1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রিয়া সাহার বিচার হলে দুর্গন্ধ আরো বাড়বে’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু ‘ডিসঅ্যাপিয়ার্ড' হয়েছে - এমন কথা বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রিয়া সাহা৷ তবে তাঁর বিচার হলে ‘দুর্গন্ধ আরো বাড়বে' বলে মনে করেন কাজল দেবনাথ৷

https://p.dw.com/p/3MQ5Y
Bangladesch Hindus Überfall Jessore
প্রতীকী ছবিছবি: DW

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতা কাজল দেবনাথ ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন যে, প্রিয় সাহা কিভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়েছেন তা তাঁর সংগঠন জানে না৷ যদিও সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা৷

প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ‘নাই' (ডিসঅ্যাপিয়ার্ড) হয়ে গেছে৷ এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে৷  আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি৷ তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে৷ কিন্তু কোনও বিচার হয়নি৷''

প্রিয়া সাহার বক্তব্যে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ সরকারের মন্ত্রীরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁকে ‘দেশদ্রোহী' অভিহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন৷ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও৷

কাজল দেবনাথ অবশ্য প্রিয়া সাহা যে সংখ্যার কথা বলেছেন তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রিয়া বলেছেন ৩৭ মিলিয়ন ডিসঅ্যাপিয়ার্ড৷ ডিসঅ্যাপিয়ার্ড শব্দটির এখন সারা বিশ্বে বাংলা অর্থ বিচার বহির্ভূত গুম৷ এটা হবে মিসিং পপুলেশন৷''

সে আমাদের নমিনেটেড প্রতিনিধি না: কাজল দেবনাথ

তিনি বলেন, ‘‘১৯৪৭ সাল থেকে যদি আমরা হিসাব করি তাহলে এই ভূখণ্ড থেকে ৩৭ মিলিয়ন মানুষ হারিয়ে গেছে৷ এটা কিন্তু অংকের কাছাকাছি৷ কারণ ওই সময়ে হিন্দু ছিলো মোট জনসংখ্যার ২৯ ভাগ৷ ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে তা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৭ ভাগ৷ তাহলে ২০ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী মিসিং৷ আবার সে বলেছে এখন ১৮ মিলিয়ন হিন্দু আছে৷ এটাও কাছাকাছি৷ আমরা বলি ১ কোটি ৫০ লাখ, সে বলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ৷ ১৯৪৭ সাল থেকে না বলায় বিভ্রান্তি হয়েছে৷''

বাড়ি পোড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সে বলেছে আমরা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ এটা ফ্যাক্ট৷ আড়াই মাস আগে তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ জমিজমা কেড়ে  নিয়েছে৷ সে এটা নিয়ে হইচই করেছে৷ অনেকের কাছে গিয়েছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তিনজনের নাম চেয়েছিল৷ আমার হিন্দু , বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান এই তিন সম্প্রদায় থেকে তিন জনের নাম দিই৷ তারা হলেন: নির্মল রোজরিও, নির্মল চ্যাটার্জি এবং সুজিত বড়ুয়৷ এখন প্রিয়া সাহা কি করে গেলেন সেটা আমরা জানিনা৷ সে আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক, তবে আমাদের নমিনেটেড না৷’’

কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘এরপর কথা হলো ১৩৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন৷ ৪০ জন ফরেন মিনিস্টার ছিলেন৷ আমাদের ফরেন মিনিস্টারও ছিলেন৷ তিনি আমাদের দলনেতা৷ তাঁদের সাথে না থেকে প্রায়া সাহা কিভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৭ জনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন সেখানে ঢুকলেন এটা বড় প্রশ্ন৷''

তিনি বলেন, ‘‘ডনাল্ড ট্রাম্প ২৭ জনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন৷ সেই ফুটেজ কিভাবে বাইরে এলো? এটা ট্রাম্পের অফিস যদি করে থাকে তাহলে তার একটা চেইন আছে৷ সেই চেইনে বাংলাদেশ কেন নেই৷’’

আমাদের রিঅ্যাকশনগুলো হঠকারিতার শামিল হয়ে যাচ্ছে: ড. মিজানুর রহমান

তিনি আরো বলেন, ‘‘তিনি যে ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন এটা যৌক্তিক নয়৷ এটা আমরা করতে পারিনা৷ তবে তারা কেউই এখানো দেশে ফেরেননি৷ ফিরলে পুরো বিষয়টি জেনে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব৷’’

তবে প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাকে ‘বাড়াবাড়ি’ মনে করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘তিনি (প্রিয়া সাহা) হয়তো ডিসপ্লেসড বলতে গিয়ে ডিসঅ্যাপিয়ার্ড বলেছেন৷ এধরনের ভুল আমাদেরও হতে পারে৷ তাই এটা নিয়ে এখন যা হচ্ছে তা আমার কাছে অনেক বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রিঅ্যাকশনগুলো হঠকারিতার শামিল হয়ে যাচ্ছে৷ এত বেশি রিঅ্যাকশন দেখানোর কিছু নেই৷’’

প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘মামলাতো করতেই পারে৷ রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামল  করতে পারে৷ তবে বিচারে গেলে আমি তো মনে করি দুর্গন্ধ আরো বাড়বে৷’’ কিন্তু কেন দুর্ঘন্ধ বাড়বে তার কোনো ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে দিতে চাননি কাজল দেবনাথ৷