পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের পতনের ২ দশকপূর্তী
২১ অক্টোবর ২০০৯১৯৮৯ সালে ইউরোপে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল, তার পরিণতি যে কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে, সেই মুহূর্তে কেউই সম্ভবত তা আঁচ করতে পারে নি৷ পূর্ব ইউরোপের স্বৈরতান্ত্রিক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জমে থাকা মানুষের ক্ষোভ বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করে৷ আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন এই সব ঘটনার চূড়ান্ত প্রতীকি রূপ দেখা যায় ১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর – যখন বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটে৷
পোল্যান্ড থেকে শুরু
পোল্যান্ডের গেডানস্ক শহরের বন্দরে শ্রমিকদের ‘সলিদারনশ্চ’ বা সলিড্যারিটি আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল পরিবর্তনের হাওয়া৷ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট শাসনের অবসানের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘সলিদারনশ্চ’ আন্দোলনের নেতা লেখ ভালৌঁসা নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন৷ গত জুন মাসের শুরুতেই এই বিপ্লবের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইউরোপের অনেক দেশের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হয়েছিলেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও সাবেক চেকোস্লোভাকিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ২ দশক আগে এই সব দেশে পরিবর্তনের ফলেই দুই জার্মানির পুনরেকত্রিকরণ সম্ভব হয়েছিল৷ ১৯৮৯ সালের ৪ঠা জুন পোল্যান্ডের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রভাব কয়েক মাসের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের বাকি দেশগুলির উপরেও এসে পড়ে৷ নাট্যকার ভাৎস্লাভ হাভেল সাবেক চেকোস্লোভাকিয়ায় কমিউনিজমের পতন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন৷
পোল্যান্ডের লেখ ভালৌঁসা এবং চেকোস্লোভাকিয়ার হাভেল – দুজনেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশের শীর্ষ নেতার পদে আসীন হন৷ স্বাধীনতা ও মুক্তির এই দুই প্রতীক ছাড়াও অন্য যে ব্যক্তিকে পরিবর্তনের সূচনাকারী হিসেবে গণ্য করা হয় – তিনি হলেন সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভ৷
মুক্তির ঢেউ
জুন মাসের শুরুতে পোল্যান্ডের ক্রাকো শহরে ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সমাবেশে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক বলেন, ‘‘সেদিন মুক্তি ও সংহতির যে উপলব্ধি ঘটেছিল, পরিচিত ও অপরিচিত যে নায়ক-নায়িকারা সেই উপলব্ধিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছিলেন, আজ তাঁদের প্রতি সম্মান জানাতে ইউরোপের শীর্ষ নেতারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন৷ আমি চেক, স্লোভাক, স্লোভেনিয়া, রুমেনিয়া, বুলগেরিয়াকে ধন্যবাদ জানাতে চাই৷ ১৯৮৯ সালের ৪ঠা জুনের নির্বাচনের ফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যে মুক্তি ও সংহতি শুধু অলীক স্বপ্ন বা আদর্শ নয়৷ তবে আমরা সেদিন যে লৌহ যবনিকা ও বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটিয়েছিলাম, তা প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, আমাদের মনের মধ্যেও আবার নতুন করে জেগে উঠছে৷’’
চেক প্রজাতন্ত্রের বিবর্তন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই চেক প্রজাতন্ত্র একাধিক পরিবর্তনের সাক্ষী ছিল৷ তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন কায়েম হওয়ার পর ১৯৬৮ সালে সেদেশের নেতারা চরম স্বৈরতান্ত্রিক কমিউনিস্ট কাঠামোর বদলে জনমুখী এক ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু প্রাগের সেই বসন্তে সোভিয়েত সামরিক বাহিনী কড়া হাতে সেই প্রচেষ্টা গুঁড়িয়ে দেয়৷ ২০ বছর আগে কমিউনিজমের পতনের ফলে আসে আরেক পরিবর্তন৷ ১৯৯৩ সালে চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র আলাদা হয়ে যায়৷ আজ ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ভাৎস্লাভ ক্লাউস সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দিয়ে লিসবন চুক্তি স্বাক্ষর করতে চাইছেন না৷
পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের পতনের ফলে সমাজে এসেছে বিশাল পরিবর্তন৷ রাজনীতি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, চিত্র নির্মাতারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তুলে ধরেছেন সেই পরিবর্তনের চিত্র৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ কীভাবে দেখেছেন ২০ বছর আগের সেই ঘটনা? আজ যখন তাঁরা ফিরে তাকান সেই দিনগুলির দিকে, তখনই বা তাঁদের মনে কী ধরনের উপলব্ধি ঘটে? এবিষয়ে নিজের ব্যক্তিগত কিছু ভাবনা-চিন্তা তুলে ধরেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে বসবাসরত বাঙালী অসিত বরন দে (পডকাস্ট সংস্করণে শুনুন)৷ তিনি দীর্ঘদিন ধরে সেদেশে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক