1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুরনো ইট রক্ষার উপায়

২৭ এপ্রিল ২০১৮

পুরনো, ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ প্রত্নতত্ত্ববিদরা সেগুলো রক্ষার চেষ্টা করছেন৷ এই লক্ষ্যে ইউরোপের গবেষকরা একটি পরিবেশবান্ধব উপাদান তৈরির চেষ্টা করছেন, যা দিয়ে পুরনো ইট রক্ষা করা যাবে৷

https://p.dw.com/p/2wleO
ছবি: Cristian Ciobanu - Fotolia.com

চতুর্দশ শতাব্দীতে নির্মিত সার্বিয়ার বাচ দুর্গ ৩০০ বছর আগে ধ্বংস হয়েছিল৷ জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ এই দুর্গটি এখন হুমকির মুখে৷ তবে তাকে রক্ষার চেষ্টা চলছে৷ স্থপতি স্লাভিচা ভুজোভিচ বলছেন, ‘‘আমরা এটা রক্ষার খুব চেষ্টা করছি৷ কিন্তু এর কাঠামো এখনও বেশ ভঙ্গুর৷ দেয়াল তৈরিতে যে কাদামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ৷ দেয়ালের কিছু অংশের নীচে ফাউন্ডেশন না থাকায় হুমকি বেড়েছে৷''

প্রত্নতত্ত্ববিদ ও সংরক্ষণ কর্মীদের সঙ্গে মিলে ইউরোপীয় গবেষকরা একটি সমাধান খুঁজছেন৷ তাঁরা এ সব দেয়ালের ভেতর ও নীচে কী আছে, তা জানার চেষ্টা করছেন৷ গবেষণা করে তাঁরা একটি অভিনব পদার্থ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন, যা পুরনো ইটগুলোকে পরিবেশসম্মত উপায়ে রক্ষা করবে৷ প্রকৌশলী অগনিয়েন রুডিচ বলছেন, ‘‘আমরা এখন নতুন পদার্থটি পরীক্ষা করে দেখছি৷ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এটা৷ ফলে কোনো বিষাক্ত উপাদান নেই৷ চাইলে এটি খেতেও পারি আমি৷''

গবেষণার লক্ষ্য, আবহাওয়াজনিত কারণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষয়ে যাওয়া রোধে ‘সবুজ' এক উপায় বের করা৷ প্রকৌশলী ইয়ননইয়াউয়া রানোগাইয়েচ জানালেন, ‘‘আমরা দু'টো উপাদান তৈরি করেছি৷ একটি কাঠামোকে শক্ত করার জন্য, অন্যটি ক্ষয় রোধ করার জন্য৷ দু'টোই পরিবেশবান্ধব৷ সিলিকেট আর কার্বনেট দিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়েছে৷ এছাড়া এই দেয়াল তৈরিতে যে ইট, চুন ও কংক্রিট ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোর কম্পোজিশনের সঙ্গে এদের মিল আছে৷''

মাঠপর্যায়ে গবেষণার সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মধ্যযুগে কীভাবে ইট আর চুন তৈরি করা হতো, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাচ্ছেন৷ এরপর ল্যাবে একই কাদা ও কাচামাল ব্যবহার করে এবং একই পদ্ধতিতে রেপ্লিকা তৈরি করা হয়৷ তারপর শুরু হয় গবেষণা কাজের কঠিন পর্যায়৷

প্রকৌশলী স্নেজানা ভুচেটিচ বলছেন, ‘‘রেপ্লিকা ইট তৈরি হয়ে যাওয়ার পর আমরা তা পরীক্ষা করে দেখি৷ লবণাক্ত ও হিম পরিবেশে সেগুলো খাপ খায় কিনা, তা দেখা হয়৷ সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও দূষণের জন্য দায়ী বিভিন্ন এজেন্টের মুখোমুখিও করা হয় তাদের৷''

এরপর সংরক্ষণের জন্য ল্যাবে তৈরি উপাদান রেপ্লিকা ইটের উপর ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ ফলাফল বেশ সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাথমিক ফলাফল বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক৷

প্রকৌশলী অগনিয়েন রুডিচ বললেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই সংরক্ষণকারী উপাদানের মধ্যে সুরক্ষা গুণ রয়েছে৷ এছাড়া এগুলো জীবাণুবিরোধী এবং ইটের উপরিভাগে পরিবর্তন আনতে পারে, এমন কিছু ধ্বংস করতে সক্ষম৷ আর স্বচ্ছ হওয়ার কারণে যে পদার্থে ব্যবহার করা হয় তার সৌন্দর্য্যেও কোনো পরিবর্তন আনে না এটি৷''

সিমেন্ট ও প্লাস্টার নির্মাণকারী একটি কারখানাও গবেষণায় যোগ দিয়েছে৷ গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া সংরক্ষণকারী উপাদান তৈরি ও পরীক্ষা করা হচ্ছে সেখানে৷ ভালো একটি উদ্দেশ্যে এটি করা হচ্ছে৷ কারখানার পরিচালক রাইকো ত্রাভিচা বলছেন, ‘‘এটি একটি দারুণ উদ্ভাবনী পণ্য, যা বাজারে আমাদের দর বাড়াতে পারে৷ সাধারণ পদার্থ দিয়ে তৈরি, সহজে মেশানো ও উৎপাদন করা যায়৷ গবেষণা যদি সফল হয় তাহলে তিন বছরের মধ্যে এটি বাজারে আসবে৷''

সেটি সম্ভব হলে শুধু এখানকার ইটের জন্য নয়, ইউরোপের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্যও তা ভালো হবে, বলে বিশ্বাস গবেষকদের৷