1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত: কী ঘটেছে বাঁশখালীতে?

১৭ এপ্রিল ২০২১

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় ‘এস এস পাওয়ার প্লান্টের’ শ্রমিকরা বিভিন্ন বিষয়ে দাবি দাওয়া জানিয়ে আসছিলেন৷ কিন্তু তাতে সাড়া না দেয়ায় শনিবার তারা বিক্ষোভ করেন৷ 

https://p.dw.com/p/3sAaI
ছবি: AFP

বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের জেরে গুলিতে মোট পাঁচজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী৷ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন কমপক্ষে ২৫ জন৷ তিনি শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শ্রমিকরা সকালে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে গিয়ে সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে৷’’

কিন্তু শ্রমিকরা দাবি করেছেন, পুলিশ আগেই গুলি করেছে৷ একজন শ্রমিক বলেন, ‘‘আমাদের রমজানে ইফতারের সময় দেয়া হয় না৷ আমরা বলেছি আমাদেরকে নামাজ, ইফতার ও রোজার ছুটি দিতে হবে৷ এসব দাবি না মেনে পুলিশকে দিয়ে আমাদের আন্দোলনে গুলি চালানো হয়েছে৷’’ আরেক জন শ্রমিক অভিযোগ করেন, ‘‘আন্দোলন শুরুর পরই পুলিশ গোলাগুলি শুরু করে৷ অনেকের মাথায় পিঠে গুলি লাগে৷ যে যেভাবে পেরেছি ছুটে পালিয়েছি৷’’ নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মধ্যেই পুলিশের একটি ক্যাম্প আছে৷ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষ তাদের ন্যায্য আন্দোলন দমনে পুলিশকে ব্যবহার করেছেন৷

শ্রমিক

শনিবারের ঘটনায় চারজনকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ মৃত ঘোষণা করা হয়৷ আরেকজন মারা যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, তিনজন পুলিশসহ ১৯ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়৷ তাদের মধ্যে একজন শ্রমিক মারা যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আহত শ্রমিকরা জানিয়েছেন দাবি দাওয়া নিয়ে মালিক পক্ষের সাথে তাদের আগে থেকেই ঝামেলা চলছিলো৷’’

ঘটনার পর বাঁশখালী এবং হাসপাতালে আহত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের বেশ কয়েক মাস ধরে নিয়মিত বেতন দেয়া হচ্ছিল না৷ সেই সঙ্গে তারা বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ রোজার মাসে কাজের সময় পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন তারা, তাও মানা হচ্ছিল না৷ এছাড়াও শ্রমিকদের অভিযোগ সেখানে পানি ও টয়লেটের সংকট রয়েছে৷ আট ঘণ্টার পরিবর্তে ১০ ঘণ্টা কাজে বাধ্য করা হয়৷ তাদের সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করা হয়৷ এনিয়ে তারা ১১ দফা লিখিত দাবি দিয়েছিল৷ শুক্রবারও তাদের কাজ করতে হয়৷ এনিয়ে শুক্রবার তারা বিক্ষোভ করেন৷ শনিবার সকালে তারা আবার বিক্ষোভ করলে তা দমনে গুলি চালানো হয়৷

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘‘শ্রমিকদের মধ্যে বেতন  ও কর্মঘণ্টা নিয়ে অসন্তোষ ছিলো৷ তবে শনিবারের বিক্ষোভে শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়৷ তারা গাড়ি পোড়ায়, ভাঙচুর করে৷ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে৷’’

বাঁশখালী থানার ডিউটি অফিসার এসআই আল মামুন জানান, ‘‘প্ল্যান্টের মধ্যেই পুলিশ ক্যাম্প আছে৷ সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে গুলির ঘটনা ঘটে৷ তারপর আরো পুলিশ পাঠানো হয় চট্টগ্রাম থেকে৷ অতিরিক্ত পুলিশ যাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷’’

নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে৷ তবে বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি৷

‘নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে’

চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এস আলম-এর কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের রিরোধিতা করে স্থানীয়রা আন্দোলন করেন৷ তখন গুলিতে চারজন নিহত হন৷ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে স্থানীয়রা শুরু থেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে আসছেন৷

এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা৷ ২০২২ সাল নাগাদ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা৷ এই প্রকল্পে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে ৩০ ভাগ বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে৷ বাঁশখালীর প্রত্যন্ত এলাকায় সমূদ্রের তীরে এর অবস্থান৷ ফলে সাংবাদিকরা বা প্রশাসন ওখানকার খোঁজ খবর তেমন পান না৷ পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও কেন্দ্রটিতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে৷ প্রায় তিন হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করেন৷ ব্যবস্থাপনায় চীনা নাগরিকরাও আছেন৷

এনিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম লাভলুকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ এসএমএস পাঠানো হলে তার জবাবও দেননি৷