প্লাস্টিক ব্যবহারে এখনো চূড়ান্ত অসতর্ক কলকাতা
সরকার মুখে প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। কলকাতায় প্লাস্টিক ব্যবহার এখনো ভয়াবহ রকমের বেশি।
সরকারের বক্তব্য ও বাস্তব
প্লাস্টিক বর্জন এবং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার কথা বহুদিন ধরেই বলে আসছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। কিন্তু তারপরেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমেনি। যা চিন্তায় ফেলেছে পরিবেশবিদদের।
প্লাস্টিক ক্ষতিকারক
প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে বহু আলোচনা, বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। মানুষ এই ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত থাকা সত্বেও প্লাস্টিক বর্জন করতে পারার অক্ষমতা অবাক করছে পরিবেশ সচেতন মানুষদের।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিসংখ্যান
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে প্রতিদিন ২৬ হাজার টন প্লাস্টিক উৎপন্ন হচ্ছে। তারমধ্যে ১০ হাজার টন দিনের দিন ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা বিশেষ দেখা যায় না।
ভয়াবহ তথ্য
সম্প্রতি এক গবেষণায় উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে ভারতে নিষিদ্ধ হতে চলেছে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। বর্তমান সময়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সারাটা সময় প্লাস্টিকে মোড়া।
পরিবেশবিদদের বক্তব্য
পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বাজারে প্লাস্টিক না মিললেই সাধারণ মানুষ বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবেন। খরচের কারণে প্লাস্টিকের ঠিক ঠিক বিকল্প এখনো মিলছে না। কলকাতা শহরে পলিব্যাগের মূল উৎস এখানকার দোকান-বাজার। তার উপর এই শহরের নিকাশি ব্যবস্থাও আধুনিক নয়। মানুষের অবিবেচনার ফলে এই প্লাস্টিক নালা-নর্দমার মুখ আটকে বর্ষাকালে দুর্ভোগ বাড়ায়।
ক্ষতিকারক রাসায়নিক
প্লাস্টিকে থাকা পলি ভিনাইল ক্লোরাইড বহুদিন মাটির সঙ্গে মিশে থাকলেও তার ক্ষয় হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মাইক্রো প্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়। যা আরও মারাত্মক। মাইক্রোপ্লাস্টিক জলজ প্রাণীদের পেটে গিয়ে তাদের পরিপাকতন্ত্র নষ্ট করে দেয়।
সুভাষ দত্তের বক্তব্য
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, ''গঙ্গার জল গঙ্গোত্রী থেকে দূষিত হলে কি আর হাওড়া ব্রিজের কাছে শোধন করা সম্ভব? কাজেই প্লাস্টিক তৈরি বন্ধ করতে হবে। মাইক্রনের বিধিনিষেধে সীমাবদ্ধতা রাখলে চলবে না।''
প্লাস্টিকের বিকল্প প্রয়োজন
সুভাষের বক্তব্য, যতদিন প্লাস্টিকের কোনও সস্তা বিকল্প সরকার আনতে পারছে, ততদিন কিছু হওয়ার নয়। মাঝেমাঝে পুরসভা থেকে বাজারে হানা দেওয়া হয়, কয়েকদিন জরিমানার ভয়ে মানুষ লুকিয়ে-চুরিয়ে ব্যবহার প্লাস্টিক ব্যবহার করে, তারপর আবার যেই কে সেই। ১৯৭৩ সালে জুন মাসের পাঁচ তারিখ দিনটিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। পঞ্চাশ বছর পরেও পরিবেশ নিয়ে আমরা সচেতন হইনি বলে সুভাষের অভিমত”।
দীপায়ন দে-র বক্তব্য
পরিবেশ ও জৈব প্রযুক্তিবিদ দীপায়ন দে ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''প্লাস্টিক যতটা না ক্ষতিকর তার থেকে বেশি ক্ষতিকর আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের ধরন। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিক করে করা যায়, প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার যদি বাড়ানো যায়, এই জটিলতা কিছুটা হলেও কমতে পারে।''
নীতির ফাঁক
দীপায়নের মতে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ১ জুলাই থেকে নিষিদ্ধ করতে যে প্রস্তুতির প্রয়োজন, তা দেখা যাচ্ছে না। একদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম কোথাও এই ধরনের প্লাস্টিক নেই, তা তো হয় না! সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক সম্পর্কে ধারনাই বা কতজনের আছে? অথচ মাইক্রো প্লাস্টিক নিয়ে কোনো সরকারেরই হেলদোল নেই।
ধাপার মাঠ
কলকাতা শহরের দৈনিক কয়েক হাজার মেট্রিক টন জঞ্জালের সঙ্গে মিশে থাকে প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ। ধাপা বা প্রমোদনগরের মত ভাগাড়গুলোয় আবর্জনায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, জ্বলতে থাকে প্লাস্টিক। তার থেকে তৈরি হয় ডাই অক্সিন, ফিউরান ইত্যাদির মত ক্ষতিকারক গ্যাস। সেই দূষণ পরিবেশের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।
প্লাস্টিক যুগ
প্রস্তরযুগ, তাম্রযুগের মত এখন প্লাস্টিক যুগ চলছে। প্লাস্টিককে অস্বীকার করার উপায় নেই। রিসাইকেল করার ব্যাপারে একমত পরিবেশবিদদের অনেকেই। আধুনিক প্রযুক্তিতে প্লাস্টিক রিসাইকেল করে সুতো, জামাকাপড়, আসবাব এমনকি রাস্তা পর্যন্ত তৈরি করা যায়।
ম্যানহোলের মুখে প্লাস্টিক
কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থায় প্লাস্টিক একটি বড় সমস্যা। প্লাস্টিক নালার মুখ বন্ধ করে দেয়। ফলে জল বার হতে পারে না।