বর্জ্যের উপরে বাস যাদের
২০ মে ২০১৩জার্মানিতে পারমাণবিক বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে বা সংরক্ষণ করা হবে, তা নিয়ে এখন রীতিমতো সংসদীয় কমিশন বসছে৷ নিম্ন স্যাক্সনি রাজ্যের আসে'তে ঐ ধরনের একটি পারমাণবিক বর্জ্য ফেলার জায়গা আছে৷ সেটি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে আইন করে৷
পারমাণবিক বর্জ্য রাখা হয় পুরু টিনের ড্রামের মতো ব্যারেলে করে, কেননা তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর বিপদ থাকে৷ আসে'র বর্জ্যের আধার থেকে এক লাখ ছাব্বিশ হাজার এ'ধরনের ব্যারেল সরাতে হবে: এই হলো আইনের নির্দেশ৷
আসে'র ঐ জায়গার কাছেই হলো রেমলিংগেন শহর৷ তারই বাসিন্দা হাইকে ভিগেল৷ এখানেই ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে বাস করছেন হাইকে৷ কৃষিজীবীর গৃহিণী হাইকে বললেন, এখানকার পানি নিয়ে তাঁর কোনো চিন্তা নেই: ‘‘ও নিয়ে তো আর সর্বক্ষণ ভাবা যায় না৷''
আসেতে ঐ পারমাণবিক আধার থাকার একটি ফল হলো, পারমাণবিক বর্জ্য সম্পর্কে সেখানকার বাসিন্দাদের সচেতনতা৷ আসে'র আধার এর বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তারা৷ এবার আইন বলছে, আসে থেকে পারমাণবিক বর্জ্য সরাতে হবে৷ আসে'র আন্দোলনকারীরা নিশ্চিত করতে চান যে, অতীতের ভুলভ্রান্তির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে৷ হাইকে বলেন: ‘‘এরকম একটা পুরনো, অস্থিতিশীল লবনের খনিতে পারমাণবিক বর্জ্য ফেলা৷ শেষের দিকে শুধুমাত্র ব্যারেলগুলো এনে এখানে ফেলা হতো৷''
মাটির নীচে পারমাণবিক বর্জ্য
হাইকে যেখানে থাকেন, সেখান থেকে মাইল খানেক দূরে মাথায় খনিশ্রমিকদের হেলমেট পরে কর্মীরা বেরচ্ছেন একটি লিফ্ট থেকে৷ পরনে তাদের ওভারল, পিঠে অক্সিজেনের ট্যাংক৷ ১৯৬৪ সাল অবধি আসে ছিল একটি লবনের খনি৷ তার কিছু পরে জার্মান সরকার খনিটি কিনে নিয়ে সেখানে হাল্কা থেকে মাঝারি তেজস্ক্রিয়তার পারমাণবিক বর্জ্য ফেলতে শুরু করেন৷ এ' কাজ চলে প্রায় এক দশক ধরে৷ বর্জ্য আসতো সরাসরি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি থেকে, ব্যারেলে করে৷ তারপর লবনের খনির ফাঁকা হলগুলিতে ব্যারেলগুলি রাখা হতো৷
আসে'তে পারমাণবিক বর্জ্য আনা কেন বন্ধ করা হল, সে'ও এক অদ্ভুত কাহিনি৷ জার্মানিতে পারমাণবিক বর্জ্য রাখার নিয়মকানুন পাল্টে যায়, তৈরি হয় নতুন আইন৷ কাজেই আসে বন্ধ করে দিতে হয়৷ কিন্তু আসেতে মাটির নীচে এখনও হাজার হাজার ব্যারেল পারমাণবিক বর্জ্য জমা করা আছে৷
পানি থেকে বিপদ
মুশকিল এই যে, বহু ব্যারেল কি অবস্থায় আছে, সেগুলোয় মরচে ধরেছে কিনা, ব্যারেলগুলো লিক করছে কিনা, এ'সব কিছুই জানা নেই৷ তাই ৫০ বছর পরে নতুন করে ড্রিলিং করে ব্যারেলগুলোর অবস্থা জানার প্রচেষ্টা চলেছে৷
ওদিকে গোটা খনিটার অবস্থাই অস্থিতিশীল হতে পারে৷ ১৯৮৮ সাল যাবৎ ভূগর্ভস্থ পানি চুঁইয়ে খনিতে ঢুকছে৷ কাজেই আসে থেকে ব্যারেলগুলো সরানোর জন্য নতুন, আরো বেশি স্থিতিশীল শ্যাফ্ট বা লিফ্ট চলাচলের গর্ত খোঁড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ পানি থেকে আসল আশঙ্কা হল, গোটা খনিটাই ডুবে যেতে পারে এবং পানির চাপে পারমাণবিক বর্জ্য মাটির উপর ভেসে উঠতে পারে৷ যার ফলে স্থানীয় পানি সরবরাহ তেজস্ক্রিয়তা দূষিত হতে পারে৷
কিন্তু আসে পানিতে ডুবে যাবার আশঙ্কা বাস্তবিক হলেও, আসন্ন নয়৷ তাই এখান থেকে পারমাণবিক বর্জ্য সরানোর কাজ শুরু হতে আরো বিশ বছর সময় পার হয়ে যেতে পারে৷