প্রাণিবৈচিত্র্যে ভরপুর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত এই উদ্যান নানা পাখি আর বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল৷ এখানে প্রায় ১৪৯ প্রজাতির পাখি, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান মিলেছে৷
রঘুনন্দন পার্বত্য বনভূমির অংশ
প্রায় ২৪৩ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান রঘুনন্দন পার্বত্য বনভূমির অংশ৷ জুম চাষ করতে করতে এক সময় রঘুনন্দন পাহাড়ের বনভূমি শেষ হয়ে যায় বলে কথিত আছে৷ পরে ১৯০০ সালের দিকে জায়গাটি কাঠ উৎপাদনের জন্য প্রচুর গাছ লাগানো হয়৷ ১৯১৪ সালে সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়৷ ২০০৫ সালে এখানকার নির্দিষ্ট কিছু জায়গাকে ‘জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করা হয়৷
সাতটি ছড়া
শুকনো মৌসুমে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি ছড়া পথে পর্যটক৷ ‘সাতছড়ি’ অর্থ সাতটি ছড়া৷ পাহাড়ে ছড়া মানে ঝর্ণা৷ এসব ছড়া বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকে৷
চশমা পরা হনুমান
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানর আরেকটি প্রাণী ‘ফেরে’স লিফ মাঙ্কি৷ বাংলায় প্রাণীটি ‘চশমা পরা হনুমান’ বা ‘কালো হনুমান’ নামেও পরিচিত৷
ডালে ডালে ঝুলছে হনুমান
দুই চোখের চারপাশে গোলাকার বৃত্তের মতো সাদা রং থাকায় এদেরকে স্থানীয়ভাবে ‘চশমা পরা হনুমান’ বলা হয়৷
বনের মধ্যে সড়ক
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া চুনারুঘাটমুখী সড়ক৷ বনের মধ্য দিয়ে যান চলাচলের কারণে প্রায়ই এ বনের প্রাণীরা গাড়িচাপায় মারা যায়৷
লাল হনুমান
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অন্যতম বাসিন্দা ক্যাপড লিফ মাঙ্কি বা ক্যাপড লেঙ্গুর৷ বাংলায় প্রাণীটি মুখপোড়া হনুমান বা লাল হনুমান নামেও পরিচিত৷ লম্বা লেজওয়ালা এ প্রাণী মূলত গাছের পাতা খেয়ে বাঁচে৷ বাংলাদেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে এদেরই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ বর্তমানে সারা বিশ্বেই এরা বিপন্ন৷
ছোট্ট গ্রাম
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে ‘টিপরা পাড়া’৷ বনের মাঝে ছোট্ট এ গ্রামটিতে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৪টি পরিবারের বসবাস৷
পর্যটক
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি ট্রেইলে পর্যটক৷
তিনটি ট্রেইল
পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে তিনটি ‘ট্রেইল’ আছে৷ একটি অধা ঘণ্টার আর একটি এক ঘণ্টার এবং অন্যটি তিন ঘণ্টার হাঁটাপথ৷ আধা ঘণ্টার হাঁটা পথটির শুরু সাতছড়ি রেঞ্জ কার্যালয়ের প্রবেশ পথের কাছাকছি প্রধান সড়কের পাশ থেকে৷ সড়কের দক্ষিণ দিকে পথের শুরু হয়ে চক্রাকারে ঘুরে আবার একই জায়গায় এসে শেষ হয়েছে৷
কুলু বান্দর
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ‘নর্দার্ন পিগ টেইলড ম্যাকেক’ বা ‘পিগ টেইলড ম্যাকেক’ বা ‘বার্মিজ পিগ টেইলড ম্যাকেক’৷ এদের বাংলা নাম ‘কুলু বান্দর’ বা ‘উল্টোলেজি বান্দর’ বা ‘সিংহ বানর’৷ প্রাণীটির দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার এবং লেজ ১৮ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার৷ ওজন ৪.৫ থেকে ১২ কেজি৷ শূকরের লেজের মতো ছোট লেজটি ওপরের দিকে ওল্টানো৷ এ ধরণের বানরদের অস্তিত্বও বাংলাদেশসহ পৃথিবী জুড়েই সংকটাপন্ন৷
মদনা টিয়া
সাতছড়ি উদ্যানে ‘রেড ব্রেস্টেড প্যারাকিট’৷ পাখিটির বাংলা নাম ‘লালবুক টিয়া’ বা ‘মদনা টিয়া’৷
ফুলমাথা টিয়া
ব্লোসম হেডেড প্যারাকিট বা ফুলমাথা টিয়া৷ বাংলাদেশে প্রাপ্ত ছয় প্রজাতির টিয়া পাখির মধ্যে এটি একটি৷
শ্বেত আঁখি
সাতছড়ির মান্দার গাছে ‘ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই’, বাংলায় যার নাম ‘শ্বেত আঁখি পাখি’৷
সোনালি কপাল পাতা বুলবুলি
সাতছড়িতে ‘গোল্ডেন-ফ্রন্টেড লিফ বার্ড’ বা ‘সবুজ পাতা বুলবুলি’ বা ‘সোনালি কপাল পাতা বুলবুলি’৷ এরা ‘সোনালি কপাল হরবোলা’ নামেও পরিচিত৷
পাখির রাজ্য
সাতছড়িকে পাখির রাজ্য বললে ভুল হবে না৷ এ বনের ১৯৭ প্রজাতির জীবের মধ্যে ১৪৯ প্রজাতিই পাখি৷
উদয়ী পাকরা ধনেশ
ওরিয়েন্টাল পাইড হর্নবিল বা উদয়ী পাকরা ধনেশ৷ বিরল এ পাখিও সাতছড়ি উদ্যানে দেখতে পাওয়া যায়৷