1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রত্যেক রাজনীতিকেরই সোশাল ওয়ার্কার হওয়া দরকার: তারানা হালিম

১৪ জুলাই ২০১১

বাংলাদেশে নারীর প্রতি অবিচার অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে-কন্ঠগুলো খুবই সোচ্চার, সাংসদ তারানা হালিম তাদেরই একজন৷ বার্লিনের বিশ্ব সংস্কৃতি উৎসবে অংশ নেয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান সদস্য৷

https://p.dw.com/p/11uvb
Ms.Tarana Halim, MP - member of the Parliamentary Standing Committe accompanied Mr.Abul Kalam Azad, minister for Information & cultural affairs of Bangladesh to Berlin in July 2011. Foto: DW/Abdullah Al-Farooq, 02.07.2011, Berlin
তারানা হালিমছবি: DW

তারানা হালিমের বিশেষ পরিচিতি নারী অধিকারবাদী হিসেবে৷ বই লিখেছেন৷ অভিনয় করেছেন নাটকে, দিয়েছেন নির্দেশনা৷ টেলিভিশনের উপস্থাপক হিসেবেও সাফল্যের পরিচয় রেখেছেন৷ বর্তমানে সাংসদ তিনি৷ কিন্তু কেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির জটিল জগতে এলেন? তাঁর কথায়, ‘‘মূলত আমি যখন দেখলাম আমাদের দেশে বিশাল ধরণের পরিবর্তন আনতে হলে কিছুটা ক্ষমতা প্রয়োজন হয় এবং পলিসি মেকিং'এর জায়গাটায় পৌঁছানোর দরকার হয়৷ মূলত আমি যখন নারীদের এবং সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অধিকারের জন্য বিভিন্ন ফোরামে কথা বলছি, লিখছি - আমি দেখছি পরিবর্তনটা আসছে কিন্তু ঠিক কাঙ্খিত জায়গায় পরিবর্তনটা আনতে পারছিলামনা৷ এবং তখনই আমার কাছে মনে হয়েছে যে যেহেতু আমি রাজনীতি ছাত্র বয়স থেকেই করছি, আমি যদি সংসদ সদস্য হতে পারি তাহলে হয়তবা আমি আইনের জায়গাটাতে একটা ভূমিকা রাখতে পারবো৷ এবং সরকারি নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রাখতে পারবো৷ সেই ভূমিকাটা অনেক ব্যাপক হবে৷ কিছুটা হয়েছেও৷ আপনারা জানেন যে আমরা পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে দীর্ঘদিন ধরে আইনের জন্য সংগ্রাম করছিলাম৷ এখন কিন্তু মহান জাতীয় সংসদে গিয়ে এটাকে পারস্যু করতে পেরেছি এবং এটা হয়েছে৷ তবে আমি সব সময় মনে করি আমি সংসদে সুবিধাবঞ্চিত এবং নিপীড়িত নারী, সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং সমাজের শোষিত শ্রেনি র একটি কন্ঠস্বর হতে চাই৷''

Ms.Tarana Halim, MP - member of the Parliamentary Standing Committe accompanied Mr.Abul Kalam Azad, minister for Information & cultural affairs of Bangladesh to Berlin in July 2011. Foto: DW/Abdullah Al-Farooq, 02.07.2011, Berlin
বার্লিনে তারানা হালিম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল-ফারূকছবি: DW

বাংলাদেশে মেয়েদের অবস্থার ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা উন্নতি ঘটেছে, একথা স্বীকার না করে উপায় নেই৷ কিন্তু তবুও নারী নির্যাতন কমেছে এমনটা বলার উপায় নেই৷ এখনও ঘটছে পাশবিক অ্যাসিড হামলা, ধর্ষণ৷ স্বামীর হাতে অধ্যাপক রুমানা মনজুরের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হবার সাম্প্রতিক ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ৷ কেন ঘটছে এধরণের ঘটনা এখনও? তারানা হালিম বললেন, ‘‘প্রথমত আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের মাইন্ডসেটটা পরিবর্তন করা খুবই প্রয়োজন৷ নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু পাল্টায়নি৷ নারীর জন্য আইন হয়েছে, নারীর পক্ষে আইন হয়েছে, নারী নির্যাতনের বিপক্ষে আইন হয়েছে৷ আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করছি৷ নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটছে৷ এই যে আপনি রুমানা মনজুরের ঘটনা বললেন, এই ধরণের পারিবারিক সহিংসতা যে কত ঘটছে৷ আমাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে৷ একটি মেয়ে যখন তার সংসার থেকে বেরিয়ে আসে, তা সে স্বামীর নির্যাতনের কারণে হোক, যৌতুক দাবি করার কারণে হোক, বা যেকোন কারণেই হোক, প্রথমেই সেইখানে একটা রসালো গল্প খুঁজতে চাই যে কী কারণে? হয়তোবা মেয়েটিরই দোষ, হয়তবা পরকীয়া ব্যাপার আছে বা কিছু একটা আছে! আমাদের নিজেদের জিহ্বাটাকে আমরা সংবরণ করতে পারিনা৷ এবং আমার মনে হয়, অহেতুক সমালোচিত হবে এই ভয়ে বহু মেয়ে নির্যাতনকে মেনে নেয়৷ দৃষ্টিভঙ্গিটা আসলে পাল্টাতে হবে৷ এবং এটার জন্য শিক্ষার প্রসারের কোন বিকল্প আছে বলে মনে করিনা৷ এবং পরিবারকে তার সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে৷ নারীর প্রতি মর্যাদাশীল করে তুলতে হবে৷''

এরকম অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আছে ঠিকই৷ তবে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে বলে তারানা হালিম মনে করেন৷ প্রত্যক্ষ রাজনীতি কী তাঁর ঈপ্সিত কাজগুলো ব্যাহত করবে? তারানা হালিমের জবাব: ‘‘রাজনৈতিক ক্ষমতা যেটা বলেন সেটাকে আমি খুব অস্থায়ী বলে মনে করি৷ আমি সব সময় মনে করি আমি একজন সমাজকর্মী৷ আমি মনে করি, প্রত্যেক রাজনীতিকের আসলে সোশাল ওয়ার্কার হওয়া দরকার৷ রাজনীতি কখনও ব্যবসাও হতে পারেনা, রাজনীতি কখনও পেশাও হতে পারেনা৷ আসলে রাজনীতি সামাজিক কর্মকাণ্ডেরই একটি অংশ৷ আমি কোন ভাবে যদি মনে করি, আমার ঐ কাজগুলোতে রাজনীতির কারণে বিঘ্ন ঘটবে আমি রাজনীতিকে নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিতে পারবো৷ কারণ আমার উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে আমি একটা শোষনমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা চাই৷ আমি চাই আমাদের দেশে জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলে অধিকার ভোগ করবে৷ নারীর প্রতি সহিংসতা হবেনা৷ সে নারী যেই হোক৷ যেকোন নারী নির্যাতনের ঘটনার বিপক্ষে আমার অবস্থান থাকবে৷ এবং এই কাজগুলো আসলে কখনই ছোট হবেনা৷ কারণ আমি তো মনে করি আড়াই বছর পর আমি যদি মনে করি রাজনীতিকে আমি যে পর্যায়ে দেখতে চাই, সুন্দর আদর্শের প্রতীক অহিংস এক রাজনীতি যদি মনে না হয়, তাহলে আমি নিজেও রাজনীতি ছেড়ে দিতে পারি৷ সেক্ষেত্রে আমার প্রায়রিটি সব সময়ই সুবিধাবঞ্চিতদের পক্ষে কথা বলা৷ এটা আমি কখনই ছাড়তে পারবোনা৷''

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন