1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রজ্ঞার কথা কেউই জানত না!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২০ জুলাই ২০২০

হুগলির মেয়ে প্রজ্ঞা দেবনাথ ওরফে আয়েশা জান্নাত মোহনার জেএমবি যোগ ধরা পড়ার পর সচকিত পশ্চিমবঙ্গ৷ কিন্তু রাজ্য প্রশাসন তার দায় নিতে রাজি নয়৷

https://p.dw.com/p/3fbu9
Bangladesch Grenzgebiet zu Indien | Grenzübergang Jalpaiguri
ছবি: DW/Prabhakarmani Tewari

হুগলি জেলার ধনেখালির মেয়ে প্রজ্ঞা দেবনাথের ধর্মান্তরিত হয়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়া এবং সেদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি–তে যোগ দেওয়ার খবর জানা গেছে ঢাকায় প্রজ্ঞা ওরফে আয়েশা গ্রেপ্তার হওয়ার পর৷ এক নিম্নবিত্ত পরিবারের কলেজ–পড়ুয়া মেয়ের এই ভোলবদলে তার পরিবার যতটা সচকিত, ঠিক ততটাই সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন৷ তবে একটা বিষয় শুরু থেকেই স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, হুগলি জেলা প্রশাসন এবং পুলিস এই ঘটনার সঙ্গে জড়াতে চাইছে না, বরং দূরত্ব বজায় রাখছে৷ রাজ্য পুলিশের সন্ত্রাসবাদ দমন শাখা যেমন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যেহেতু আয়েশা বিদেশের মাটিতে ধরা পড়েছেন এবং তার জঙ্গি যোগাযোগও ওখানেই ধরা পড়েছে, এটা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়৷ রাজ্যের এক্ষেত্রে কিছু করার, বা বলার নেই৷ হুগলি জেলা পুলিশেরও বক্তব্য,  প্রজ্ঞা দেবনাথ তিন বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি যে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, সেই পর্যন্তই তার বাড়ির লোকেদের জানা ছিল৷ এই তিন বছরে প্রজ্ঞা একবারও বাড়ি আসেননি৷ ফলে তার গতিবিধি বা মতিগতি সম্বন্ধে কারও কোনও ধারণা ছিল না৷

কিন্তু তার পরেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে মূলত দুটি কারণে৷ এক, প্রজ্ঞার মতো একজন, বেশ কষ্ট করেই যার উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন বাবা–মা, যিনি সংস্কৃত নিয়ে পড়তেন, তিনি কীভাবে জেএমবি–র মতো সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন, এবং এতটাই, যে একেবারে ধর্মান্তরী, দেশান্তরী হয়ে গেলেন— সেটা সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের জঙ্গি হয়ে যাওয়ার চেনা ছকের সঙ্গে মিলছে না৷ আর দুই, যেভাবে প্রজ্ঞা থেকে আয়েশায় রূপান্তর ঘটেছিল, সেটাও যে কোনও সদ্য তারুণ্য অতিক্রম করে আসা ছেলে বা মেয়ের স্বাভাবিক চরিত্রলক্ষণ৷ প্রজ্ঞার বাবা প্রদীপ দেবনাথ, পেশায় যিনি দিনমজুর, এবং ওর মা গীতা দেবনাথ জানিয়েছেন, বাড়ি ছাড়ার আগে প্রজ্ঞা দীর্ঘক্ষণ একান্তে মোবাইলে কথা বলতেন৷ পাড়াপড়শিরাও বলেছেন, গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রজ্ঞার কারও সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতেন৷ এবং কলকাতা যাওয়ার নাম করে উধাও হওয়ার দু'‌দিন পর প্রজ্ঞা বাড়িতে ফোন করে স্রেফ জানিয়েছিলেন, ধর্ম বদলে ফেলেছেন তিনি এবং বাংলাদেশ চলে গেছেন৷ এই আচরণ, বা কাজকর্ম থেকে কি কোনও বাবা–মা আন্দাজ করতে পারেন, যে তাদের সন্তান জঙ্গি সংসর্গে পড়েছে?‌

তথাগত বসু

পুলিশ কি এ ব্যাপারে কোনও দিশা দেখাতে পারে উদ্বিগ্ন বাবা–মায়েদের?‌ হুগলির পুলিশ সুপার তথাগত বসু এই প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘‌‘যে ঘটনাটা ঘটেছে, যে মেয়েটি রিলিজিয়াস‌লি কনভার্টেড হয়ে, তার পর চলে গিয়েছিল, সেই অবধি জানা ছিল ওদের বাড়ির লোকের৷ কিন্তু কীভাবে এই ধরনের কোনও গোষ্ঠীর সংস্পর্শে এল, সেটা ওদেরও জানা নেই, আমাদেরও জানা নেই৷ যেহেতু শেষ তিন বছরে মেয়েটি নিজের বাড়ি আসেনি৷ কিন্তু এটা তো সাধারণ ব্যাপার, এটা যারা কাউন্সেলিং করে, তারা অনেক ভাল বলতে পারবে৷ যে কীভাবে সন্তানদের প্রতি নজর রাখবে, বা তাদের পরিবর্তন, মানসিক পরিবর্তন কীভাবে তারা লক্ষ রাখবে, কী প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা আমাদের পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় নয়৷ আমার মনে হয়, আমরা ভালভাবে এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নই৷’’

যদিও প্রজ্ঞা দেবনাথ ওরফে আয়েশা জান্নাত মোহনা গত তিন বছরে ধনেখালি ভাণ্ডারহাটি কেশবপুর কালীবাড়ি গ্রামে নিজের বাড়িতে না এলেও একাধিকবার ভারতে এসেছিলেন৷ যদিও তখন তাঁর জাল বাংলাদেশী পাসপোর্ট৷ এমনকী বাংলাদেশে নিজের জন্মের নকল শংসাপত্র এবং সেই সুবাদে জাতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি৷ ফলে তার প্রকৃত পরিচয় জানার কোনও সুযোগ ছিল না৷ কিন্তু গ্রেপ্তারির পর জানা গেছে, আয়েষা জেএমবি মহিলা শাখার রিক্রুটার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছিলেন, আর বাড়ি ছাড়লেও দীর্ঘ সময় সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গেই ছিলেন৷ বাংলাদেশে তিনি স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন ২০১৯ অগাস্টে৷ এবং এই গোটা সময়টায় আয়েশা সোশাল মিডিয়ায় জেএমবি–র জন্য চাঁদা তোলার কাজ করে গেছেন৷ অন্তত ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল তার নামে৷ কিন্তু রাজ্য, বা কেন্দ্র, কারও গোয়েন্দা দপ্তরই সেই তৎপরতার হদিস পায়নি৷  

প্রজ্ঞার বাবা–মা এখন বলছেন, মেয়ে যদি কোনও অপরাধ করে থাকে, তবে তার উপযুক্ত শাস্তি পাওয়া উচিত৷  

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান