1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানের মাদ্রাসায় শিশুদের যৌন নিপীড়ন

২৯ জুন ২০২১

এক শিশুকে মাদ্রাসায় জাতীয়ভাবে পরিচিত এক ধর্মীয় নেতার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাকিস্তানে এখন তুমুল আলোচিত৷ দক্ষিণ  এশিয়ার দেশটির মাদ্রাসায় কেন যৌন নিপীড়ন হয় এবং ঘটনাগুলোর কেন বিচার হয় না- এ প্রশ্ন আবার সামনে এনেছে এই ঘটনা৷

https://p.dw.com/p/3vlNi
Pakistan Islamabad 2015 | Koranschule
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images

সবশেষ ঘটনাটি পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরের৷ সাবির শাহ নামের এক কিশোরকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ ওঠে জমিয়াতুল উলেমা ইসলাম-এর নেতা মুফতি আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে৷ সাবির ডয়চে ভেলেকে জানায়, পাকিস্তানের ইসলামি শিক্ষাবিদদের সংগঠন জমিয়াতুল উলেমা ইসলাম-এর নেতা মুফতি আজিজুর রহমান তার ওপর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন৷

পাকিস্তানে এমন ঘটনা একেবারেই নতুন নয়৷ মুফতি আজিজুর রহমানের আগে এবং পরে অনেক ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধেই এ অভিযোগ উঠেছে৷ মুফতি আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাজানি হওয়ার পর এক শিয়া ধর্মীয় নেতার যৌন নিপীড়নের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ এর আগের সাড়া জাগানো ঘটনাগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে পাক পাত্তানে নয় বছর বয়সি এক কিশোরকে এক মওলানার ধর্ষণ করার খবরটি অনেকেরই এখনো মনে আছে৷ এছাড়া ২০১৮ সালে লাহোরের এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিশুকে এবং ২০১৯ সালে মুলতানে ১৩ বছর বয়সি এক প্রতিবন্ধী মেয়েকে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগও সেই সময় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল৷

Pakistan Islamabad 2015 | Koranschule
পাকিস্তানে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মোট মাদ্রাসার সংখ্যা ৩৬ হাজার৷ ৩৬ হাজার ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে আছে ২২ লাখেরও বেশি ‘‘শিক্ষার্থী৷ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images

শিশুরা দুর্বল তাই...

পাকিস্তানে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মোট মাদ্রাসার সংখ্যা ৩৬ হাজার৷ ৩৬ হাজার ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে আছে ২২ লাখেরও বেশি ‘‘শিক্ষার্থী৷ লাহোরের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. নায়লা আজিজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মওলানাদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া অনেক শিশুকে দেখেছি আমি৷'' তিনি মনে করেন, মাদ্রাসা শিক্ষকদের খুব কাজের চাপ এবং যৌনতার বিষয়ে তীব্র হতাশা থাকে৷ সে কারণেই তারা শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালান বলে ড. নায়লা আজিজ মনে করেন৷ তার মতে, শিশুরা দুর্বল এবং তাদের কথা বড়রা বিশ্বাস করতে চায় না বলে তাদের সঙ্গে এমন আচরণের ঘটনা বেশি ঘটে৷ মাদ্রাসা শিক্ষকরা শিশুদের এই দুর্বলতা এবং অসহায়ত্বের ‘সুযোগ' নেন বলে মনে করেন ড. নায়লা আজিজ৷

ধর্মীয় নেতাদের রাজনৈতিক পরিচয়

সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, অনেক মাদ্রাসা শিক্ষক রাজনৈতিকভাবেও ‘ক্ষমতাবান' বলে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই৷ পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক সেনেট কমিটির সাবেক চেয়ারপার্সন নাসরিন জলিল ডয়চে ভেলেকে বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করতে গেলেই রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত ধর্মীয় নেতারা তদন্ত থামিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানাতে ফোন করতে শুরু করেন৷ এ কারণে সংসদ সদস্যরা অনেক ঘটনার তদন্ত গুটিয়ে নেন বলেও নাসরিন জলিল জানান৷

অভিভাবকদের ওপর চাপ

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুর জন্য সুবিচার দাবি করতে গিয়ে তার পরিবারই উল্টো নানা ধরনের চাপের মুখোমুখি হয়৷ পাঞ্জাবের চকওয়াল জেলার নূর মোহাম্মদ ফাজলির ভাতিজিকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন স্থানীয় এক মওলানা৷ আরো চারটি মেয়েকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ ছিল সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি সব অভিযোগ স্বীকারও করেছিলেন৷ তারপরও সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আসা চাপের কারণে ওই ব্যক্তির কোনো শাস্তি হয়নি৷

সারা দেশে একটি মাত্র ফরেনসিক ল্যাব

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী পুলিশ কর্মী ডয়চে ভেলেকে বলেন, মাদ্রাসায় শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়ার বড় একটি কারণ ফরেন্সিক ল্যাবের অভাব৷ তিনি জানান, পাকিস্তানে মাত্র একটি ফরেন্সিক ল্যাব আছে এবং সে কারণে ফরেন্সিক পরীক্ষা করাতে চাইলে চার মাসের আগে ‘ডেট' পাওয়া যায় না৷ স্বাভাবিক কারণেই যৌন নিপীড়নের শিকারদের অনেকেই ফরেন্সিক পরীক্ষা না করিয়ে মামলা থেকেই সরে দাঁড়ায় আর তাতে আসামিরাও পার পেয়ে যায়৷

এস খান (ইসলামাবাদ)/ এসিবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য