1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোকামাকড় দিয়ে পরী তৈরি করেন যে শিল্পী

২ এপ্রিল ২০২০

মিউজিয়ামে সংরক্ষিত পোকামাকড় অনেকেই দেখেছেন৷ কিন্তু পোকা বা অন্য প্রাণীর শরীরের অংশ দিয়ে শিল্পসৃষ্টির প্রচেষ্টা বিরল৷ নেদারল্যান্ডসের এক শিল্পী পোকামাকড় দিয়ে পরি, অথবা হাড়ের সিংহাসন তৈরি করে নজর কাড়ছেন৷

https://p.dw.com/p/3aLSr
Deutsche Wespe
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/M. Lenke

এ যেন অন্য কোনো জগতের প্রাণী৷ কখনো মনে হয় মঙ্গলগ্রহের জীব, কখনো বা রূপকথার চরিত্র৷ আমস্টারডামের শিল্পী সেড্রিক লাকইয়েস মৃত গুবরে পোকা ও প্রজাপতিগুলিকে পরি হিসেবে পুনর্জন্ম দেন৷ তাঁর কাছে পোকা শিল্পের অসাধারণ উপকরণ৷ তিনি বলেন, ‘‘পোকার ত্বকের ক্রোমিয়ামের মতো রং ও শরীরের যান্ত্রিক গঠন চিরকাল আমাকে মুগ্ধ করেছে৷ শরীরের সুন্দর স্থাপত্য বা কাঠামো এমনই অপার্থিব, যে অনেকটা ঈশ্বরের মতো মনে হয়৷

এখনো পর্যন্ত তিনি দু'শোরও বেশি পরি সৃষ্টি করেছেন৷ প্রত্যেকটি একেবারে অনবদ্য৷ প্রথমদিকে সেড্রিক খসড়া প্রস্তুত করে তবেই কাজে হাত দিতেন৷ এখন একেবারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টির মধ্যে ডুবে যান৷ সেড্রিক বলেন, ‘‘রং ও গঠনের দিক থেকে যা কিছু হাতে পাই, তা দিয়েই কাজ শুরু করে দেই৷ এখনই যেমনটা করছি৷ অংশগুলি খাপ খেলে ভালো, না হলে সামঞ্জস্য হওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো৷ কখনো দ্রুত কাজ হয়৷ কখনো বা অনন্তকাল ধরে চেষ্টা করেও কিছু হয় না৷’’

লাইডেন শহরে জীবতত্ত্ব মিউজিয়ামে সেড্রিক অনেক প্রেরণা পান৷ কিশোর বয়সেই জীববিদ্যার প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল৷ তখন থেকেই তিনি পোকামাকড় সংগ্রহ করছেন৷ একবার বোনের জন্য উপহার খুঁজতে গিয়ে প্রথম পরিটি তৈরি করেছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এক রাতে আমরা পিটার প্যান দেখছিলাম৷ পরের দিনই বোনের জন্মদিন ছিল, অথচ আমি ভুলে গিয়েছিলাম৷ তখন খুব আক্ষেপ হলো৷ মনে হলো, একেবারে শেষ মুহূর্তে কিছু একটা তৈরি করে দিতে হবে৷ তখন নিরুপায় হয়ে টুকরো আলাদা করে জোড়া দিয়ে প্রথম পরি সৃষ্টি করেছিলাম৷ ২০ বছর ধরে সেই কাজই করে চলেছি৷’’

পোকার মৃতদেহ দিয়ে পুতুল!

শিল্পী হিসেবে মৃত প্রাণীর শরীরের নানা অংশ নিয়ে কাজ করা সত্যি বড় চ্যালেঞ্জ৷ মনে নৈতিক প্রশ্নও জাগে৷ হাড়গোড় ও লোমসহ চামড়া ব্যবহার করতে হয়৷ উপাদান সংক্রান্ত প্রমাণ কাছে রাখতে হয়৷ এই প্রজাতির কুমিরের মতো বিরল ও লুপ্তপ্রায় প্রজাতির দিকে তিনি কখনো হাত বাড়ান না৷ তবে ডাইনোসারের গোটা কঙ্কাল হাতে পেলে তিনি শিল্পী হিসেবে সেটিকে কাজে লাগাতে চান৷ সেড্রিক বলেন, ‘‘স্থাপত্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অংশগুলি আলাদা করে আবার সাজানোর কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগবে৷ হয়তো আমি এটা দিয়ে আস্ত একটা সিংহাসন তৈরি করবো৷’’

ডাইনোসরের হাড় না পেলেও কুকুর বা বনবিড়াল উপকরণ হয়ে উঠতে পারে বৈকি৷ ‘ফ্লোরাল স্কেলেটন্স' নামের সিরিজের জন্য তিনি প্রাণীর হাড়গোড়ের উপর ফুল দিয়ে অলংকরণ করেছেন৷

প্রত্যেক শিল্পকর্ম টেকসই হিসেবে গড়ে তোলা তাঁর কাছে জরুরি৷ যেমন প্রজননকারীরা যে সব পোকা ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে বাতিল করেন, সেগুলি দিয়েই তিনি কাজ করেন৷ প্রাণীর শরীরের এমন রূপ দেখে দর্শকদের বিতৃষ্ণা না হলেও অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে৷ সেড্রিক লাকইয়েস বলেন, ‘‘বেশিরভাগ প্রশ্নই পোকামাকড় সংক্রান্ত৷ সবাই জানতে চায়, এগুলি কী দিয়ে তৈরি৷ কারণ আসল উপাদান ব্যবহার করে চূড়ান্ত রূপ সৃষ্টি করার আইডিয়ার লক্ষ্য হলো – সেটিকে দেখলে যেন মনে হবে, যে সোজা প্রকৃতির কোল থেকে উঠে এসেছে, তার যেন নিজস্ব প্রাণ রয়েছে৷ অনেকেই বোঝেন না, যে সেগুলি আসল পোকা দিয়ে তৈরি৷ জানতে পারলে নানা প্রশ্ন উঠে আসে৷ যেমন কোথা থেকে পোকা সংগ্রহ করি, রং কোথা থেকে আসে ইত্যাদি৷’’

সৃষ্টির তাগিদের পথে তিনি কোনো বাধা পছন্দ করেন না৷ সেড্রিক লাকিয়েস ভবিষ্যতেও পরি সৃষ্টি করে যত বেশি সম্ভব মানুষকে মুগ্ধ করে দিতে চান৷

মাক্স সান্ডার/এসবি