1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌পশ্চিমবঙ্গে দলিত সাহিত্য বিতর্ক

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

দলিত সাহিত্যের জন্য আলাদা আকাদেমি গড়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ কিন্তু সে নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ দরকার ছিল, বলছেন নবগঠিত আকাদেমির সভাপতি৷ অন্যস্বর বলছে, সবার আগে সাহিত্য তো হতে হবে!‌

https://p.dw.com/p/3igHH
ছবি: Twisha

দলিত সাহিত্যের জন্যে আলাদা আকাদেমি হল৷ এবার ব্রাহ্মণদের জন্যেও হোক৷ তার পর কায়স্থ, বা নমশূদ্রদের জন্যে৷ নিজের ফেসবুক পোস্টে মজা করেই লিখেছিলেন বাংলার এক বিশিষ্ট সাহিত্যিক৷ ব্যাপক প্রতিবাদ হল তার৷ মূলত সাহিত্যে বিভাজনের নীতিকে খোঁচা মেরে লেখা পোস্টটি তার প্রাসঙ্গিকতা হারাল এবং বিষয়টা ক্রমশ এতটাই গুরুতর হয়ে উঠল, যে চাপের মুখে ওই বিতর্কিত পোস্ট সরাতে বাধ্য হলেন সেই সাহিত্যিক৷ কিন্তু এসবের মধ্যে থেকেই উঠে এল একটা জরুরি প্রশ্ন৷ দলিত সাহিত্যকে এভাবে আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির কি আদৌ দরকার ছিল?‌নাকি এটা ২০২১ ভোটের আগে শাসকদলের চেষ্টা দলিত ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করার?‌

কেউ আমাদের দিকে ফিরে তাকায়নি: মনোরঞ্জন ব্যাপারি, দলিত সাহিত্য আকাদেমির সভাপতি

একটা সাধারণ সাহিত্য আকাদেমির পাশাপাশি একটা দলিত সাহিত্য আকাদেমির কি প্রয়োজন ছিল? নবগঠিত এই আকাদেমির যিনি সভাপতি মনোনীত হয়েছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিমান দলিত সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারি নির্দ্বিধায় বললেন, ‘‌‘‌হ্যাঁ, মনে করি৷ কেন মনে করি, এই যে মূল সাহিত্য যেটা রয়েছে, সেইটা এমনভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছে উচ্চবর্ণের লোকেরা, যে সেই জায়গায় আমাদের মতো নিচু জাতের, নিম্নবর্ণের, অচ্ছ্যুৎ, অস্পৃশ্যদের কোনও জায়গা দেওয়া হয় না৷ বর্ণবাদ এত ভয়ংকর!‌ এরা খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের আটকায়৷ আমি, মনোরঞ্জন ব্যাপারি, আজ পর্যন্ত বাংলার কোনও বড় কাগজে আমার কোনও লেখা ছাপা হয়নি, কোনও বড় প্রকাশক আমার কোনও বই ছাপেনি৷ আর এই যে সাহিত্য সংক্রান্ত যে সব প্রতিষ্ঠান, কেউ আমাদের দিকে সেভাবে ফিরে তাকায়নি৷ আমাদের যদি নিজেদের একটা সংস্থা থাকে, আমাদের দলিত সাহিত্যকে আমরা নিজেরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে চেষ্টা করতে পারব৷ ওদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না!‌’’

দলিত সাহিত্য আকাদেমি অনেক রাজ্যেই আছে: নলিনী বেরা, সাহিত্যিক

বাংলা ভাষার আরেক খ্যাতনামা সাহিত্যিক, যিনি নিজে অন্ত্যজ শ্রেণি থেকে উঠে এসেছেন, এখন যথেষ্ট সমাদৃত, সেই নলিনী বেরা কিন্তু এমন ঘটনা মনে করতে পারলেন না যে, তাঁর পদবি, বা বংশ–পরিচয়ের কারণে সাহিত্যের আসরে তাঁকে অপাংক্তেয় হতে হয়েছে৷ যদিও একটি ঘটনা তিনি ভোলেননি, যেখানে এক অগ্রজ সাহিত্যিক, হয়ত পরিহাসছলেই তাঁকে বলেছিলেন, বাংলা সাহিত্যে নাম করতে গেলে তোমাকে পদবি বদলাতে হবে!‌অবশ্য আরেক বর্ষীয়ান সাহিত্যিক সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলেছিলেন, যে লিখে সুনাম হওয়ার থাকলে, এই পদবিতেই হবে!
বাংলায় আলাদা দলিত সাহিত্য আকাদেমি নিয়ে‌ নলিনী বেরার বক্তব্য, ‘‌‘দলিত সাহিত্য আকাদেমি অনেক রাজ্যেই আছে৷ অনেক আগে থেকে৷ বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে, গুজরাটে অনেক আগে থেকেই আছে৷ কিন্তু আমাদের বাংলায় এমনটা ছিল না৷ নতুনদের মধ্যে, বিশেষ করে অন্ত্যজ শ্রেণি থেকে, বা তথাকথিক সাব–অল্টার্ন গ্রুপ থেকে এখন লেখকরা কিছু কিছু উঠে আসছেন৷’’

তা হলে দলিত লেখকদের জন্য আলাদা সাহিত্য আকাদেমির দরকার ছিল, না ছিল না?‌ নলিনী বেরা–র সোজাসাপ্টা জবাব, ‘‌‘আমাদের রাজ্যে কুর্মি ভাষা নিয়ে কুর্মি উন্নয়ন পর্ষদ হয়েছে, রাজবংশী ভাষা নিয়ে সাহিত্য উন্নয়ন পরিষদ হয়েছে৷ আর উর্দু আকাদেমি তো ছিলই৷ বহুদিন আগে থেকেই উর্দু সাহিত্য আকাদেমি আছে এই বাংলাতে৷ কিন্তু তাতে কতজন উর্দু সাহিত্যিক উঠে এসেছেন, আমি তো দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখতেও পাইনি৷’’

যদিও নলিনী বেরার মনে হচ্ছে, দলিত সাহিত্যের আলাদা আকাদেমি করে খারাপ কিছু হয়নি৷ একটা ছাতার তলায় হয়ত এমনকিছু মানুষজন আসবেন, যাঁদের লেখায় হয়ত সাব–অল্টার্ন কণ্ঠস্বর জায়গা পাবে৷ কিন্তু সবার আগে সেটা সাহিত্য হতে হবে৷

চণ্ডালের সন্তান এখন জনপ্রিয় লেখক