1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্লোরিয়ান : রোমাঞ্চের নেশাতেই যার পথ চলা

৩০ আগস্ট ২০১০

জার্মান তরুণ ফ্লোরিয়ান ভিটুলস্কি৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের ঝুলি অনেক ভারী করে তুলেছেন তিনি৷ সংঘাত-প্রবণ বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছেন৷ তুলেছেন তাঁর চিত্র৷ নাগরিক সাংবাদিকতার উদাহরণ হিসেব ধরা হয় ফ্লোরিয়ানের কাজকে৷

https://p.dw.com/p/Oz3x
DW-TV typisch deutsch blog
ব্লগের পথ ধরে অনেকেই উঠে আসছে নাগরিক সাংবাদিকতায়

ব্যাংককে গুলি খেয়েছিলেন, বেঁচে উঠেছেন৷ দেখে এসেছেন তেহরানের জেল৷ পরিদর্শনে নয়, কয়েদি হিসেবে৷ আফগানিস্তানে সেই সুদূরে আদিবাসী পল্লীতেও জমিয়ে বসেছিলেন তিনি৷ আমাদের এই তিনির বয়স মাত্র ২৩, কিন্তু এরই মধ্যে প্রচারের আলোয়৷ নাগরিক সাংবাদিকের সংজ্ঞা চাইলে ফ্লোরিয়ান ভিটুলস্কিকে দেখিয়ে দিলেই হয়৷ টুইটার-ফেসবুকের কল্যাণে এই জার্মান যুবা এখন এতটাই পরিচিত৷

ভাইটর ডটকম - এটাই ফ্লোরিয়ানের ব্লগ৷ সেখানে ঢুকলেই দেখবেন ফ্লোরিয়ান কী করছেন, কী করবেন৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার এই পথচলা অনেককে শিহরিত করে৷ গত বছরের কথা শোনাচ্ছিলেন ফ্লোরিয়ান৷ ঘটনাস্থল তেহরান৷ বিক্ষোভ চলছে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ৷ ফ্লোরিয়ান গিয়েছিলেন অবশ্য ইরানের সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে৷ বিক্ষোভ এড়াতেই চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু বিধিবাম, রোমাঞ্চ যার নেশা, তা কি তাকে ছাড়ে? ট্যাক্সিচালক পথ ভুল করে গাড়ি সোজা চালিয়ে দিল সেই রাস্তায়, যেখানে বিক্ষোভ চলছে৷ ফ্লোরিয়ান বললেন, ‘‘হঠাৎ ঘিরে ধরল অস্ত্রধারীরা৷ জানালে ভেঙে হাত ঢুকিয়ে হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিল৷ গুঁড়িয়ে দিল তা৷ জানলাম, তারা ইরানের সিক্রেট পুলিশ৷ ধরে নিয়ে গেল তাদের দপ্তরে৷''

Iran Wahlen Symbolbild Facebook Twitter
ইরানের ঘটনা উঠে এসেছে নানা ব্লগ ও সামাজিক নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটেছবি: AP / DW

ইরানে দুই দিন আটকা ছিলেন ফ্লোরিয়ান৷ বললেন, ‘‘তারা আমাকে গুপ্তচর বলে সন্দেহ করছিল৷ প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় জেরা করত৷ ঘুমাতেই দিত না৷'' হাসতে হাসতে আরেকটি তথ্য দিলেন এই যুবা, ‘‘আমার আইফোনটি তারা নেয়নি৷ নেড়েচেড়ে দেখেছে, ভেবেছে এটা এমপি-থ্রি প্লেয়ার৷''

থাইল্যান্ডের ঘটনা এই বছরেরই৷ বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনীর তৎপরতাকে ক্যামেরাবন্দি করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিলেন৷ এই বিক্ষোভের চিত্র ধারণ করতে গিয়েই উরুতে বুলেট লাগে৷ তাতেও দমেননি ফ্লোরিয়ান৷ কাজ চালিয়ে গেছেন৷ তাঁর সব কাজই চলে আসত ভাইটর ডটকম-এ৷ ফ্লোরিয়ানের তোলা ওইসব ভিডিও প্রচার করে ফ্রান্সের চ্যানেল ‘ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর', জার্মানির ‘ডের স্পিগেল' ও সিএনএন৷ এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে ভয় লাগে না - জানতে চাইলে ফ্লোরিয়ান বলেন, ‘‘আমি খুবই সতর্ক থাকি৷ আর যদি সতর্ক থাকা যায়, কী ঘটছে সে সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকে, তাহলে বন্দুকযুদ্ধের মধ্যেও আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন৷''

জার্মানির হ্যানোফারের কাছেই ছোট একটি শহরে ফ্লোরিয়ানের বাড়ি৷ তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় যারা আছেন, তাঁদের অনেকে ফ্লোরিয়ানের কথা জানেন ভালোভাবেই৷ তাঁর সাহসী কাজের জন্য থাই তরুণরা তো ফ্লোরিয়ানের ভক্ত বনে গেছেন৷ টুইটারে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা এখন পাঁচ হাজারের বেশি৷

অনেকেরই জিজ্ঞাসা, ফ্লোরিয়ান বারবার নিজেকে ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছেন কেন? উত্তরটা সহজ, রোমাঞ্চের প্রতি আগ্রহ৷ ফ্লোরিয়ান বললেন, আমার কৌতূহলই আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়৷

ফ্লোরিয়ান এখন লাওসে একটি এনজিওতে কাজ করেন৷ আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য যেতে পারেন ক্যানাডায়৷ সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দু'বছর বিশ্বে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও দিতে চেয়েছে৷ আর তা যদি গ্রহণ করেন, তাহলে কিছু দিনের মধ্যেই ফ্লোরিয়ানের দেখা মিলতে পারে দারফুর কিংবা ইরাকে৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ