1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে কেন একের পর এক চটকল বন্ধ হচ্ছে?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ জানুয়ারি ২০২২

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পাটকল শ্রমিকদের নতুন বছরের শুরুটা ভালো হয়নি৷ মঙ্গলবার সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়েছে হুগলির চাঁপদানির নর্থব্রুক জুটমিল৷ সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন জেলার একাধিক চটকল৷ কেন এই পরিস্থিতি?

https://p.dw.com/p/45U37
মিল বন্ধের জন্য অনেক সময় কাঁচামালের যোগানে ঘাটতিকে দায়ী করা হয়৷ ছবি: Payel Samanta/DW

অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশদের উদ্যোগে ভাগীরথী হুগলি নদীর পাড়ে তৈরি হয়েছিল একের পর এক জুটমিল৷ কিন্তু এখন এগুলির অবস্থা মোটেই ভালো নয়৷ গত বছর থেকে হুগলি নদীর পাড়ে একের পর এক চটকল বন্ধ হয়েছে৷ ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ, রিষড়ার ওয়েলিংটন, শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিল, হাওড়ার ডেলটা জুটমিল, উঃ ২৪ পরগনার নৈহাটি জুটমিল, টিটাগড় জুটমিল, চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এই নিয়ে বিভিন্ন দলের শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে ফের চাপানউতোর শুরু হয়েছে৷ তবে এই ছবিটা নতুন নয়৷ কয়েকমাস ঠিকঠাক চলার পর এভাবেই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় চটকল৷

পশ্চিমবঙ্গে চট শিল্পে শ্রমিকের সংখ্যা আড়াই লাখের মতো৷ বছরের বিভিন্ন সময় তারা হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করেন, আজ থেকে মিল বন্ধ৷ গেটের বাইরে লটকানো বিজ্ঞপ্তি দেখে জানতে পারেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য উৎপাদন হবে না৷ মিল বন্ধের জন্য অনেক সময় কাঁচামালের যোগানে ঘাটতিকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, চট শিল্পে বস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা পাটের সরবরাহ ঠিকঠাক নেই৷ এ কারণে গত বছর এপ্রিল-মে মাসে একাধিক জুটমিল বন্ধ হয়েছিল৷ 

পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে, অথচ চটকল একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে: অনাদি সাহু

এই অজুহাতকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী ও বাম শ্রমিক নেতা অনাদি সাহু বলেন, ‘‘জুলাইয়ে নতুন পাট বাজারে এসেছে৷ এবার পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে৷ অথচ চটকল একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ এটা শুধু আড়াই লাখ শ্রমিকের সমস্যা নয়৷ চল্লিশ লাখ পাট চাষিও সংকটে পড়ছেন৷’’ তার অভিযোগ, আদতে পাটের কালোবাজারি চলছে৷ কুইন্টাল প্রতি নির্ধারিত দামে পাট বিক্রি হচ্ছে না৷ কালোবাজারিরা চাষিদের কাছ থেকে কিনে পাট মজুত রেখে দিচ্ছে৷

চটশিল্পে সংকটের জন্য এর প্রাক-আধুনিক পরিকাঠামোকে অনেকে দায়ী করেন৷ অর্থনীতিবীদ রতন খাসনবিশ বলেন, ‘‘ব্রিটিশদের পর পাট শিল্প যোগ্য হাতে পড়েনি৷ প্রকৃত শিল্পপতি যাঁদের হাতে পুঁজি আছে তাঁরা এই শিল্পে বিনিয়োগ করেননি৷ ফলে মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে রয়ে গিয়েছে এই শিল্প৷ এঁরা জুট মিলের আধুনিকীকরণ করেননি৷ ঠিকঠাক পুঁজির যোগান দেননি৷ উলট চটকলের সম্পদ ব্যবহার বা বিক্রি করে চটজলদি টাকা রোজগার করার চেষ্টা করেছেন৷’’

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার অবশ্য অতিমারিকে দায়ী করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পণ্য বাণিজ্যের যাতায়াত কমে গিয়েছে করোনাকালে৷ ফলে প্যাকেজিং বস্তুর চাহিদা কমে যাচ্ছে৷ তাছাড়া বিকল্প সামগ্রী আগমনের জন্যও জুটমিল ধুঁকছে৷''

বাস্তবিকই সময় পরিবর্তনের সঙ্গে চটের বস্তার বদলে কৃত্রিম তন্তু বা সিন্থেটিকের সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে৷ তাহলে কি চাহিদার অভাবে ধুঁকছে চট শিল্প? অনাদি সাহু বলেন, ‘‘পাটের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই৷ বাজারে যা চাহিদা আছে সেটাই পূরণ করা যায় না৷ দেশে আইন আছে, ধান গম চিনির মতো সামগ্রী চটের বস্তাতে প্যাকেজিং করতে হবে৷ কেন্দ্র বা বিভিন্ন রাজ্য সরকার বস্তার যে বরাত দেয়, সেটাই সরবরাহ করতে পারে না চটকলগুলি৷’’

ব্রিটিশদের পর পাট শিল্প যোগ্য হাতে পড়েনি: রতন খাসনবিশ

প্রাচীন পরিকাঠামো ও পরিচালনগত অব্যবস্থার জেরে শিল্প যখন মৃতপ্রায়, তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন শ্রমিকরা৷ একজন নতুন শ্রমিক কাজ শুরু করার সময় ৪০০ টাকার কম দৈনিক মজুরি পান৷ সাধারণভাবে একজন রিকশাচালক বা নির্মাণ শ্রমিকের তুলনায় এই রোজগার কম৷ চট শিল্পের ২১টি শ্রমিক সংগঠন দাবি তুলতে চলেছে, দৈনিক হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ধার্য হোক৷ অর্থাৎ ২৬ দিন কাজ করলে ২৬ হাজার টাকা একজন নতুন শ্রমিকের প্রাপ্য হওয়া উচিত৷ শ্রমিক নেতৃত্বের অভিযোগ, মালিকপক্ষ অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ঠিক সময়ে দেন না৷ এর মধ্যে মাঝে মাঝে মিল বন্ধ করে দেওয়া হলে আরো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন শ্রমিকরা৷ তাদের বসবাসের জায়গাও বহু পুরনো, তাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি৷ 

রাজ্যে বাম সরকার বিদায় নিয়ে তৃণমূলের এক দশকের শাসন হয়ে গিয়েছে৷ কেন্দ্রে এসেছে বিভিন্ন দলের সরকার৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদল হয়নি৷ রতন খাসনবিশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের মানুষ৷ গুজরাটের সিন্থেটিক তন্তুর লবি বেশ সক্রিয়৷ তারা চাইবে না চট শিল্প ফের উজ্জীবিত হোক৷ তাদের লক্ষ্য বিকল্প সিন্থেটিক সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি৷’’ এর পাশাপাশি জুট মিলের মালিক পক্ষ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী নন বলে সঙ্কট আরো গভীর হচ্ছে বলে দাবি বিশ্লেষকদের৷ শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷

২০১৮ সালের ছবিঘর

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য