিলেন ছয়জন৷

১০ বছর পর ২০২০ সালে ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতকদের একজন ৭২ বছর বয়সি মাজেদকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়

বাকি পাঁচজনের একজন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতে গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছেন এমন সংবাদ বের হলেও তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেনছেন,  ‘‘তার ব্যাপারে একটা খবর এসেছিল৷ আমরা এটা যাচাই বাছাই করে দেখেছি, এখন পর্যন্ত এর সত্যতা আমরা পাইনি৷’’

যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরী

যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত সে দেশের সরকার পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়ার খবর গত বছর প্রকাশিত হয়েছিল৷ দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের এই উদ্যোগে সেখানে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদ বাতিলের সম্ভাবনা তৈরি হয়৷ তবে এই বিষয়ে আর কোন অগ্রগতি জানা যায়নি৷

বিডিনিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত বছর চিঠি দিয়েছিলেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেন, ‘‘অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে ওই পর্যন্তই আছে, তারা কাগজপত্র দেখতেছেন৷ ওদের আমরা বললে বলে, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস স্বাধীন৷ তারা দেখবে বিষয়টা'৷’’

ক্যানাডায় নূর চৌধুরী

ক্যানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেছে সরকার৷ তবে

আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। দেশটির আইনে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ৷ অন্য দেশের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকেও তাই তারা ফেরত পাঠাতে পারে না৷

বিডিনিউজ জানিয়েছে বুধবার দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী ক্যারিনা গোল্ডের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকেও নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ তোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য’ এই খুনিকে ক্যানাডা থেকে ফেরত পাঠানো হবে বলে বাংলাদেশের ‘দৃঢ় প্রত্যাশার' কথা বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷

দুই খুনিকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে বলছি, খুনিদের ফেরত দাও৷ যেহেতু তোমরা সুশাসনের কথা বল, আইনের শাসনের কথা বল, আমরা আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই, এ কারণে তোমরা খুনিদের ফেরত দাও৷’’

তিনি দেশ দুটিকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘‘তোমাদের দেশকে আমরা ‘হাব ফর কিলারস' (খুনিদের আশ্রয়স্থল) হিসাবে দেখতে চাই না৷ এটা তোমাদের জন্য লজ্জার৷”

১৯৭২-১৯৭৫: এক জার্মান কূটনীতিকের চোখে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

রশীদ ও ডালিমের হদিস নেই

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রশীদ ও ডালিম৷ তবে বহুদিন ধরেই তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছুই জানা যাচ্ছে না৷

পুলিশ সদরদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী তাদের 'অবস্থান সনাক্তকৃত নয়'৷ তবে ডালিমের ‘সম্ভাব্য অবস্থান’ পাকিস্তান কিংবা লিবিয়া আর রশীদের ‘সম্ভাব্য অবস্থান' লিবিয়া কিংবা জিম্বাবোয়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) বলছে, পলাতক খুনিদের আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তারা৷ তাদের সবার নামেই ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি আছে৷

এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘দুইজন ছাড়া বাকি তিনজন কোন দেশে অবস্থান করছে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই৷’’

দুই খুনিকে ফেরাতে এবং অন্যদের অবস্থান চিহ্নিত করতে প্রবাসীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো তথ্য নাই৷ এত লোক বাইরে থাকে, কিন্তু দুষ্টলোকের খোঁজ দেয় না৷ আমরা তাদের অ্যাওয়ার্ড দিব বলেছি, তবুও তারা দেয় না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রবাসী ভাইবোনদের বলছি, আপনারা অন্তত একটা কাজ করেন, প্রতি মাসে অন্তত একবার এই খুনিদের বাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন আর জনসাধারণকে বলেন যে, এখানে খুনি থাকে৷ যাতে তারা পীড়িত হয়৷’’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা একদল সেনা কর্মকর্তা৷ খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে ক্ষমতা দখলকারী পরবর্তী সরকার৷

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফেরার পর এই অধ্যাদেশ বাতিলের করে৷ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর খুনের বিচার কাজ৷

এফএস/আরআর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান