1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্শে ও ফলক্সভাগেন এক সংস্থায় পরিণত হতে চলেছে

৮ মে ২০০৯

অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে অনেক বহুজাতিক সংস্থা অতীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ জার্মানির দুই গাড়ি নির্মাণ সংস্থা- ফলক্সভাগেন ও পর্শেও সেই পথেই এগোচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/Hlzf
ছবি: picture-alliance/ dpa

প্রেক্ষাপট

গোটা বিশ্বেই ফলক্সভাগেন ও পর্শে গাড়ির সুনাম রয়েছে – তবে একেবারে ভিন্ন কারণে৷ ‘ফলক্সভাগেন' শব্দটির অর্থই জনগণ বা জনতার গাড়ি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে আবার যখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গতি বাড়তে শুরু করে, তখনই ফলক্সভাগেন অপেক্ষাকৃত সস্তার গাড়ি বাজারে এনেছিল৷ অনেক পরিবারেরই সেই গাড়ি কেনার সামর্থ্য ছিল৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমৃদ্ধির প্রতীক হয়ে পড়ে ফলক্সভাগেন৷ অন্যদিকে পর্শে হল দামী ও উন্নত মানের ‘স্পোর্টস কার'এর জন্য বিখ্যাত৷ কারখানায় প্রতিটি গাড়ি তৈরি হয় ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার ফলক্সভাগেন ও পর্শে মিলে একটি সংস্থার জন্ম হলে সেই সংস্থার হাতে বাজারের প্রায় সব অংশেরই চাবিকাঠি এসে যাবে – যার ফলে ভবিষ্যতে হয়তো গোটা বিশ্বের গাড়ির বাজারের একটা বিশাল অংশ এই সংস্থারই হাতে চলে আসতে পারে৷ সেইসঙ্গে ভুলে গেলে চলবে না, অনেক আগেই ফলক্সভাগেন চেক প্রজাতন্ত্রের স্কোডা গাড়ির সংস্থা কিনে নিয়েছে৷ ফলক্সভাগেনের থেকেও কম দামে পাওয়া যায় স্কোডা গাড়ি৷ ফলে বাজারের কোনো অংশই আর ছেড়ে দেবে না নতুন এই সংস্থা৷ উল্লেখ্য, দুই সংস্থার অধীনে সব মিলিয়ে ১০টি ব্র্যান্ডের গাড়ি রয়েছে৷

Volkswagen VW 411
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে আবার যখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গতি বাড়তে শুরু করে, তখনই ফলক্সভাগেন অপেক্ষাকৃত সস্তার গাড়ি বাজারে এনেছিল৷ছবি: picture-alliance/dpa

মন্দার ফলে নতুন পরিস্থিতি

অর্থনৈতিক মন্দা ঠিকমতো শুরু হওয়ার আগে মনে হয়েছিল, পর্শে সরাসরি ফলক্সভাগেন অধিগ্রহণ করতে চলেছে৷ বিশাল মুনাফায় চলা পর্শের সেই আর্থিক সঙ্গতিও ছিল৷ কিন্তু পারিবারিক মালিকানায় চালিত এই দুই সংস্থা যৌথ মালিকানা বা ফিউশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এর প্রধান কারণ হল, ফলক্সভাগেন সংস্থার ৫১ শতাংশ শেয়ার এযাবৎ পর্শের হাতেই ছিল৷ কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার ফলে সেই শেয়ারের মূল্য এতই পড়ে যায়, যে পর্শে মুনাফার বদলে এখন প্রায় ৯০০ কোটি ইউরো লোকসানে চলছে৷

ভবিষ্যতের রূপরেখা

এই ফিউশনের ফলে দুই সংস্থার কাজকর্মের উপর কী প্রভাব পড়বে? পর্শে জানিয়ে দিয়েছে, যে ভবিষ্যতেও ঐ সংস্থা তার নিজস্বতা হারাবে না৷ আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে দুই সংস্থার পরিচালকমণ্ডলী খুঁটিনাটি বিষয়গুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে বলে স্থির করা হয়েছে৷ তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শুধু দুই সংস্থার মালিকদের উদ্দেশ্যই যথেষ্ট নয়৷ যেমন ফলক্সভাগেন সংস্থার বেশ কিছু শেয়ার রয়েছে জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের হাতে৷ অর্থাৎ রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব নয়৷ পর্শের কারখানা বাডেন ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের রাজধানী স্টুটগার্ট শহরে৷ সেই রাজ্য সরকার অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷ নতুন সংস্থার সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত হবে, তাও স্পষ্ট নয়৷ পর্শে সংস্থায় প্রায় ১২,২০০ কর্মী কাজ করছেন৷ ভল্ফসবুর্গ শহরে ফলক্সভাগেন কারখানায় শ্রমিক ও কর্মীদের সংখ্যা ৩৭০,০০০৷ তাঁদের ভবিষ্যৎ ও স্বার্থ রক্ষা করতে শ্রমিক সংগঠন ও কর্মী সভাও তৎপর হয়ে উঠেছে৷ সব পক্ষই বিশাল নতুন সংস্থার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সামিল হতে চায়৷

Flash-Galerie Porsche
পর্শে হল দামী ও উন্নত মানের ‘স্পোর্টস কার'এর জন্য বিখ্যাত৷ছবি: picture-alliance/ dpa

অর্থনৈতিক সঙ্কটের চাপে পড়ে দুই সংস্থা ফিউশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে এই সিদ্ধান্তের পরিণতি কী হবে, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ বৃহস্পতিবার পর্শে সংস্থার প্রধান ভেন্ডেলিন ভিডেকিন্ট কর্মীদের সামনে বলেছেন, ‘‘এই বিবাহ স্বর্গে স্থির হয় নি – স্বার্থের কারণেই বিবাহ করতে হচ্ছে৷'' এই মন্তব্যের ফলে ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পরিবারের মতবিরোধের আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷

প্রতিবেদক: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক