ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে বায়োমেট্রিক: তদন্তকারীদের যত হাতিয়ার
ফিঙ্গারপ্রিন্টের যাত্রা শুরু আজ থেকে ১২৫ বছর আগে, ১৮৯১ সালে৷ সেই থেকে অপরাধীদের ধরতে তদন্তকারীরা আজকাল আরও নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন৷
যখন থেকে আঙুলের ছাপ নেয়া শুরু
১৮৯১ সালে ক্রোয়েশিয়ায় জন্ম নেয়া আর্জেন্টিনার ক্রিমিনোলজিস্ট হুয়ান ভুসেটিচ প্রথমবারের মতো অপরাধীদের আঙুলের ছাপ নেয়া শুরু করেছিলেন৷ তখন থেকেই অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে প্রমাণ হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার শুরু হয়েছিল৷
রঙের ব্যবহার
একসময় আঙুলের ছাপ নেয়ার আগে আঙুলে রং লাগাতে হতো৷ এছাড়া হাতে ময়লা থাকলেও সমস্যা হতো৷ কিন্তু আজকাল স্ক্যানার আসার কারণে সেসব ঝামেলা পোহাতে হয় না৷ সংগ্রহ করা তথ্যগুলোও দ্রুত ডাটাবেসে জমা হয়ে যায়৷
কখনও এক হয় না
একজনের আঙুলের ছাপ কখনও আরেকজনের সঙ্গে মেলে না৷ এমনকি যমজ হলেও নয়৷ তাই তো ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এত গুরুত্বপূর্ণ৷
নির্বাচনের কাজে
ছবিতে নাইজেরিয়ায় একটি নির্বাচনের সময় কর্মকর্তাদের ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিতে দেখা যাচ্ছে৷ নির্বাচনি প্রতারণা ঠেকাতে এই ব্যবস্থা দারুণ কার্যকর৷
স্মার্টফোনে আঙুলের ছাপ
গোপনীয়তা বজায় রাখতে আজকাল অনেকে স্মার্টফোন লক করতে আঙুলের ছাপ ব্যবহার করছেন৷ ফলে ফোন হারিয়ে গেলেও অন্য কারও পক্ষে ফোনের তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়৷
এটিএম-এও আঙুলের ছাপ
ছবিটি স্কটল্যান্ডের ডান্ডি শহরের একটি এটিএম বুথের৷ সেখানে টাকা তোলার সময় ক্রেতাদের বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হয়৷ চোরদের জন্য নিশ্চয় সুখবর নয় এটি৷
পাসপোর্টেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট
২০০৫ সাল থেকে জার্মানি সহ অন্য কয়েকটি দেশের পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক তথ্যের অংশ হিসেবে আঙুলের ছাপ নেয়া হয়৷ সঙ্গে থাকে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ফটো৷
এবার জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের কথা
ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালেক জেফ্রিস ১৯৮৪ সালে অনেকটা হঠাৎ করেই ডিএনএ-ফিঙ্গারপ্রিন্টিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন৷ তিনি দেখতে পান প্রতিটি মানুষের ডিএনএ-র একটি বৈশিষ্ট্য অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা৷ সেটিকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি ছবি তৈরি করেন, যা দেখতে বারকোডের মতো৷
সবার জন্য বারকোড
জার্মান পুলিশ ১৯৯৮ সাল থেকে এমন বারকোড সংরক্ষণ করা শুরু করে৷ তখন থেকে এখন পর্যন্ত জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তা নিয়ে ১৮ হাজারেরও বেশি অপরাধের সুরাহা করা গেছে৷
নিরপরাধ ব্যক্তিদের সহায়
জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট যে শুধু অপরাধীদের শনাক্ত করতেই কাজে লাগে, তা নয়৷ নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাঁচাতেও সহায়তা করে এটি৷ যেমন কির্ক ব্লাডসওয়ার্থ বিনা অপরাধে নয় বছর জেলে ছিলেন৷ পরে জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তায় তিনি নিরপরাধ বলে প্রমাণিত হন৷ এভাবে প্রায় ১০০ জনকে নিরপরাধ প্রমাণ করে ‘দ্য ইউএস ইনোসেন্স প্রজেক্ট’৷
এবার মুখের ব্যবহার
এতক্ষণ আঙুল আর ডিএনএ নিয়ে কথা হলো৷ এবার তদন্তকারীদের আরেকটি হাতিয়ারের কথা জানবো – ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার৷ এর মাধ্যমে বড় কোনো জনসমাবেশে উপস্থিত থাকা কোনো অপরাধীকেও খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে৷
স্বরও কাজে লাগাচ্ছেন তদন্তকারীরা
আঙুলের ছাপের মতো প্রতিটি মানুষের গলার স্বরও ভিন্ন৷ ফলে ‘ভয়েস রিকগনিশন সফটওয়্যার’ ব্যবহার করে তদন্তকারীরা আজকাল ফোনে কে হুমকি দিচ্ছে তাকে খুঁজে বের করছেন৷