প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিমানবন্দরের কাছে ৩০০ টাকায় থাকার সুযোগ
বিদেশগামী এবং বিদেশফেরত কর্মীদের সাময়িক আবাসন সুবিধাসহ অন্যান্য সেবা দিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে খিলক্ষেতের বরুয়ার লঞ্জনীপাড়ায় তৈরি হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার’৷
উদ্বোধন
২০২২ সালের ১৭ মার্চ ঢাকার খিলক্ষেতের বরুয়ার লঞ্জনীপাড়ায় ‘বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার’ উদ্বোধন করা হয়৷ কর্মীদের আবাসন সুবিধা শুরু হয় ২৮ মে থেকে৷
গ্রামীণ পরিবেশ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে প্রায় ১৪০ কাঠা জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই সেন্টার৷ গ্রামীণ, মনোরম ও নিরিবিলি পরিবেশের পাশাপাশি এখানে চারদিকে রয়েছে সবুজের সমারোহ৷
দ্বিতল বিশিষ্ট কমপ্লেক্স
বিদেশগামী এবং প্রবাসফেরত কর্মীদের সাময়িক আবাসন সুবিধা দূর করতে দুইতলা বিশিষ্ট সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়৷ নিচের তলায় আবাসন ব্যবস্থা এবং উপরের তলায় কনফারেন্স রুম এবং প্রশাসনিক কক্ষ রয়েছে৷
আবাসন
কক্ষভেদে দুই থেকে চারজন এবং নারী-পুরুষসহ মোট ৪৯ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে৷ বিমানের টিকিট এবং অন্যান্য কাগজপত্র যাচাইসাপেক্ষে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ দুই রাত থাকতে পারবেন৷ প্রথম দিন নিবন্ধন ফি ও সিট ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা এবং দ্বিতীয় দিন ভাড়া ২০০ টাকা৷
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে আধুনিক সুযোগ সুবিধা যেমন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, ফ্রি ইন্টারনেট, টেলিফোন, সেফ লকার, দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশন, নামাজের জায়গাসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে৷
পরিবহন সুবিধা
কর্মীদের বিমানবন্দর থেকে সেন্টারে আনা নেওয়ার কাজে সার্বক্ষণিক গাড়ি প্রস্তুত থাকে৷ এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে অবহিত করতে হয়৷ তবে এজন্য বাড়তি টাকা দিতে হয় না৷
‘সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার’
পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র সেইশেলসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা থেকে সেন্টারে গিয়েছিলেন মোঃ তাজুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, বিমানবন্দরের কাছের হোটেলগুলোতে ভাড়া অনেক বেশি৷ এখানকার সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট ভালো এবং নামমাত্র ভাড়ায় থাকা যাচ্ছে৷ ‘‘সরকারের এ উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই এবং আমার পরিচিতজন যারা আছেন প্রবাসী, তাদেরকেও আমি এখানে আসার পরমার্শ দিব,’’ বলেন তিনি৷
নারীদের জন্যও আবাসন ব্যবস্থা
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারটিতে পৃথক তিনটি কক্ষে নারীদের জন্য নয়টি সিটের ব্যবস্থা আছে বলে জানান উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ আনিসউজ্জামান৷
চালু হয়নি খাবারের ক্যান্টিন
চালু হওয়ার পর প্রায় একবছর হতে চললেও এখনও সেখানকার খাবারের ক্যান্টিনটি চালু করা হয়নি৷ তবে সেখানে যারা থাকছেন তাদের জন্য স্থানীয় হোটেল থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা৷
প্রচারণার অভাব
প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে এমন একটি উদ্যোগে প্রচারণার অভাবে তেমন সাড়া মিলছে না বলে জানান সেন্টারটির দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হক৷ তিনি বলেন, ‘‘বিমানবন্দরের ভিতরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে আমাদের একাধিক প্রচারণামূলক ব্যানার রয়েছে৷ এছাড়া আমরা পত্রিকায়ও নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিচ্ছি৷’’
ভিআইপি কক্ষ
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় দুইটি ভিআইপি কক্ষ আছে৷ সেখানে থাকতে কোনো ভাড়া দিতে হয় না৷ সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের ওপর মহলের কর্মকর্তাদের রেফারেন্সে যাওয়া অতিথিরা সেখানে থাকতে পারেন৷
ধীরে ধীরে সাড়া বাড়ছে
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার চালুর পর প্রথম কয়েকমাস কর্মীদের সাড়া পেতে দেরি হলেও এখন ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ আনিসউজ্জামান৷ তিনি বলেন, গত এক বছরে আমরা ১,৩০০র অধিক কর্মীদের সেবা দিয়েছি৷ প্রায় প্রতিদিনই ১৫-২০ জন বিদেশগামী এবং প্রবাসফেরত কর্মী সেবা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি৷
যোগাযোগ
সেন্টারে থাকার জন্য অনলাইনে অথবা ফোনের মাধ্যমে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হয়৷ এক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ০১৩১০৩৫০৫৫৫, ০১৭৫৪৭১৫৭২০, টোল ফ্রি নম্বর ১৬১৩৫, ০৮০০০১০২০৩০, বিদেশ থেকে ০৯৬১০১০২০৩০ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে৷ এছাড়া যাবতীয় তথ্য www.wewb.gov.bd এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে৷
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সেন্টারটি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হক বলেন, ‘‘সাড়া ভালো পেলে আবাসন সুবিধা ৪৯ থেকে বাড়িয়ে ৩০০টি করার পরিকল্পনা করেছি৷ ইতিমধ্যে ৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং তা প্রক্রিয়াধীন আছে৷’’