1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেসবুকের নতুন তথ্য ফাঁস, তোলপাড় গণমাধ্যম

২৬ অক্টোবর ২০২১

ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাপ কীভাবে বাক-স্বাধীনতায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, তা প্রকাশ করেছে বেশ কিছু গণমাধ্যম৷ অভ্যন্তরীণ তথ্য ফাঁস হওয়ায় নতুন করে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে ফেসবুক৷

https://p.dw.com/p/42CSG
Facebook Schriftzug im Auge
ছবি: Ralph Peters/imago images

সোমবার বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফেসবুক নিয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়৷ ফেসবুকের সাবেক প্রোডাক্ট ডেভেলপার ফ্রান্সেস হাউগেনের সংকলনে থাকা সংস্থাটির গোপন তথ্য এখন সারা বিশ্বের সামনে৷

সোমবার যুক্তরাজ্যে একটি সংসদীয় কমিটির সামনে সাক্ষ্যদান করেন হাউগেন৷ ওই কমিটি ফেসবুকের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া তথ্যের প্রভাব ও তার ক্ষতির দিকটি যাচাই করছে৷

নিজের বক্তব্যে হাউগেন জানান কীভাবে ফেসবুক অনলাইনে হেট স্পিচ বা ঘৃণামিশ্রিত কথোপকথনকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে৷ এছাড়া নির্দিষ্ট অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের রাজনৈতিক চরমতার দিকে ঠেলে দেয় বলে জানান হাউগেন৷

তিনি বলেন, ‘‘কোনো বামপন্থি মনোভাবাপন্ন মানুষকে অতিবাম চিন্তার দিকে ও একজন সাধারণ ডানপন্থি ব্যক্তিকে আরো চরম ডানপন্থার দিকে ঝুঁকিয়ে দেয় ফেসবুক৷''

এর আগে এ মাসেই হাউগেন যুক্তরাষ্ট্রে সেনেটেরসামনে উপস্থিত হয়ে ফেসবুকের নানা ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে নিজের বক্তব্য রাখেন৷ সেখানে তিনি জানান কীভাবে চাকরি ছাড়ার আগে লুকিয়ে নানা অভ্যন্তরীণ নথি সাথে নিয়ে আসেন তিনি৷

কী রয়েছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে?

মার্কিন সংবাদসংস্থা সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনে ফেসবুকের বিরুদ্ধে তিনটি ধাপে মানুষকে শোষণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ পাশাপাশি, মানবপাচার রোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিতে ফেসবুক অক্ষম হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে৷ সিএনএন-এর মতে, ফেসবুক শুধু ব্যবসায়িক ও সামাজিক চাপের মুখে পড়েই মানবপাচারের অভিযোগ থাকা অ্যাকাউন্টগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে৷

ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্মতিতেই ভিয়েতনামে সরকারবিরোধী ব্যক্তিত্বদের আলাপচারিতা সেন্সর করা হয়৷ এমনটা করতে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির অনুরোধ ছিল বলে জানাচ্ছে এই প্রতিবেদন৷

সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গ বলছে, যে হারে ফেসবুকের বিভিন্ন মাধ্যমে কিশোর কিশোরী ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কমছে, তা সরাসরি বিজ্ঞাপনদাতাদের জানায়নি ফেসবুক৷

মানবপাচার ও ফেসবুক

ফেসবুকেরবিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মানবপাচারের সাথে জড়িতদের এই অ্যাপের ব্যবহারের দিকটি৷ অভ্যন্তরীণ নথিগুলি জানাচ্ছে, ২০১৮ সাল থেকেই এই সমস্যা সম্পর্কে জানতেন ফেসবুকের কর্তারা৷ এক বছর পর, বিবিসি এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার পর অ্যাপলের মতো সংস্থা নিজেদের পণ্য থেকে ফেসবুকের সমস্ত অ্যাপ সরিয়ে নেবার কথা ভাবে৷

সেই সময় ফেসবুক তাদের নিজস্ব পরিসরে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় ও এই ধরনের কন্টেন্ট তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে ফেলে৷ কিন্তু হাউগেনের নথিগুলি বলছে, বিবিসি বা অ্যাপলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবসায়িক হুমকি আসার আগে পর্যন্ত কিছুই করেনি ফেসবুক৷

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হাউগেন এর আগে লিখেছিলেন, ‘‘ফেসবুকের বিনিয়োগকারীরা নিশ্চয় জানতে আগ্রহী হবেন যে এক পর্যায়ে ফেসবুক অ্যাপলের পণ্যে তাদের উপস্থিতি হারাতে বসেছিল, কারণ তারা মানবপাচার ঠেকাতে পারছিল না৷''

এরপরেও সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে এমন কিছু ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলের তথ্য তুলে ধরেছে, যেখানে এখনও নিয়মিত মানবপাচার ও মানুষ কেনাবেচা সম্পর্কিত তথ্য ভাগ করা হয়৷

এক্ষেত্রেও সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে যে অ্যাকাউন্টগুলির কথা বলে, ঠিক সেই অ্যাকাউন্টগুলিকেই সরিয়ে ফেলে ফেসবুক৷ ফিলিপাইন্সের মতো দেশে, যেখানে নারী পাচারের বাড়বাড়ন্ত রয়েছে, ইন্সটাগ্রামে নেই কোনো বাড়তি নিরাপত্তার সুযোগ৷

শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ভিয়েতনামের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সভার আগে ফেসবুক তাদের ‘ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট' প্রকাশ করে৷ সেখানে বলা হয় যে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুই হাজার ২০০টি পোস্ট ব্লক করে ফেসবুক৷ একই বছরের জানুয়ারি থেকে জুনমাসে এই সংখ্যা মাত্র ৮৩৪৷

নতুন প্রজন্ম ও ফেসবুক

ফেসবুকের উচ্চপদস্থ কর্মী ক্রিস কক্সের একটি প্রতিবেদন ফাঁস হলে জানা যায় কীভাবে টিনএজার ও অল্পবয়সিদের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ফেসবুক৷

প্রতি বছর, আগের বছরের তুলনায় টিনএজাররা ১৬ শতাংশ কম সময় ফেসবুক ব্যবহার করে কাটান৷ অন্যান্য তরুণদের মধ্যে পাঁচ শতাংশ কম সময় ফেসবুকের পেছনে খরচ হচ্ছে৷

শুধু তাই নয়, আগের চেয়ে লক্ষণীয় হারে কমছে ফেসবুকের সার্বিক ব্যবহারকারীদের সংখ্যাও৷ দেখা যাচ্ছে যে তরুণদের কাছে ‘ফেসবুকের কন্টেন্ট নেতিবাচক, ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর' বলে মনে হয় এবং অন্য অনেকেই এখন আর নিজের তথ্য নির্ভয়ে ফেসবুকে ভাগ করে নিতে পারেন না৷

ব্লুমবার্গের মতে, ফেসবুক বর্তমানে বিশ্বের বিজ্ঞাপন বাজারের ২৩ দশমিক ৭ শতাংশের অধিকারী হওয়ায় এই সব স্পর্শকাতর বিষয় ফেসবুক কর্তারা তাদের বিনিয়োগকারীদের সব সময় খোলাখুলিভাবে জানান না৷ অন্যদিকে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন থেকে ওঠা প্রশ্নসহ বাকি সমস্ত অভিযোগ নিয়ে ওঠা প্রশ্নকে সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছে ফেসবুক৷

আমান্ডা রিভকিন/এসএস