প্রধানমন্ত্রীর মুখে ‘মল্লযুদ্ধ', ‘তিন মন্ত্রীর পদত্যাগ'
৬ জুন ২০১৭রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ অনুষ্ঠানটি কভার করেছেন দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার অমরেশ রায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসলে আক্ষেপ থেকে কথাগুলো বলেছেন৷ আসলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, দেশে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাঁকেই দেখতে হয়৷'' তিনি জানান, ওই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এখন ইসলামী দলগুলো জোট বাঁধুক৷ প্রগতিশীলরা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক৷ মল্লযুদ্ধ হোক৷ সেখানে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু যাবেন৷ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও যাবেন৷ আমি শেষটা দেখব৷ বিপদে পড়লে যাব৷ আমি আর কত অপমানিত হব!''
অমরেশ রায় জানান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তখন প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসে ছিলেন৷ তাঁকে পাশে রেখেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতকে জড়িয়ে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন৷ কিন্তু তাদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেই তো এসব কথা বলা উচিত ছিল৷ এখন সুযোগ পেয়ে অনেকে লম্বা লম্বা কথা বলছেন৷''
প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের করা মন্তব্যগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে৷ হঠাৎ করে তিনি কেন এই মল্লযুদ্ধের কথা বললেন? আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী না চাইলে কেউ মন্ত্রীসভায় থাকতে পারবেন না– এ-ও সবাই জানেন৷ ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এক উপদেষ্টার সাম্প্রতিক এক মন্তব্য সম্পর্কে বলেন, ‘‘ভাস্কর্যের সঙ্গে মসজিদের তুলনা কেন?''
প্রধানমন্ত্রী কি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে প্রগতিশীলদের ‘মল্লযুদ্ধ' হোক এটাই চাচ্ছেন? অমরেশ রায় মনে করেন, ‘‘আসলে বিষয়টা কিন্তু তা নয়৷ বাংলাদেশের মানুষের শেষ রাজনৈতিক আশ্রয় কিন্তু আওয়ামী লীগই৷ তাই এই দলের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি৷''
প্রধানমন্ত্রী ওই বক্তব্যের প্রেক্ষাপট জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি যাদের জন্য করেছেন তারাই এখন তাকে ভুল বুঝছে৷ তিনি বলেছেন, তিনি তো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সবার প্রধানমন্ত্রী৷ হেফাজতে ইসলামের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হলে আমাদের সেই প্রস্তুতি নিতে হবে৷ এরা যদি জঙ্গিদের সঙ্গে যেতো, তখন কী হতো! এখন এরা জঙ্গিবিরোধী কথা বলছে৷ এটাই আমাদের অর্জন৷ কওমি মাদ্রাসার সনদকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এ দেশের সন্তান৷ তারাও সমাজের অঙ্গ৷ আমরা তাদের মূলধারায় এনেছি৷''
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর তিন মন্ত্রীর পদত্যাগ সংক্রান্ত মন্তব্যটি করেছেন প্রতীকি অর্থে, কারণ, ‘‘এটা যদি তিনি চাইতেন, তাহলে তো অন্য ব্যবস্থা নিতেন৷ প্রধানমন্ত্রী যখন এটা বলেন, তখন তো তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসা ছিলেন৷''
ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ধর্মনিরপেতা মানে ধর্মহীনতা নয়৷ ধর্ম অস্বীকার মানেই মুক্তচিন্তা ও আধুনিক হয়ে গেলাম– এটি ঠিক নয়৷ প্রগতিশীল মানেই ধর্মকে অস্বীকার করা– এ কেমন কথা! আমি এসবে বিশ্বাস করি না৷ প্রগতিশীল মানেই মদপান, গাঁজা টানা! এটি বিকৃত মানসিকতা৷ আমি ধর্ম মেনেই প্রগতিশীল হতে চাই৷''
এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷