1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে স্কুলের খাবার নিয়েও দুর্নীতি?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩১ আগস্ট ২০১৯

​​​​​​​বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল পড়ুয়াদের জন্য মিড-ডে মিলের মেনু ঠিক করে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ সপ্তাহে একদিনই ডিম বা মাছ খেতে পাবে ছেলেমেয়েরা৷ প্রশ্ন উঠছে, এতে কি পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে তারা?

https://p.dw.com/p/3OnGz
প্রশ্ন উঠেছে, সপ্তাহে দুদিন ডিম বা মাছ দেওয়া হলে কি বাড়ন্ত ছেলেমেয়েরা পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে?ছবি: DW/P. Samanta

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প অনুযায়ী ভারতের প্রাথমিক স্কুলে দুপুরের খাবার দেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের৷ ১৯৯৫ সালে এই প্রকল্পের সূচনা হয়৷ পরে প্রকল্পটি আরও সম্প্রসারিত হয়েছে স্কুলছুট ছেলেমেয়ের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে৷ গরিব পরিবারের পড়ুয়ারা খাবারের টানে স্কুলে আসবে, পড়াশোনা করবে, শিক্ষার প্রসার ঘটবে, এমনই ছিল ভাবনায়৷ স্কুলছুটের সংখ্যা কমায় এই প্রকল্প কার্যকর হয়েছে বলা যায়৷ কিন্তু, মিড-ডে মিলের আয়োজন নিয়ে দুর্নীতি ও পুষ্টির প্রশ্ন সামনে এসেছে৷ এই সংক্রান্ত অভিযোগ আগেও উঠেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি একটি স্কুলের ঘটনায় বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে৷ তড়িঘড়ি রাজ্য সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে৷

হুগলি জেলার চুঁচুড়ার বালিকা বাণীমন্দির স্কুলের ঘটনা সামনে আসার পরেই হইচই শুরু হয়৷ বিজেপির অভিযোগ, এই স্কুলের পড়ুয়াদের ভাতের সঙ্গে নুন বা ফ্যান দেওয়া হচ্ছে৷ মহকুমার প্রশাসক দ্রুত স্কুলে যান সমস্যা খতিয়ে দেখতে৷ বর্তমান ও প্রাক্তন টিচার ইন চার্জকে সাসপেন্ড করা হয়৷ পড়ুয়াদের ডিম-ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়৷ হস্তক্ষেপ করেন জেলা প্রশাসক৷ তাঁর নির্দেশে জেলার স্কুলে স্কুলে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা৷

এই ধরনের অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাঝেমধ্যেই মিড-ডে মিলের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ সামনে আসছে৷ সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলে ভাতের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের নুন দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়৷ সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ প্রশ্ন ওঠে, যে দেশ প্রতিরক্ষা খাতে প্রতি বাজেটে বরাদ্দ বাড়ায়, তারা গরিব পরিবারের শিশুদের জন্য ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না?

ঈপ্সিতা চক্রবর্তী

এ নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মিড-ডে মিল নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীর জন্য মাথাপিছু ৪ টাকা ৩১ পয়সা পাওয়া যায়৷ তা দিয়ে কী করে ডিম খাওয়ানো সম্ভব ? ভাত-ডাল ও একটা তরকারি দিয়ে পেট ভরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি৷ এই রাজ্যে একটি ডিমের খুচরো মূল্য ৫-৬ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে৷ 

শিশুরা যাতে খেতে পায় সেজন্য নিয়মিত নজরদারির উপর জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ তড়িঘড়ি তৈরি হয়েছে নতুন খাদ্য তালিকাও৷ সপ্তাহে ছয় দিনই পড়ুয়ারা ভাত-ডাল পাবে৷ এর সঙ্গে সোমবার আলু ও অন্যান্য সব্জির তরকারি, মঙ্গলবার ডিম বা মাছ, বুধবার তরকারি, বৃহস্পতিবার ডিম বা মাছ, শুক্রবার আলুর দম, শনিবার সয়াবিনের তরকারি পাতে পড়বে৷

ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি৷ অভিযোগ, বরাদ্দের অভাবে নয়, স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির দুর্নীতিতে খাবারের টাকা বেহাত হয়ে যাচ্ছে৷ দুদিন আগেই বীরভূমের নলহাটির একটি হাইমাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে পড়ুয়ারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলি হোসেনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়৷ ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে মাদ্রাসা কয়েকদিন ছুটি ছিল৷ অথচ সেই দিনগুলির মিড-ডে মিলের খরচ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে৷ স্কুলের নথিপত্র ঘেঁটেও এমন প্রমাণ মিলেছে৷ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক৷

এ নিয়ে শোরগোলের মধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, সপ্তাহে দুদিন ডিম বা মাছ দেওয়া হলে কি বাড়ন্ত ছেলেমেয়েরা পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে? কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ, ইন্ডিয়ান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঈপ্সিতা চক্রবর্তীর মতে, "যে টাকা বরাদ্দ করা হয় মাথাপিছু, তাতে পূর্ণাঙ্গ পুষ্টি সম্ভব নয়৷ চাল ও ডালে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন আছে৷ মাছ অনেকটা দামি৷ যদি সপ্তাহে দুদিন ডিমের সঙ্গে অন্য দুদিন সয়াবিনও দেওয়া যায়, তাহলে অনেকটা পুষ্টি পাবে ওরা৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য