1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানি কূটনীতিককে খুঁজছে ভারত

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১০ এপ্রিল ২০১৮

ভারতের জাতীয় তদন্ত এজেন্সি পাকিস্তানি কূটনীতিককে ‘ওয়ান্টেড' তালিকাভুক্ত করে রেড কর্নার নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আর্জি জানাতে চলেছে৷ অভিযোগ, ২৬/১১'র ধাঁচে ভারতের ওপর বড় ধরণের হামলা চালাবার ষড়যন্ত্র করছিলেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/2vniK
Interpol Logo
ছবি: Getty Images/AFP/R. Rahman

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এই প্রথম একজন পাকিস্তানি কূটনীতিককে তাদের ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত করে তার ছবি ছাপিয়ে তার সম্পর্কে খোঁজখবর করছে৷ ঐ কূটনীতিকের নাম আমির জুবের সিদ্দিকি৷ তিনি শ্রীলংকার পাকিস্তানি হাইকমিশনে ভিসা কাউন্সিলর পদে থাকলেও আদতে তিনি নাকি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার৷ তাকে এবং আরও দু'জন পাকিস্তানি অফিসার ২৬/১১'র ধাঁচে দক্ষিণ ভারতে মার্কিন ও ইসরায়েলি কনস্যুলেট এবং ভারতের বিভিন্ন সেনা,  নৌ ঘাঁটি এবং পরমাণু কেন্দ্রের ওপর বড় রকমের হামলা চালাবার ছক কষেছিল৷ এমনটাই অভিযোগ ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার৷ এই কাজে ভাড়া করা হয়েছিল শ্রীলংকার নাগরিক মোহাম্মদ শাকির হোসেন, অরুণ সেলভেরাজ, শিবাবালান এবং থামিম আন্সারিকে৷ তাদের মাধ্যমেই এই কাজ হাসিল করার ছক ছিল৷

জেরার মুখে শাকির স্বীকার করে যে, পাক-কূটনীতিক সিদ্দিকি ভারতের শীর্ষ সেনাকর্তাদের ল্যাপটপ চুরি করতে বলেছিলেন৷ তাদের দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় জাল নোট৷ বলা হয়েছিল, বিশাখাপত্তনমে পূর্বাঞ্চলীয় নৌ সদর দপ্তর এবং বিভিন্ন স্থানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ঘাঁটিসহ চেন্নাইয়ের মার্কিন কনস্যুলেট এবং ব্যাঙ্গালুরুর ইসরায়েলি কনস্যুলেটে অন্তর্ঘাতমূলক হামলা চালাতে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস মোকাবিলায় বিভিন্ন তথ্য ও খোঁজখবর দিয়ে নতুনদিল্লিকে সাহায্য করায় এনআইএর তদন্তের কাজে যথেষ্ট সহায়ক হয়৷

কনক সরকার

 চেন্নাইয়ের মার্কিন কনস্যুলেটে হামলার সাংকেতিক নাম ছিল ‘ওয়েডিং হল'৷ যারা এই হামলা চালাবে তাদের সাংকেতিক নাম ছিল কুক (রাঁধুনি)৷ সিদ্দিকির অফিসাররাই এই সাংকেতিক কোডগুলি জানিয়েছিল৷ এদের সমুদ্রপথে মালদ্বীপের দিক থেকে ভারতের পশ্চিম উপকূল দিয়ে অনুপ্রবেশ করার পরিকল্পনা ছিল৷ ধৃত এবং অন্যতম অভিযুক্ত মোহাম্মদ শাকির হুসেইন শ্রীলংকায় বিভিন্ন পাকিস্তানি অফিসারের সঙ্গে গোপন বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণও দিয়ে জানায়, ঐ কাজে দুজন আত্মঘাতি জঙ্গির (ফিদায়েন) সঙ্গে সে মিলিত হয়েছিল ব্যাংককে৷ তাদের ভারতে এনে চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু, মুম্বাই ও কোলকাতাসহ একাধিক শহরে রেকি করে৷ স্পাইস (মশলা) ছিল বোমার সাংকেতিক নাম৷ শাহজি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে শাকিবের কথা হতো৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঐ দুইজন একই ব্যক্তি৷

কিভাবে এই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারে এনআইএ ? ২০১৪ সালের এপ্রিলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে মোহাম্মদ শাকির হুসেন নামে শ্রীলংকার এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করে তামিলনাড়ুর পুলিশ৷ বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয় শাকির হুসেন৷

সন্ত্রাস মোকাবিলায় মার্কিন সহযোগিতা কি দিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যে নতুন আঁতাত গড়ে তোলার ইঙ্গিত? এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কনক সরকার ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘পরিবর্তন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসার পর৷ তিনি পূর্বেকার নীতিতে এনেছেন পরিবর্তন৷ আগেকার নীতিতে পাকিস্তানকে নানাভাবে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হতো৷ বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনে৷ রণকৌশলগত কারণই মুখ্য ছিল৷ নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারেন, সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান আগ্রহী নয়, বিশেষ করে ভারতের ক্ষেত্রে৷'' এই পরিবর্তন কি তাহলে নতুন আঁতাত নয় ? অধ্যাপক সরকারের মতে, ‘‘এটা ঠিক আঁতাত নয়৷ বলা যায়, ন্যাচারাল অ্যালায়েন্স৷ ভারত আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক বন্ধুত্ব৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি সেটাই বলেছেন৷ উভয় দেশই গণতান্ত্রিক এবং শান্তি ও উন্নয়নই উভয় দেশের লক্ষ্য৷'' 

আইএনএ ইন্টারপোলের কাছে সিদ্দিকির বিরুদ্ধে যখন রেড কর্নার নোটিশ জারি করার জন্য তোড়জোডর করছিল, তখন পাকিস্তান সরকার এদের কলম্বো থেকে ইসলামাবাদে ফিরিয়ে নিয়ে যায়৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে এনআইএ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি করলেও অন্য তিনজন অফিসারকে চিহ্নিত করতে পারেনি৷ ঐসব অফিসার ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কলম্বোয় কাজ করেছেন৷

২৬/১১'র মুম্বাই হামলার জঙ্গিরাও জলপথে অনুপ্রবেশ করে মুম্বাই উপকূলে৷ লস্কর-ই-তৈয়বাসহ পাকিস্তানভিত্তিক ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর ১০জন সন্ত্রাসী মুম্বাইয়ের ১২টি জায়গায় ধারাবাহিক হামলা চালায়৷ ব্যবহার করে আরডিএক্স, গ্রেনেড এবং একে-৪৭ রাইফেল৷ হামলায় নিহত হয় ১৬৮জন, আহত হন ৩০৮ জন৷ জীবিত ধরা পড়ে আজমল কাসাব৷ পরে বিচারে তার ফাঁসি হয়৷ এই হামলার নেপথ্য খলনায়ক ছিল পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার জাকির হোসেন লাখভি৷ 

মুম্বাই হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকার সমুদ্র উপকূলে নজরদারি এবং সুরক্ষা বাড়াতে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়৷ কিন্তু বেশির ভাগ সুরক্ষা প্রকল্প এখনও শেষ হয়নি, যেটা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে৷ গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, গোয়ার সমুদ্র সৈকতে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে বলে অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করেছে উপকূল রক্ষীবাহিনী৷ শুধু গোয়া নয়, পুরো পশ্চিম উপকূলে মত্সজীবিদের ট্রলারগুলিকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়৷ ২৬/১১র হামলায় সন্ত্রাসীরা ট্রলার ছিনতাই করেই মুম্বাইয়ে অনুপ্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য