পোলার লাইটস বা মেরুজ্যোতির খোঁজে
পোলার লাইটসের দ্যুতি, আকাশে তার রঙের খেলা, যে দেখে, সেই মুগ্ধ হয়ে যায়৷ কিন্তু কিভাবে তৈরি হয় এই মেরুজ্যোতি? তা দেখার সবচেয়ে ভালো সময় আর জায়গাই বা কোথায়?
স্বর্গ তো আকাশেই...
দু’ ধরনের পোলার লাইটস আছে৷ উত্তর মেরুর মেরুজ্যোতিকে বলে ‘অরোরা বোরিয়ালিস’, দক্ষিণ মেরুর মেরুজ্যোতিকে বলে ‘অরোরা অস্ট্রালিস’৷
রঙিন মেখলা
‘ম্যাগনেটিক পোল’ বা চৌম্বক মেরুকে ঘিরে গড়ে ওঠে মেরুজ্যোতি৷ ছবিটি তোলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে, আইএসএস তখন আয়ারল্যান্ডের উপরে৷ সাদা যে আলোর রেখাটি দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো সূর্যোদয়৷ উত্তরের মেরুজ্যোতিকে বলে নর্দার্ন লাইটস, যা স্ক্যান্ডিনেভিয়া, আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ডের একাংশ, অ্যালাস্কা ও সাইবেরিয়ার উত্তর উপকূলে দেখা যায়৷
অরোরা অস্ট্রালিস
দক্ষিণের মেরুজ্যোতি অতটা প্রখ্যাত নয়, কিন্তু একই রকম সুন্দর৷ কুমেরুর চারপাশে মানুষের বাসযোগ্য এলাকা বিশেষ নেই, সেটাও সম্ভবত একটা কারণ৷ তাহলে দর্শকরা কোথা থেকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন? কুমেরুর পোলার লাইটসের এই ছবিটি তুলেছেন নভরী টিম পিক, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস থেকে৷
আকাশে পদার্থবিজ্ঞান
সূর্যের বহির্ভাগকে বলে করোনা৷ সোলার উইন্ডের ফলে যখন তার কণা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে আসে, তখন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সেই কণাগুলিকে রুখে দেয়৷ তবুও কিছু কণা বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে মেরু অঞ্চল অবধি পৌঁছতে সক্ষম হয়৷ সেখানে তারা বায়ুর অণুগুলির সঙ্গে ধাক্কা খায়৷ সেই ধাক্কা থেকে যে শক্তি নির্গত হয়, তা আইসল্যান্ডের ওপরে এরকম দেখতে লাগে৷
মেরুজ্যোতির রকমফের
চার ধরনের পোলার লাইটস দেখতে পাওয়া যায়: করোনা, পর্দা (যেমন এই ছবিতে), ধনুকাকৃতি ও ফিতের মতো৷ ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উঁচুতে যে অক্সিজেনের পরমাণু থাকে, তা থেকে সবুজ আলো সৃষ্টি হয়; সেই একই অক্সিজেনের পরমাণু ২০০ কিলোমিটার উপরে থাকলে, তা থেকে লাল আলো বেরোয়৷ নাইট্রোজেনের পরমাণু উত্তেজিত হলে, তা থেকে নীল থেকে শুরু করে বেগুনি অবধি আলো বিচ্ছুরিত হয়৷
কপালে থাকলে...
পোলার লাইটস যে দেখতে পাবেনই, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ প্রথমত, আকাশ পরিষ্কার থাকা চাই৷ দ্বিতীয়ত, রাতের আঁধার যত নিকষ হবে, ততই নর্দার্ন লাইটস দেখতে পাওয়ার সুযোগ বাড়বে৷
দর্শকের আসন
তথাকথিত ‘অরোরাল ওভাল’ থেকেই পোলার লাইটস দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি৷ এলাকাটি গ্রিনল্যান্ডের উত্তরে চৌম্বক মেরু বরাবর৷ উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়া, আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড, উত্তর অ্যামেরিকার উত্তরাঞ্চল আর উত্তর সাইবেরিয়ায় সারা বছর ধরে নর্দার্ন লাইটস দেখতে পাওয়া যায়৷ পরিসংখ্যান বলে, ২৩শে সেপ্টেম্বর আর ১১ই মার্চ, যখন দিন আর রাত সমান থাকে, ঠিক তখনই সবচেয়ে বেশি অরোরা বোরিয়ালিস দেখতে পাওয়া যায়৷
খুবই ফটোজিনিক
ছবিতে যেমন দেখায়, মেরুজ্যোতির রঙ কিন্তু খোলাচোখে ততটা জ্বলজ্বলে বা মনোমুগ্ধকর দেখায় না! কাজেই পোলার লাইটস দেখতে যাওয়ার সময় সাথে ক্যামেরা নিয়ে যেতে ভুলবেন না৷ এক্সপোজার বাড়িয়ে কমিয়ে দেখতে পারেন...৷
প্রতিবেদন: হানা ফুক্স/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী