1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যার ছবি সত্যিই কথা বলে

আরাফাতুল ইসলাম১৪ এপ্রিল ২০১৬

তথ্যচিত্র আলোকচিত্রী জিএমবি আকাশ ইন্সটাগ্রামে বেশ জনপ্রিয়৷ তাঁর তোলা ছবি নিয়মিত শেয়ার হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান তাঁর ব্যতিক্রমী এক সংগ্রামের কথা৷

https://p.dw.com/p/1IVHt
Bangladesch Fotograf GMB Akash
ছবি: GMB Akash

বাংলাদেশের আলোকচিত্রী জিএমবি আকাশ ছবিকে তাঁর নিজের ভাষা মনে করেন, যার মাধ্যমে তিনি গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন৷ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্খার গল্প ছবিতে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলেন আকাশ৷ এবং এভাবে এরই মধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও জয় করেছেন৷

ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার চলতি আসরে ‘শিল্প এবং সংস্কৃতি' বিভাগে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আকাশের ইন্সটাগ্রাম পাতাকে ৷ এই পাতায় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন মানুষের ছবি প্রকাশ করেছেন৷ সেসব ছবির সঙ্গে রয়েছে একেকটি গল্প, যা সেই ব্যক্তির ব্যক্তিজীবনের কথা তুলে ধরেছে নিঁখুতভাবে৷

ডয়চে ভেলে: ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন কিভাবে?

জিএমবি আকাশ: ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির নিয়ে আমার মুগ্ধতার শুরু ১৯৯৬ সালে৷ তখনই প্রথম বুঝতে পারি কোনো মানুষের সাথে মিশে গিয়ে সেই সম্পর্কটা ছবিতেও একভাবে তুলে আনা সম্ভব৷ প্রচণ্ড উৎসাহে ছবি তোলার শুরু তখন থেকেই৷ শুরুর সেই দিনগুলো থেকে ধীরে ধীরে বুঝতে শিখলাম মানুষ এবং সমাজের ওপরে ছবির প্রভাব কতটা গভীর হতে পারে৷ একসময় নিশ্চিতভাবেই বুঝে গেলাম যে, এই জগতটাই হয়ে উঠবে আমার বাকি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷

যাদের ছবি আপনি তুলেছেন, তারা কি তা থেকে কোনোভাবে সুবিধা পাচ্ছেন?

আমি বড় হয়েছি উন্নয়নশীল একটি দেশে, যার একটি বড় অংশে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত অজস্র মানুষ আর অবহেলিত শিশুদের বাস৷ এই সুবাদে সমাজের বহু অন্ধকার দিকের সাথে আমারও পরিচয় ঘটে যায়৷ ছবিতে এ সব মানুষদের জীবন তুলে আনবার পাশাপাশি তাদের জন্য কিছু করবার প্রচণ্ড তাড়না আমার ভেতরে কাজ করেছে সবসময়৷ বুঝতে পারলাম, একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে সত্যগুলো তুলে আনা যেমন আমার দায়িত্ব, ঠিক তেমনি একজন মানুষ হিসেবে অনাচার আর দারিদ্র্যক্লিষ্ট ওই মানুষগুলোর জীবন একটু হলেও স্বাভাবিক করে দেয়া আমার নৈতিক দ্বায়িত্বের ভেতরে পড়ে৷ এই লক্ষ্যে তখন থেকেই যে কাজটি শুরু করেছিলাম, সেটিই আজ প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় পরে রূপ নিয়েছে ‘‘সারভাইভার্স'' বইটিতে৷ দুনিয়ার শত বাঁধাবিপত্তির মুখেও মানুষের সংগ্রামী অজেয় রূপটিই হচ্ছে স্বপ্রকাশিত আমার এই ছবির বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য৷ এই বই এবং বই সম্পর্কিত চিত্রশালা থেকে উপার্জিত অর্থ চলে যায় এই বইয়ের পাতায় উঠে আসা মানুষদের সাহায্যার্থে৷ আমি এমনভাবে তাদের সহযোগিতা করবার চেষ্টা করি যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষুদ্র ব্যবসা দাঁড় করিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে৷ এসবের ভেতরেও আমি বিভিন্ন এনজিও, মিডিয়া এবং আমার এজেন্ট প্যানোস পিকচার্স-এর মাধ্যমে পাওয়া কাজ চালিয়ে গেছি, যা এখনও চলমান৷ ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেছি ফার্স্ট লাইট ইন্সটিটিউট অফ ফটোগ্রাফি৷ দক্ষ অতিথি আলোকচিত্রীদের সাথে আমিও এখানে নবীনদের ছবি তোলা শেখাই৷ এই শিক্ষালয় থেকে উপার্জিত সমস্ত অর্থ ব্যয় হয় আমার সত্যিকার উদ্দেশ্যে – পথশিশু, শিশু যৌনকর্মী এবং শিশু শ্রমিকদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে৷

আপনার প্রায় প্রতিটি ছবির পেছনে একটা গল্প থাকে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের সমাজের অনেক অসঙ্গতি, সাধারণ মানুষের অনেক চাহিদার কথা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরছেন আপনি৷ এটা করার উৎসাহ কোথা থেকে আসে?

আমার ছবিগুলো খুবই সাধারণ কিন্তু সেগুলো অসাধারণ করে দেয় ছবিতে থাকা মানুষেরা৷ এমন মানুষদের আমরা সবসময় চারপাশে দেখলেও কখনোই সেভাবে তাদের দিকে নজর দেই না৷ কিন্তু তাদেরও প্রত্যেকেরই আলাদা জীবন আছে, আছে বহু না বলা গল্প৷ আমার ছবির বিষয়বস্তুও এমনই সাধারণ৷ একেবারে খুবই সাদামাটা বা অনাকর্ষণীয় একজন মানুষও কীভাবে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে সেটাই আমি কাছ থেকে দেখাতে চেষ্টা করি৷ জীবনের রূঢ়তম সত্যের মুখোমুখি হতে চাইলে আমার ছবিগুলো ভালো করে দেখুন; জীবনের গল্প ছাড়া সেগুলো আর কিছুই না৷ মানুষের ভেতরের সত্যিকার সৌন্দর্য্যই আমি ছবিতে তুলে ধরতে চাই৷

আপনার বাকস্বাধীনতার উপরে কেউ কি কখনো কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করেছে?

আক্রমণ এসেছে অনেক বার৷ আঙুল উঠেছে এই বলে আমি শুধু দারিদ্র তুলে ধরি৷ কিন্তু আমার ছবি মানবতার কথা বলে, হেরে ও জিতে যাওয়া মানুষের ভাষা হয়৷ একজন ফটোগ্রাফার এবং একজন শিল্পী হিসেবে আমি নিজের চারদিকের জীবনযাত্রার ক্ষুদ্রতম অস্তিত্বটির কথাও তুলে ধরতে চাই – পার্থক্যটা এখানেই৷ চারপাশে আমি যেসব দারিদ্র্য, বঞ্চনা কিংবা সংগ্রাম দেখি, তা সবাইকে আরও কাছ থেকে দেখানোর প্রচণ্ড তাগিদ অনুভব করি নিজের ভেতরে৷ আমি মনে করি, এ সব দেখেও মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়া একজন ফটোগ্রাফারের জন্য পাপ ছাড়া আর কিছু নয়৷ আমার কাছে মনে হয় অনুচ্চারিত এ সব গল্পের কুশীলবদের আখ্যান সবাইকে জানানোর মাধ্যমে আমার নিজের জীবনও কিছুটা লক্ষ্য খুঁজে পায়৷ সমাজের কদর্য সব রূপ বাকি দুনিয়াকেও ঠিক একইভাবে দেখিয়ে তাদের চোখ খুলে দেবার তাগিদ নিজের ভেতরে অনুভব করি আমি৷

ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার ‘শিল্প এবং সংস্কৃতি' বিভাগে আপনার ইন্সটাগ্রাম পাতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

আমি অসম্ভব অনুপ্রাণিত বোধ করছি৷ নিঃসন্দেহে আমার পাশে যারা মনোনীত হয়েছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও অসাধারণ৷ আমি কৃতজ্ঞতা জানাই জুরিদের আমার কাজকে মনোনীত করার জন্য৷ ভালোলাগাটা আর ও বেড়েছে কারণ আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি ভোট আমার কাজের প্রতি মানুষের সম্মান ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ৷ আশা করছি এভাবে ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার এই প্লাটফর্মে আমরা সবাই মানবতার খাতিরে এক হতে পারব৷ যাদের আর কোথাও যাবার নেই, কিছুই বলার উপায় নেই, তারা কিন্তু আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে; আমরা যেন তাদের হয়েই কথা বলে যেতে পারি!

দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় জিএমবি আকাশের ইন্সটাগ্রাম পাতাকে ভোট দিতে ক্লিক করুন এখানে৷ খেয়াল রাখবেন, ভোট দেয়ার আগে প্রথমে ওয়েবসাইটটিতে ‘লগ-ইন' করতে হবে৷ আর লগ-ইন অপশন পাবেন সাইটটির উপরের দিকে৷ সেখানে থাকা ফেসবুক বা টুইটার বাটনে ক্লিক করে লগ-ইন করুন৷ এরপর ‘শিল্প এবং সংস্কৃতি' বিভাগ এবং ‘জিএমবি আকাশ' বাছাই করে টিপে দিন ভোট বাটন৷ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার ভোট দেয়া যায়৷

বন্ধু, আকাশের সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো? কেমন লাগলো তাঁর কাজ? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান