পানির উপর নাটক!
৯ নভেম্বর ২০১৮ফ্রান্সের নাট্যদল ইলোটোপি প্যারিস শহরের কাছে ‘মার্ন’ নদীর উপর ‘আকোয়া ফর্ট’ নামের শো পরিবেশন করছে৷ উদ্ভট স্বপ্নময় জগৎকে মঞ্চে উপস্থাপন করতে যে পানির প্রয়োজন হয়, তা এখানেই আছে৷
দর্শকদের মধ্যে কেউ বলেন, কখনো এমন অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়নি৷ রংয়ের বর্ণচ্ছটা পরস্পরের সঙ্গে মিশে গেলেও এক অসাধারণ সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরছে৷ শিশুরাও আলো ও আগুনের খেলা দেখে মুগ্ধ৷ শো-র পরিবেশ স্বপ্নের মতো৷
‘আকোয়া ফর্ট’ শো আসলে এক ব্যক্তির কাহিনি, একদিন সকালে যাঁর দৈনন্দিন জীবন ওলটপালট হয়ে গেছে৷ তিনি যা-ই ভাবছেন বা পড়ছেন, আচমকা তা বাস্তবে পরিণত হচ্ছে৷ ইলোটোপি গোষ্ঠীর নাট্য পরিচালক দোমিনিক নোয়েল বলেন, ‘‘আমাদের শো-তে সমাজের এমন এক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা হয়, যা একই সঙ্গে কাব্যময় ও সমালোচনামূলক৷’’
৩০ সদস্যের এই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রযুক্তিবিদ, সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও অ্যাক্রোব্যাট শিল্পী রয়েছেন৷ ২০০৪ সাল থেকে এই গোষ্ঠী পানির উপর শো করে আসছে৷ দোমিনিক বলেন, ‘‘পানির উপর শো তার নিজস্ব গুণেই বেশ জমকালো হয়ে ওঠে৷ পানির সঙ্গে সবারই কোনো যোগাযোগ রয়েছে৷ দর্শকদের থিয়েটার হলের তুলনায় পানির কাছে আনাও তুলনামূলকভাবে সহজ৷ পানির ব্যাপ্তি ও গভীরতার কারণে এমন এক মাত্রা পাওয়া যায়, থিয়েটার হলে যা সম্ভব নয়৷’’
তবে পানির উপর মঞ্চায়ন বিশাল চ্যালেঞ্জও বটে৷ এই অংশে নদীর স্রোত রয়েছে৷ অভিনেতারা ভাসমান দ্বীপের উপর দাঁড়িয়ে অভিনয় করেন৷ গোটা প্রক্রিয়া তাই আগেই পরীক্ষা করে দেখতে হয়৷ কিছু দ্বীপে নৌকার ইঞ্জিন বসানো রয়েছে, অন্যগুলি ব্যাটারিতে চলে৷ পা দিয়ে দ্বীপগুলি চালনা করা হয়৷
ফরাসি অভিনেতা ভ্যাঁসঁ স্যাঁ লুব্যার এই শো-তে তিন-তিনটি ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ তাঁকে দেখলে মনে হয়, তিনি যেন পানির উপর সাইকেল চালাচ্ছেন৷ ভ্যাঁসঁ বলেন, ‘‘আলোকসজ্জা এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করি৷ সঙ্গে আরো কস্টিউম থাকে, নাটকের সময় পানির উপরই জামাকাপড় বদলাতে হয়৷ সামনে ও পেছন দিকে যেতে স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে অ্যাক্সিলারেটরও রয়েছে৷ তবে একই সঙ্গে শো-র বাকি অভিনেতাদের গতিবিধির উপরেও নজর রাখতে হয়৷’’
ইলোটোপি গোষ্ঠী শুধু পানির উপর নয়, সাধারণ নাটকের মঞ্চেও সক্রিয় রয়েছে৷ তাছাড়া রাজপথ ও নানা উন্মুক্ত জায়গায়ও তারা নাটক পরিবেশন করে৷ ইলোটোপির প্রতিষ্ঠাতা ও শো-র পরিচালক ব্রুনো শ্নেবেল্যাঁর কাছে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি বলেন, ‘‘শিল্পকলা সবার নাগালে নিয়ে আসাই ছিল মূল আইডিয়া৷ পুরানের গল্প উন্মুক্ত জায়গায় পরিবেশন করতে চেয়েছিলাম৷ সবার কাছে শিল্প পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, কারণ তা বিনামূল্যে করা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে আমরা শুধু বুদ্ধিজীবী নয়, সবার কাছে পৌঁছতে পারছি৷ এমনকি যারা থিয়েটার দেখতে যান না, তাঁদেরও কাছে পাচ্ছি৷’’
‘আকোয়া ফর্ট’ শুধু হালকা মেজাজের রঙিন শিল্পসৃষ্টি নয়৷ সমুদ্রের উপর শরণার্থীদের পরিস্থিতির মতো সমসাময়িক বিষয়গুলিও তাতে উঠে আসে৷
কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি