ফার্কের সঙ্গে শান্তি চুক্তির পাঁচ বছর, শান্তি এখনও অধরা
২০১৬ সালে ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি সই করেছিল কলোম্বিয়ার সরকার৷ কিন্তু সাবেক অনেক বিদ্রোহী মনে করেন, সরকার চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ কিছু শর্ত পূরণ করেনি৷ তাই আবারও অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন কেউ কেউ৷
শুরুর কথা
বিশ শতকের মাঝামাঝি কলোম্বিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে৷ বামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রজাতন্ত্র গড়ে তুলেছিল৷ পরে সরকারি বাহিনী সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ কিন্তু দুজন নেতা- মানুয়েল মারুলান্দা ও খাকোবো আরেনাসকে (বামে) ধরতে পারেনি সরকার৷ তারাই ১৯৬৬ সালে ‘রেভ্যুলিউশনারি আর্মড ফোর্সেস অফ কলোম্বিয়া’ বা ফার্ক প্রতিষ্ঠা করেন৷
সদস্য সংগ্রহ
ল্যাটিন অ্যামেরিকার বিভিন্ন গেরিলা গ্রুপের কৌশল অনুসরণ করা শুরু করেছিল ফার্ক৷ শিক্ষার্থী ও শহরে বাস করা বস্তিবাসীদের তারা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া শুরু করে৷ ১৮ হাজারের বেশি অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ ছিল৷ মেয়েরাও বাদ যায়নি৷ তাদের বাচ্চা নিতে দেয়া হত না৷
অর্থ সংগ্রহ
অর্থের প্রয়োজনে তারা মাদক ব্যবসায় শুরু করেছিল৷ এমনকি মাদকের চাষও করতো তারা৷ মার্কিন সহায়তায় কলোম্বিয়ার সেনাবাহিনী তাদের খেত ও মাদক ল্যাব (ছবি) ধ্বংস করতে পারলেও অনেক অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল ফার্ক৷ একটা সময় ছিল যখন সুইজারল্যান্ডের সমান এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো তারা৷ ঐ অংশ ‘বিদ্রোহী কর’ও আরোপ করা হয়েছিল৷
অপহরণ
অর্থ সংগ্রহের আরেকটি উপায় ছিল অপহরণ৷ ১৯৭০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল ফার্ক৷ ২০০২ সালে তারা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইংগ্রিত বেতানকুয়রকে অপহরণ করেছিল৷ তাকে মুক্ত করতে কলোম্বিয়ার সেনাবাহিনীর প্রায় ছয় বছর লেগেছিল৷
শান্তির চেষ্টা
আশির দশকে সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ফার্ক৷ তাদের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ঢুকে নীতি ঠিক করারও চেষ্টা করেছে৷ নব্বইয়ের দশকে তারা ১০ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচিও দিয়েছিল৷ ২০০১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস পাস্ত্রানার সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেছিলেন ফার্ক নেতা মানুয়েল মারুলান্দা (ডানে)৷ কিন্তু সফলতা আসেনি৷
সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া
আলোচনার মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় সরকার ও ফার্কের মধ্যে কোনো চুক্তি সম্ভব হচ্ছিল না৷ সামরিক ঘাঁটি ও পুলিশ স্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে৷ সাধারণ নাগরিকও রক্ষা পায়নি৷ উপরের ছবিটি ২০০৩ সালে মিডেলিন শহরে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের৷ ঐ হামলায় এক শিশুসহ ছয়জন প্রাণ হারিয়েছিল৷
শক্তি কমতে থাকা
২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট হয়ে আলভারো উরিবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেন৷ ২০০৮ সালের ১ মার্চ ফার্কের উপনেতা রাউল রয়েসকে হত্যা করা হয়৷ এর কিছুদিন পর মারা যান মানুয়েল মারুলান্দা৷ ২০১১ সালে তার উত্তরসূরিকেও হত্যা করা হয়৷ ২০০৮ সালে উরিবের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় ফার্কের সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে আট হাজারে নেমে এসেছিল৷ অনেকে ফার্ক ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন৷
চুক্তি সই
শক্তি কমতে থাকায় প্রেসিডেন্ট খুয়ান মানুয়েল সান্তোসের (বামে) সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করে ফার্ক৷ ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ফার্ক নেতা টিমোলেওন খিমেনেস (মাঝে) ও সান্তোস চুক্তি সই করেন৷ যদিও এক সপ্তাহ পর এক গণভোটে সেই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কলোম্বিয়ানরা৷ তবে ঐ গণভোটের ফল মানার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না৷
অস্ত্র ত্যাগ
শান্তি চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে ফার্ক অস্ত্র ত্যাগে রাজি হয়৷ যদিও কয়েকশ সদস্য তা মানতে রাজি হননি৷ ফার্কের অল্প যে কয়েকজন সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের এক বিশেষ আদালতের মুখোমুখি করা হয়৷ এ বছরের শুরুতে টিমোলেওন খিমেনেসসহ কয়েকজন অভিযুক্ত করা হয়৷
সমাজে ফেরার মিশন
ফার্কের সাবেক কয়েকজন বিদ্রোহী সমাজের অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন৷ ছবিতে সাবেক বিদ্রোহী রদরিগো গ্র্যান্ডাকে অপহরণের শিকার দুই ব্যক্তির বোনের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে৷ এই সময় গ্র্যান্ডা তার অপরাধের জন্য ক্ষমতা চান৷
লক্ষ্য কি পূরণ হচ্ছে?
ফার্ক এখন একটি রাজনৈতিক দল৷ তবে ফার্কের অনেক সদস্য মনে করেন সরকার শান্তি চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণ করেনি৷ কিছু সদস্য আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করেছেন৷ এদের মধ্যে আছে শান্তি আলোচনার দুজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ইভান মার্কেজ ও খেসুস সান্ত্রিস৷ ২০১৯ সালে এক ভিডিও বার্তায় তারা বলেন, ‘দ্বিতীয় মার্কেতালিয়া’ শুরু হয়ে গেছে৷ উল্লেখ্য, ফার্কের দুই প্রতিষ্ঠাতা ‘রিপাবলিকা ডে মার্কেতালিয়ার’ নেতা ছিলেন৷