'ফাস্ট ফ্যাশন': প্রদীপের নীচেই অন্ধকার
ফ্যাশনের নেশা আর জাদু চিরকালে, তা সত্ত্বেও জামাকাপড় আজ ফেলে দেওয়ার জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ড্রেসডেন শহরের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সংগ্রহশালায় আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে গার্মেন্টস শিল্পের অন্ধকার দিকটাও দেখানো হয়েছে৷
বিশেষ মূল্য ছাড়ের মূল্য
সব ধরনের পছন্দ আর সবরকম দামের জামাকাপড় সরবরাহ করার জন্য ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি এমন সব দেশে গার্মেন্টস তৈরি করাচ্ছে, যেখানে পরিবেশ সুরক্ষার মান ও পারিশ্রমিক, দুই-ই নীচের দিকে৷ ড্রেসডেনের ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ প্রদর্শনীতে ফ্যাশন নামের বিগ বিজনেসের যবনিকার আড়ালে উঁকি মারা হয়েছে৷ প্রদর্শনীটি চলবে ২০১৬ সালের ৩রা জুন অবধি৷
গ্ল্যামারের অপর পীঠ
শুরু থেকে ‘শ্রেডিং’ বিশেষ দূর নয়৷ পশ্চিমের মানুষ নিত্যনতুন পণ্য চায় ও কেনে – প্রয়োজনের অনেক বেশি৷ ড্রেসডেনের প্রদর্শনীতে দেখতে পাওয়া যাবে এর অর্থনৈতিক, নৈতিক ও পরিবেশগত ফলশ্রুতি৷ পশ্চিমি জীবনধারার ফলে বাংলাদেশের মানুষ কতটা প্রভাবিত হচ্ছেন?
রিসাইক্লিং, নাকি সস্তায় আবর্জনা সরানো?
ইউরোপে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা যে সব পুরনো জামাকাপড় সংগ্রহ করেন, তার ৬০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পাঠানো হয়৷ ধরন, রং ও ফ্যাশন অনুযায়ী বড় বড় গাঁট বেঁধে, জাহাজে করে সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করা হয়৷ ভারতের পানিপথে পুরনো গরম জামাকাপড় আবার রং অনুযায়ী ভাগ করা হয় – তার ফলে নাকি তার দাম বাড়ে৷
বাঁচাও যায় না, মরাও যায় না
ফাস্ট ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে যেভাবে প্রোডাকশন চলে, তা ইউরোপেও এককালে ছিল৷ ধীরে ধীরে তা পুবদিকে ‘রপ্তানি’ করা হয়েছে: প্রথমে পূর্ব ইউরোপে, তারপর এশিয়ায়৷ মাইনেপত্র এক হিসেবে দারিদ্র্যসীমার নীচে৷ বাংলাদেশে একজন গার্মেন্টস কর্মীর পরিবারের ১১ জন মানুষ একটি ঘরে বাস করছেন, এমনও দেখা যায়৷
হাজার স্বপ্নের সমাধি
রিনার মা কাঁটাতারের বেড়ার সামনে বসে তাঁর মেয়ের ফেরার অপেক্ষা করছেন – অনর্থক৷ বেড়ার পেছনে সাভারের সেই গার্মেন্টস ফ্যাক্ট্রি, রানা প্লাজা, যা ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ধসে পড়ে ১,১৩৪ জন মানুষের জীবন নেয়৷ ছবিটি তোলেন তসলিমা আখতার৷
সোয়েটশার্টেই তার প্রমাণ
সস্তায় উৎপাদন আর কাজের পরিবেশের মধ্যে সংযোগসূত্র শুধু ছবি আর ডায়াগ্রামের মাধ্যমেই নয়, গার্মেন্টসের মধ্যে দিয়েও ফুটিয়ে তোলা যায়৷ জার্মান শিল্পী মানু ভাসহাউস চীনে এমন সব সোয়েটশার্ট তৈরি করিয়েছেন, যার উপর রানা প্লাজা বিপর্যয়ের ছবি ছাপানো রয়েছে৷
স্লো ফ্যাশন
ফ্যাশন কথাটার সঙ্গে ‘ফেয়ার’ – মানে ন্যায্য – কথাটাও যে যোগ করা যায়, তার প্রমাণ এই ধরনের ফ্যাশন৷ এই সব ডিজাইনাররা শ্রমিকদের শোষণ, পরিবেশের পক্ষে হানিকর অথবা জন্তুজানোয়ারের পক্ষে কষ্টদায়ক, এমন কোনো পন্থায় ফ্যাশন সৃষ্টি করতে চান না৷
এথিক্যাল ফ্যাশন শো
এ বছর বার্লিন ফ্যাশন উইকে টেকসই ফ্যাশন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল৷ ড্রেসডেনের প্রদর্শনীতে তা-ও দেখানো হয়েছে৷ পশ্চিমে এখন ‘সবুজ’ ফ্যাশন আর ‘ফেয়ার ট্রেড’-এর প্রবণতা বেড়েছে৷
কিন্তু ‘পেপে’?
পাওলো উডস-এর তোলা এই ছবিটি যে ব্যঙ্গাত্মক, তা কাউকে বলে দিতে হবে না৷ ‘আমাকে চুম্বন করো, আমি ব্লন্দিনী’, লেখা রয়েছে টি-শার্টটিতে৷ অথচ যে মেয়েটি এই সেকেন্ড হ্যান্ড টি-শার্ট পরে রয়েছে, সে হাইতির, ইউরোপ বা অ্যামেরিকার নয়৷ দাতব্য হয়ে এই ধরনের সব টি-শার্ট হাইতিতে আসে৷ সেখানে তাদের বলা হয় ‘পেপে’৷