1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতি দুই ঘন্টায় মাতৃহীন হচ্ছে একটি শিশু

১৩ ডিসেম্বর ২০১০

ফিলিপাইন্সে প্রতি মিনিটে জন্ম নিচ্ছে তিনটি শিশু৷ প্রসবজনিত জটিলতায় প্রতি দু’ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন মা৷ গর্ভাবস্থায় মায়েদের যত্ন নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে৷ প্রতিটি মায়ের জন্য স্বাস্থ্যনীতি প্রবর্তনের চেষ্টা করছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/QWly
ফিলিপাইনের মা’রাছবি: AP

ফিলিপাইন্সে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মায়েদের মৃত্যুর ঘটনা টনক নাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের৷ প্রতি দুই ঘন্টায় মাতৃহীন হয়ে পড়ছে একটি শিশু৷ সরকার মায়েদের এই অকাল মৃত্যু রোধ করতে হাতে নিয়েছে বিশেষ একটি প্রকল্প৷ যেভাবেই হোক প্রতিটি মায়ের স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা করাই লক্ষ্য৷ আর এর জন্য মায়েদের কাছ থেকে কোন ধরণের অর্থ নেওয়া হবে না৷ বিনামূল্যে মায়েদের স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ফিলিপাইন্সে৷

ফিলিপাইন্সের জনসংখ্যা ৯ কোটি৷ দেশটির জনসংখ্যা বাড়ছে হু হু করে৷ একদিকে মানুষ বাড়ছে অন্যদিকে মায়েদের অকাল মৃত্যুও বাড়ছে৷ ২০০৩ সালে এক লক্ষ শিশু জন্ম নেয়৷ এর মধ্যে জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই মাতৃহীন হয়ে পড়ে প্রায় ৩০৭ জন শিশু৷ অনেক চেষ্টা করার পর সেই সংখ্যা নামানো গেছে ২২৮-এ৷ একটি দেশের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি শিশুর জন্য কোন অবস্থাতেই তা সুসংবাদ নয়৷

ধাত্রীদের হাতে বন্দী গর্ভবতীরা

পূর্ব ফিলিপাইন্সের ভিসায়াস প্রদেশের বিলিরান দ্বীপ দেশটির দরিদ্রতম অঞ্চল৷ সেখানে গর্ভাবস্থায় মায়েদের দেখাশোনা, নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া একেবারে নতুন ঘটনা৷ ৩৮ বছর বয়েসি ইসিন আসুমব্রাডো যে হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেবেন তা আলমেরিয়া শহরে অবস্থিত৷ এর আগে একটি সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে ইসিনের একেবারে মরার দশা হয়েছিল৷ শেষ মুহূর্তে সবকিছু জটিল আকার ধারণ করেছিল৷ নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে ইসিন৷ তিনি জানান, ‘‘আমার প্রথম তিনটি সন্তানের জন্ম হয়েছিল বাড়িতে৷ তখন এত হাসপাতাল বা ক্লিনিক চোখে পড়তো না৷ আমি এখন অনেক ভাল আছি, নিজের ভেতর এক ধরণের জোর অনুভব করছি কারণ এখন গর্ভবতী মায়েদের দেখাশোনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে সরকার দেখছে৷ আমাদের চতুর্থ সন্তান জন্ম নেবে আলমেরিয়াতে৷ আশেপাশে থাকবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা৷ আমি অনেক স্বস্তি বোধ করছি, আমি ভয় পাচ্ছি না৷''

Demonstration gegen Kinderpornographie
ছবি: picture-alliance/ dpa

ফিলিপাইন্সের গ্রামগুলোতে একটি প্রবাদবাক্য প্রচলিত৷ তা হল – গর্ভবতী হওয়া মানেই কবরে মায়ের এক পা৷ মায়েদের মৃত্যুর কারণ হল রক্তক্ষরণ, বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক ব্যাধি এবং অপুষ্টি৷ ম্যালেরিয়া এবং এইডসের প্রকোপ আগের চেয়ে বেড়েছে৷ এছাড়া রয়েছে মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ৷ বিলিরান প্রদেশে বেশির ভাগ মহিলার সন্তান হয় বাড়িতে, ধাত্রীর হাতে৷ অর্ধেকেরও বেশি মা তখন মারা যায়৷ এই অবস্থার পরিবর্তন করতে চায় সরকার৷

ধাত্রী নয় এখন থেকে দায়িত্বে থাকবেন চিকিৎসক

আলমেরিয়ার হাসপাতালে ইভলিন গার্সিয়া কাজ করেন৷ তিনি পেশায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ৷ জাপানের সাহায্য সংস্থা ‘জিকা' এই হাসপাতালটি তৈরি করে দিয়েছে৷ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতিও জাপান থেকে আনা৷ এই হাসপাতালের স্লোগান হল – প্রতিটি মা তার ভূমিষ্ঠ শিশুসহ বেঁচে থাকবে৷ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবে৷ ইভলিন গার্সিয়া বললেন, ‘‘আগে বাড়িতেই সন্তানের জন্ম হত৷ প্রায় ৭০ শতাংশ সময়েই ধাত্রীরা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতো৷ এসব যে সবসময় ঠিকমত কাজ করবে, ধাত্রীরা সফল হবে তা কখনোই জোর দিয়ে বলা যায় না৷ ধাত্রীদের কাছে কখনোই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকে না৷ এরা কখনো হাত ধুয়ে বা গ্লাভস পরে কাজ করে না৷ যন্ত্রপাতি সঙ্গে যা থাকে তা পরিষ্কার কিনা তাও তারা জানে না৷ এইভাবে এই অবস্থায় তারা একটি নবজাতককে পৃথিবীতে আনে৷ যেহেতু হাত, যন্ত্রপাতি সব কিছুই থাকে অপরিষ্কার – জীবনের প্রথম যে স্পর্শ শিশুটি পায় তা হচ্ছে সংক্রামক ব্যাধি - বিভিন্ন ধরণের ইনফেকশান৷''

স্বাস্থ্যবিমা ফিল হেল্থ

সরকার জানিয়েছে প্রতিটি মাকে স্বাস্থ্যবিমারঅন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷ এই বিমার নাম ফিল হেল্থ৷ অত্যন্ত দরিদ্র যে সব পরিবার তাদের জন্য বিমার সুবিধা দেয়া হবে বিনামূল্যে৷ যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের এককালীন এক হাজার পেসো প্রদান করতে হবে৷ বাকি খরচ বহন করবে সরকার৷ এর পাশাপাশি অনভিজ্ঞ ধাত্রীদের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার৷

ফিলিপাইন্সের সংসদে আরেকটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে৷ তা হলো, যদি একটি মহিলার তিনটি বা চারটি সন্তান থাকে তাহলে পঞ্চমবারের মত গর্ভবতী হতে বাধা দেওয়া৷ এটা সম্ভব যদি বিনামূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা কনডম বিতরণ করা হয়৷ তা কোথায় বিতরণ করা হবে? ক্লিনিকে নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতো? সেই বিতর্কে এখন উত্তপ্ত ফিলিপাইন্সের সংসদ৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক