1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্য

প্রবাসীদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকে উৎসাহ দিন

৭ মে ২০১৯

যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে থাকেন, সে তালিকায় বাংলাদেশ পঞ্চম৷ এদের বেশিরভাগই প্রবাসে শ্রম দিয়ে রক্ত পানি করা অর্থ দেশে পাঠান৷ তাঁদের এই অর্থের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত৷

https://p.dw.com/p/3HxQf
ছবি: DW/A.Islam

ফিলিপাইন্সে সাংবাদিকতা পড়ার সময় একবার গ্লোবাল মিডিয়া স্টাডিজ বিষয়টির একটি ক্লাসে ‘কাভি খুশি কাভি গাম' মুভিটি দেখানো হচ্ছিল৷ পুরো ছবিটা আগেই দেখেছিলাম৷ তাই ফিলিপিনো-চীনা শিক্ষক যখন জোর করে আবার দেখাচ্ছিলেন পুরো ছবিটি, তখন আমার আর আমার ভারতীয় বন্ধু বিপাশার অবস্থা ছিল ‘টাইট'৷ অন্যরা ভিন্ন দেশের৷ তাই তারা আগ্রহ নিয়েই দেখছিলেন৷ ইন্দোনেশিয়ার এক বন্ধু তো চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলছিলেন৷

শিক্ষক আসলে ‘সফট ডিপ্লোমেসি' বোঝাবার জন্য মুভিটি (তাই বলে পুরোটা?) দেখিয়েছিলেন৷ কীভাবে প্রবাসীদের দেশমুখী করা যায়, অন্তত দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন না হয়, সে চেষ্টা ভারতীয়রা বরাবরই করে গেছেন৷ সে কাজে বলিউড বিরাট ভূমিকা রেখেছে৷ তাই বলিউডের অনেক মুভিতেই দেখা যায়, দেশে ফেরার গল্প রয়েছে৷ এর মূল কারণ অর্থনৈতিক৷ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন না হলে, অর্থ আসবে দেশে, এই চিন্তা থেকে৷ 

বিদেশে যারা থাকেন, তাদের (সাধারণভাবে) এমনিতেই দেশের প্রতি টানটা বেড়ে যায়৷ তাই অনেকে যখন বলেন, ‘‘বিদেশে বসে দেশের অবস্থা নিয়ে বড় বড় কথা বলছে!'', সেই সমালোচনাটা আসলে সাধারণভাবে খাটে না৷ সে যা-ই হোক,  বিদেশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা দেশে অর্থ পাঠান মূলত পরিবারের খরচ মেটাতে, জমি-বাড়ি এসব সম্পত্তিতে বিনিয়োগ হিসেবে৷ কিন্তু এই বিনিয়োগকে আরেকটু পদ্ধতিগতভাবে উৎসাহিত করা যেতে পারে৷

গত ফেব্রুয়ারিতে সংসদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জানান যে, বর্তমানে বিশ্বের ১৬৫টি দেশে ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী কর্মরত আছেন৷

বাংলাদেশে এফডিআই বা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে গত এক দশক ধরে৷ এ অবস্থায় বর্তমান সরকার প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু কাজের সূত্রে অনেক ব্যবসায়ীই আমাকে বলেছেন যে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ পদ্ধতি জটিল৷ অনেকগুলো ধাপ৷ সরকার বলেছে যে, এসব ধাপ সহজ করে আনা হবে৷ 

সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, প্রবাসীরা যেন দেশে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন, সেজন্য এর ধাপগুলো সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ এটি সুখবর৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সব বিদেশ সফরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের কথা বলেন৷ সম্প্রতি প্রবাসী প্রকৌশলীদের সঙ্গেও এক বিনিয়োগ সম্মেলন হয়ে গেল৷ আরো সম্মেলন হবার কথা রয়েছে৷

তবে প্রাতিষ্ঠানিক বা বড় আকারের বিনিয়োগের পাশাপাশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করতে হবে৷ এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য চালু বন্ডগুলো ভালো উদ্যোগ৷ এখন পর্যন্ত চালু তিন বন্ডে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছেন প্রবাসীরা৷ সুদের হার বেশি হওয়ায়, বিশেষ করে ‘ওয়েজ আর্নার্স বন্ড' ভালো সাড়া পেয়েছে৷ 

HA Asien | Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলে

পাঁচ বছর মেয়াদি এ বন্ডে ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়৷ মুনাফা ১২ শতাংশ৷ প্রতি ছয় মাস পরপর মুনাফা তোলা যায়৷ আর ছয় মাসে মুনাফা না তুললে ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে ১২ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা পাওয়া যায়৷

আরেকটি বিষয় হলো, আট কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ করলে সিআইপি সুবিধা পাওয়া যায়৷ তাই অনেক ব্যবসায়ীরও আগ্রহ আছে এতে৷ কিন্তু প্রবাসে তুলনামূলক স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে একে আরো জনপ্রিয় করতে হবে৷ এর ক্রয়পদ্ধতি সহজ করতে হবে৷ দূতাবাসগুলো এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারে৷ আলোচনা করতে পারে প্রবাসীদের সঙ্গে৷ তুলে ধরতে পারে লাভ-ক্ষতির হিসেব৷

প্রবাসী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই অর্থ দেশেই থেকে যাবে৷ কিন্তু তাদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগ বাড়াতে হবে৷ শুধু সম্মেলন বা সরাসরি যোগাযোগই নয়, প্রবাসীদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগাযোগও বাড়াতে হবে৷ নতুন নতুন সৃজনশীল ‘আইডিয়া' নিয়ে কাজ করতে হবে৷ মোট কথা, প্রবাসীদের সঙ্গে একটা সেতুবন্ধন রাখতে হবে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য