পানির নীচে অভিনব মিউজিয়াম
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ফ্রান্সের দক্ষিণে কান শহরের উপকূলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা পানির নীচে এই মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে পারেন৷ সেখানে পানির গভীরতা বেশি না হওয়ায় স্নর্কেল নিয়েই সেই জগতে উঁকি মারা যায়৷ সিমেন্টের তৈরি আড়াই মিটার দীর্ঘ ছ'টি ভাস্কর্যের প্রত্যেকটি দশ টনেরও বেশি ভারি৷
নিজের শিল্পসৃষ্টির সাহায্যে জেসন ডিকেয়ারেস টেলর সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য নতুন বাসস্থান সৃষ্টি করেছেন৷ ব্রিটেনের এই শিল্পী চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর সর্বশেষ প্রকল্পের জন্য কাজ করেছেন৷ নিখুঁত জায়গা খোঁজা থেকে শুরু করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ দরকষাকষি ছাড়াও সমুদ্রের নীচের মাটি থেকে জঞ্জাল সরাতে হয়েছে৷
নিজের কাজের সাহায্যে এই শিল্পী ও পেশাদারী ডুবুরি সমুদ্রের সংবেদনশীল ইকোসিস্টেম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চান৷ সেইসঙ্গে অনবদ্য অভিজ্ঞতার স্বাদও থাকছে৷ জেসন বলেন, ‘‘বহুকাল ধরেই পানির নীচে শিল্প সৃষ্টির স্বপ্ন ছিল৷ এমন জায়গায় ইনস্টলেশন বা শৈল্পিক কার্যকলাপ কখনো হয়নি৷ একেবারে নতুন এই জগতে রং, আলো, মুভমেন্টসহ গোটা অভিজ্ঞতাই একেবারে ভিন্ন৷''
১৫ বছর ধরে শিল্পী হিসেবে জেসন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পানির নীচে মিউজিয়াম সৃষ্টি করে চলেছেন৷ এখনো পর্যন্ত সমুদ্রের নীচে এক হাজারেরও বেশি ভাস্কর্য বসিয়েছেন তিনি৷ পানির নীচে সেগুলির চরিত্র বদলে যায়৷ সেই অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে জেসন বলেন, ‘‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছোট ছোট পরিবর্তন চোখে পড়ে৷ এক সপ্তাহ পর গোটা ভাস্কর্যের উপর সবুজ শেওলার প্রলেপ পড়ে যায়৷ তারপর স্পঞ্জ, কোরাল সৃষ্টি হয়৷ ফাঁকফোকরের মধ্যে মাছ লুকিয়ে থাকে৷ মানুষের পক্ষে এমন সব বিন্যাস ও আকার সৃষ্টি কখনোই সম্ভব নয়৷ এত খুঁটিনাটী কাজ, এমন উজ্জ্বল রংয়ের প্যালেট আমরা এখনো উদ্ভাবন করতে পারিনি৷''
কান শহরের ছয় জন বাসিন্দার মুখচ্ছবি এবারের ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ সোশাল মিডিয়া ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁদের খোঁজ চালানো হয়েছিল৷ দোমিনিক রয়াল তাঁদের মধ্যে একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘কান শহরের ৫০ জন বাসিন্দা আবেদন করেছিলেন৷ জেসন ডিকেয়ারেস তাঁদের মধ্যে ছয় জনকে বেছে নেন৷ আমাকেও বাছাই করা হয়৷ ভেবে দেখুন, যে আমি কখনো পানির নীচে মাথা ডোবাই নি, তাকেই কিনা সমুদ্রপৃষ্ঠের তিন মিটার নীচে অমর করে রাখা হবে! সত্যি অসাধারণ!''
জেসন ডিকেয়ারেস টেলর লোহিত সাগর বা মেরু অঞ্চলের মতো জায়গায় পানির নীচে আরও মিউজিয়াম গড়ে তুলতে চান৷ পৃথিবীর উপরিভাগের তিন-চতুর্থাংশ জুড়ে পানি থাকায় জায়গার কোনো অভাব নেই৷ জেসন বলেন, ‘‘পানির নীচে কাজ করলে আমরা একেবারে ভিন্ন চোখে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে পাই বলে আমার আশা৷ আমরা সেই জায়গার মালিক নয়, বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে বা সম্পদ হিসেবে বিক্রি করতে পারি না৷ এটা এমন এক প্রাকৃতিক স্পেস, যা আমাদের গ্রহের সবকিছুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ পানির নীচে সীমানা বা কৃত্রিম রেখার কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই৷''
ইয়েন্স ফন লার্খার/এসবি