ফুটবলই এই গরিব, প্রান্তিক মেয়েদের মুক্তির জায়গা
তাদের একটাই পরিচয়, তারা গরিব। তাদের একটাই আনন্দের জায়গা, ফুটবলের মাঠ। ফুটবলই পশ্চিমবঙ্গের এই মেয়েদের দুঃখ ভুলে যাওয়ার জায়গা।
মুক্তির আনন্দ
তারা সকলেই খুব গরিব পরিবারের। পরিবারের মাসিক আয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অনেক বাধা উপেক্ষা করে তারা ফুটবল খেলেন। ফুটবলের মাঠ, বল নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়ার মধ্যেই তারা মুক্তির আনন্দ পান। ফুটবল মাঠ তাদের কাছে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে নিজেদের প্রতিভার ঝলক দেখানোর জায়গা।
কলকাতা-নেপলস ফ্রেন্ডশিপ কাপ
কলকাতায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো কলকাতা-নেপলস ফ্রেন্ডশিপ কাপ। সেখানেই খেললো এই গরিব, পিছিয়ে পড়া এলাকার মেয়েদের নিয়ে গঠিত আটটি টিম। নেপলস শহরের পক্ষ থেকে ক্লাবগুলিকে দেয়া হয় ম্যারাডোনার মূর্তি ও স্মারক। কয়েকজন মেয়েকে নেপলস নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।
বিভিন্ন জেলা থেকে
পুরুলিয়া, মালদহ, সোনারপুর, বর্ধমানের দল এসেছিল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। খেলেছেন আদিবাসী মেয়েরা, খুবই গরিব পরিবারের মেয়েরা।
কলকাতার দল
কলকাতার চারটি দল ছিল। দুর্বার, পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব, রোশনি উইথ গ্রুপ এবং শান্তি মল্লিক অ্যাকাডেমি। প্রতিটি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল। প্রতিটি ম্যাচে আর্থিক দিক থেকে কোণঠাসা মেয়েদের লড়াই ছিল দেখার মতো।
অনেক বাধা পেরিয়ে
বর্ধমানের মুসলিম পরিবারের মেয়ে সোনিয়া খাতুন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ফুটবল খেলতে গিয়ে অনেক বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। সানিয়া জানিয়েছেন, হাফপ্যান্ট পরতে হয়, বাড়ি ফিরতে দেরি হয়, বাইরে যেতে হয় খেলতে, এ সব নিয়ে পরিবারের আপত্তি ছিল। সানিয়ার বাবা ঘাস কেটে রোজগার করেন। মাসে রোজগার হাজার চারেক টাকা।
সোনালি সোরেনের কাহিনি
বর্ধমানের টিমে খেলেন আদিবাসী পরিবারের মেয়ে সোনালি সরেন। বাবা ছোট কৃষক। মাসে রোজগার হাজার পাঁচেক টাকা। তবে তার ফুটবল খেলাকে বাবা-মা সমর্থন করেছেন। ইস্টবেঙ্গলে মেয়েদের দলেও খেলেছেন সোনালি। জাতীয় পর্বের প্রতিযোগিতাতেও খেলা হয়ে গেছে তার।
দীপিকা নস্করের কথা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার দীপিকা নস্করকে প্রথমে বাবা-মা ফুটবল খেলতে নিষেধ করতেন। দীপিকা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাবা-মা বলতেন, ফুটবল খেললে হাত-পা ভেঙে যেতে পারে। তখন বিয়ে দিতে সমস্যা হবে। কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেছেন তিনি।
ফুটবলকে সম্বল করে
মল্লিকা সাঁপুইয়ের পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মেয়েকে তার প্রশিক্ষকরা যতটা সম্ভব সাহায্য করেন। ফুটবলকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায় মল্লিকা। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ফুটবল খেলে অনেক দূর যেতে চাই। প্রচুর প্র্যাকটিস করি। লক্ষ্যপূরণ করবই।
পাথরপ্রতিমার মেয়ে
সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমার মেয়ে নয়ন্তিকা মণ্ডল। ফুটবল তার ধ্যানজ্ঞান। বাড়ির বাধা ছিল না। দুর্বারের টিমে খেলেন তিনি। খুব ছোট থেকে ফুটবল খেলছেন। এই মাঠই তার লড়াইয়ের জায়গা।
চাক দে ইন্ডিয়া
একসময় এই মেয়েরাই হয়তো ভারতীয় মেয়েদের ফুটবলে নক্ষত্র হয়ে উঠবে। তাদের ওই দারিদ্র্য, কষ্ট, বাধা সব অতিক্রম করে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দেশকে গর্বিত করবে। আর প্রেরণা যোগাবে অন্য মেয়েদের। ফুটবলই এই মেয়েদের কাছে প্রাণের আরাম, স্বপ্নপূরণের এক টুকরো পৃথিবী।