1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুরোহিতদের ভাতার ভাবনা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ইমামদের পর পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার৷ পূজার মৌসুম কেটে গেলে এ নিয়ে পুরোহিতদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মন্ত্রী৷ পুরোহিতদের ভাতা কেন দেওয়া হবে, উঠছে এই প্রশ্ন৷

https://p.dw.com/p/3PTPy
Flash-Galerie Bangladesch Cricket World Cup 2011 Indien Beten in Bombay
ফাইল ফটোছবি: AP

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পশ্চিমবঙ্গের ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য মাসিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ইমামদের প্রভাব রয়েছে৷ সেই ইমামদের ভাতা দেওয়া নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে৷ মামলাও হয়েছে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে৷ আদালত একে বেআইনি বলে রায় দিয়েছিল৷ তাও পিছু হঠেনি রাজ্য সরকার৷ ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে ঘুরপথে ইমামদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷ এবার পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার৷ খোদ মন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পুরোহিতদের ভাতা পাওয়া উচিত৷ তাঁরা এই দাবি রেখেছেন আমাদের কাছে৷ বিষয়টি নিয়ে নভেম্বরে আলোচনা হবে৷

মন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার কথা ভাবছে৷ পুরোহিতরা হিন্দু সম্প্রদায়ের যে কোনো ধর্মীয় উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ ধর্মাচারের থেকে ইদানীং যে কোনো পুজোয় উৎসব বড় হয়ে উঠলেও পুরোহিতদের গুরুত্ব কমেনি৷ পুজো-অর্চনার ভার থাকে তাঁদের উপরই৷ শুধু সর্বজনীন উৎসব নয়, গৃহস্থের বাড়িতে পুজো, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় কাজকর্মে ডাক পড়ে পুরোহিতদের৷ ধীরে ধীরে এই কাজ একটি পেশার রূপ নিয়েছে৷ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পুরোহিতরা যে কাজ করেন, সেটিকে জীবিকার একটি অসংগঠিত ক্ষেত্র বলা চলে৷ তাই অনেকে বলছেন, পুরোহিতদের আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের ভাতার ব্যবস্থা করার মধ্যে অন্যায্য কিছু নেই৷

যদিও ইমামেরা ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে যতটা প্রভাবশালী, তাঁরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যতটা সংগঠিত, সেই নিরিখে পুরোহিতদের কোনো তুলনাই চলে না৷ বাঙালি থেকে গুজরাতি, কাশ্মীরি থেকে তামিল, ভারতের সর্বত্র সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পুরোহিতদের সেই প্রভাব নেই৷ বিশেষ করে বাঙালিদের মধ্যে তো নয়ই৷  মুসলমানদের নেতা হিসেবে ইমামেরা রাজনৈতিক মতকেও প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন৷ তাই ইমামদের ভাতা দেওয়ার পদক্ষেপের মধ্যে সংখ্যালঘু তোষণ দেখেছিল বিরোধীরা৷ তাদের বক্তব্য, ইমামদের সমর্থন ও আনুকূল্য নিশ্চিত করতেই তৃণমূল কংগ্রেস এই পদক্ষেপ নিয়েছে৷ কিন্তু, পুরোহিতদের সেই স্থান নেই বাঙালি হিন্দু সমাজে৷ ইমামদের মতো তাঁরা নেতৃস্থানীয় নন, কোনো সিদ্ধান্তের জন্য সমষ্টিগত ভাবে পুরোহিত বা ব্রাহ্মণদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না৷ সেক্ষেত্রে পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার ভাবনায় বিতর্ক হচ্ছে কেন?

বিমলশঙ্কর নন্দ

লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের উত্থানে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গিয়েছে৷ বিজেপির বক্তব্য, তৃণমূলের সংখ্যালঘু তোষণের ফলে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় অসন্তুষ্ট৷ ভোটে তার প্রতিফলন হওয়ায় পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার কথা ভাবছে তৃণমূল৷ এটা গোটা সম্প্রদায়কে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দের কাছে এটা একটা প্রতিষেধক৷ তিনি বলেন, ‘‘আদালতের রায়ের পরও ইমাম ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ রাজ্য সরকার নিয়েছে, তা ভালো ভাবে নেয়নি সংখ্যাগুরু সমাজ৷ তার প্রভাব লোকসভা নির্বাচনে পড়েছে৷ পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার ভাবনা সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা৷ কিন্তু, এই পদক্ষেপ আরো বিরূপ ফল দিতে পারে৷ দুই সম্প্রদায়ের মানুষই অখুশি হতে পারে৷''

রাজনৈতিক দলগুলির এ ধরনের পদক্ষেপে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত লাগছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ অধ্যাপক নন্দের মতে, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে সুবিধা দেওয়া রাষ্ট্রের পক্ষে অনুচিত৷ এখানে সবাইকে খুশি করার চেষ্টা হচ্ছে৷ এটা সাম্প্রদায়িকতার বৈধকরণ৷ তোষণের রাজনীতির কোনো শেষ নেই৷ তাই একটি পর্যায়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার৷''