পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপই আলোচনার পাদপ্রদীপে
২৩ মার্চ ২০১০বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট জারদারির অসামরিক সরকারের চেয়ে পাক-মার্কিন আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করছে দেশটির সেনাবাহিনীই৷ এজন্য সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানি নিজেই গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে৷
রাজধানী ইসলামাবাদে প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার শতাধিক ব্যক্তির হাতে দেশের সর্বোচ্চ সামরিক-অসামরিক পদক তুলে দেন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি৷ প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, সিনেট চেয়ারম্যান এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, এমপি এবং সামরিক আধাসামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৯০ ব্যক্তিকে পদক দেওয়া হয় এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে৷
কিন্তু, স্থানীয় গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসকে ছাপিয়ে আলোচনার পাদপ্রদীপে রয়েছে অন্য একটি খবর৷ সেটা যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা৷ প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বহুল আলোচিত এই পাক-মার্কিন সংলাপ বিষয়ে অনেকটাই মৌন৷ তাঁর মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি এখন ওয়াশিংটনে৷ বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি৷ ওয়াশিংটনে গিয়েছেন পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানিও৷ আর জেনারেল কায়ানির সফরই গুরুত্ব পাচ্ছে সব আলোচনায়৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, অসামরিক সরকারের চেয়ে এ আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করছে দেশটির সেনাবাহিনীই৷ কেননা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ তালেবান সংকট আর আফগান ইস্যু সব মিলিয়ে নিরাপত্তাই এই আলোচনার কেন্দ্রে৷
জেনারেল কায়ানি ইতোমধ্যেই বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস, নেভি অ্যাডমিরাল মাইক মালেন, ইউএস জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ জেনারেল ডেভিড পেত্রেউস এবং ইউএস সেন্ট্রাল কমাণ্ডের প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে৷ মন্ত্রী পর্যায়ে দুই দেশের কৌশলগত আলোচনার আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়াবলীর আলোচ্যসূচি ঠিক করে দেওয়াই এ তাঁর এ ধারাবাহিক বৈঠকের উদ্দেশ্য৷
আশা করা হচ্ছে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির আদলে একটি পাক-মার্কিন পরমাণু চুক্তি নিয়েও কথা হবে এই সংলাপে৷ আফগানিস্তান প্রেক্ষিত এবং আল-কায়েদা ও তালেবান সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় পাকিস্তানি সহযোগিতার বিনিময়ে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা যা চায় তার অন্যতম বিবেচনা করা হচ্ছে এই পরমাণু চুক্তিকে৷ কেননা শুধু জ্বালানি স্বনির্ভরতার প্রশ্নেই নয় এটা চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে সমমর্যাদার প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে পাকিস্তান৷
অবশ্য, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পানি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ এবং বিদেশনীতিসহ অনেকগুলো ইস্যুতেই সহযোগিতা জোরদারে আলোচনা হবে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠকে৷ বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য প্রতিশ্রুতি চূড়ান্ত করার ঘোষণাও আশা করছে উভয়পক্ষই৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অন্যতম মিত্র পাকিস্তানের ভূমিকা কি হবে সেটা নির্ধারণ করাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় দেশটিতে আধিপত্যের লড়াই এবং সামগ্রিক ভূ-রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে নিজের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা৷
প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক