পশ্চিমবঙ্গে বাম জোটের ভোট-কৌশল
পশ্চিমবঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট গঠন করে লড়ছে বাম ও কংগ্রেস। সঙ্গে আছে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ। কী ভোট-কৌশল নিয়েছে তারা।
এই প্রথম জোট করে
পশ্চিমবঙ্গে এর আগে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক জোট হয়নি। এবার হয়েছে। ব্রিগেডের জনসভায় দেখা গেছে জোটের ছবি। সেই ব্রিগেডে সীতারাম ইয়েচুরি ভাষণ দিচ্ছেন।
বার্তা দেয়ার জন্য
এর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করলেও ভোটের প্রচারে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের এক মঞ্চে দেখা যায়নি। গত বিধানসভা নির্বাচনে একেবারে শেষে রাহুল গান্ধীর জনসভায় ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফলে সমঝোতার বার্তা ঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। তাতে ক্ষতি হয়েছে বাম-কংগ্রেসের। তাই এবার আঁটঘাট বেঁধে লড়াই।
সঙ্গী আইএসএফ
নতুন দল তৈরি করেছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। দলের নাম ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। সিদ্দিকির দলকে জোটে নিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। কারণ, তারা মুসলিম ভোট ভাগ হতে দিতে চায় না। মুসলিম ভোট পাওয়ার উপরই নির্ভর করছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বামেদের জয়ের সম্ভাবনা।
সিদ্দিকিকে নিয়ে বিতর্ক
আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। তুলেছেন আনন্দ শর্মার মতো কিছু নেতা। তারা বলছেন, সিদ্দিকি কট্টরপন্থি। তাই তার সঙ্গে জোট কংগ্রেসের আদর্শের বিরোধী। তার জবাব দিয়েছেন অধীর। ঘটনা হলো, সিদ্দিকি আলাদা লড়লে মুসলিম ভোট কাটতে পারেন। তাই নিজেদের স্বার্থেই কংগ্রেস তার সঙ্গে জোটে গেছে।
সকলকে সঙ্গে নিয়ে
বাম নেতারা এবার সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চান। তাই ব্রিগেডের সভায় সব দলের নেতা ভাষণ দিয়েছেন। এমনকী জোটের আসন ঘোষণার কাজও তারা একসঙ্গে করতে চান। তাই সিপিএম সহ বাম দলগুলির এবং আইএসএফের প্রার্থী ঘোষণার সময়ও কংগ্রেসের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিকল্প হওয়ার লক্ষ্যে
বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট তৃণমূল ও বিজেপি-র বিকল্প হতে চায়। তারা যে শক্তিশালী তা বোঝানোর চেষ্টা চলছে। গতবার বামেরা কংগ্রেসের থেকেও কম আসন পেয়েছিল। তাই বিধানসভায় বিরোধী নেতার পদ পেয়েছিলেন কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। এবার তারা আসন বাড়াতে চাইছে। তৃণমূল ও বিজেপি-র বিকল্প হতে চাইছে জোট।
বামেদের নতুন মুখ
বাম প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। একগুচ্ছ তরুণ নেতা ও নেত্রীকে প্রার্থী করা হচ্ছে। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা নেতা-নেত্রীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই উদ্যোগ বামেদের।
কংগ্রেসে অধীরই প্রধান
কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় এবং আসন জেতানোর ক্ষমতার নিরিখে সব চেয়ে এগিয়ে অধীর চৌধুরী। তিনি নিজের জেলা মুর্শিদাবাদে সব চেয়ে জনপ্রিয় নেতা। অন্য জেলাতেও তার জনসভায় ভালো ভিড় হচ্ছে। কংগ্রেস প্রার্থীদের জেতানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিতে হচ্ছে অধীরকে।
জোট কি পারবে?
বামেদের নেতৃত্বে সংযুক্ত মোর্চা কি সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবে? হারাতে পারবে বিজেপি ও তৃণমূলকে? বামেদের ডাকা ব্রিগেডের সভায় প্রচুর ভিড় হয়েছে। তা দেখেই জোট ভোটে সাফল্য পাবে এমন কথা বলা যায় না। জোটের সামনে খুবই কঠিন চ্যালেঞ্জ। তৃণমূলের প্রধান বিকল্প এখন বিজেপি। এই দুই দলকে পিছনে ফেলে জোট এগিয়ে যেতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তবে ওই দুই দল গরিষ্ঠতা না পেলে, তখন জোটের গুরুত্ব খুবই বেড়ে যাবে।