1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে লি

২ ডিসেম্বর ২০২০

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সব দায় কি সরকারের উপর পড়া উচিত? ফিনল্যান্ডের ছোট এক শহরের মানুষ অনেকদিন ধরে নিজস্ব প্রচেষ্টায় কার্বন নির্গমন কমিয়ে পরিবেশবান্ধব পথে এগিয়ে চলেছেন৷

https://p.dw.com/p/3m6Kt
ফিনল্যান্ডের লি শহর
ছবি: NDR

ফিনল্যান্ডের উত্তরে বাল্টিক সাগর উপকূলের কাছে সাউনার পর নদীর শীতল পানিতে চট করে ডুব মারার মজাই আলাদা! পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধি লিনা ভুয়োটোভেসি বলেন, ‘‘শরীর-মন খুবই তাজা করে তোলে৷ পানিতে নিজেকে প্রকৃতির অংশ বলে মনে হয়৷ আমরা একেবারে প্রকৃতির মাঝে বাস করি৷ আমরা পানি উপভোগ করি, গাছ থেকে বেরিফল পাড়ি, শিকার করতে যাই৷ এখানে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করা আমাদের জন্য জরুরি৷ জঙ্গল ও প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগও এর চাবিকাঠি৷’’

নিজস্ব উদ্যোগে পরিবেশ সংরক্ষণ

শহরটির নাম লি৷ শহরের চরিত্রও নামের মতো সহজসরল৷ কয়েকটা রাস্তা, দুটি সুপারমার্কেট এবং জনসংখ্যা দশ হাজারেরও কম৷ লি গোটা ইউরোপের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব এলাকাগুলির অন্যতম৷ সেখানে কার্বন নির্গমন ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে৷ লিনা বলেন, ‘‘লি শহরে আমরা জানি যে জলবায়ু পরিবর্তন আসতে চলেছে না, ইতোমধ্যেই এসে গেছে৷ আমরা এটাও বুঝেছি যে পরিবর্তনের দায় শুধু উপর মহলে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, আমাদেরকেও সেই পরিবর্তনের অংশ হতে হবে৷’’

ফিনল্যান্ডের শিশু
ফিনল্যান্ডের কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলে শিশু-কিশোরদের জলবায়ু সংরক্ষণ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়ছবি: DW

সবাই যাতে নিজস্ব দায়িত্ব পালন করে, সেই প্রণোদনা তৈরি করাই ছিল এই সাফল্যের চাবিকাঠি৷ ফিনল্যান্ডের কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলে শিশু-কিশোরদের জলবায়ু সংরক্ষণ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়৷ কম বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহারের লাগাতার প্রয়াস এ ক্ষেত্রে অবদান রাখে বৈকি৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিনা বলেন, ‘‘ফিফটি-ফিফটি প্রকল্প দিয়ে সবকিছু শুরু হয়েছিল৷ তিনটি স্কুলে আমরা সেটি চালিয়ে দেখেছিলাম৷ শিশুরা পানি ও বিদ্যুতের ব্যবহারের উপর নজর রাখছিল৷ স্কুলের জন্য যেটুকু সাশ্রয় করেছিল, তার অর্ধেক অর্থ তারা হাতে পেয়েছিল৷ সেই টাকা দিয়ে তারা কিছু কিনতে পারে৷ এই প্রকল্প এতটাই সফল হয়েছিল, যে লি শহরের সব স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনে সেটি ছড়িয়ে দেওয়া হলো৷’’

গত দশ বছর ধরে লি শহরের বাসিন্দারা নিজেদের জ্বালানির ব্যবহার অর্ধেককমিয়ে এনেছে৷ শিশুরা টাকা বাঁচিয়ে খেলনা, গাছপালা, এমনকি একটা পুল টেবিলও কিনেছে৷

প্রকৃতির মাঝে অবস্থানের সুবিধা

লি শহরের চারিপাশে নির্মল প্রকৃতি এবং ইউরোপের অন্যতম বড় জলাভূমি রয়েছে৷ অনেক শতাব্দী ধরে সেখানে জ্বালানির উৎস হিসেবে পিট বা ঘাস জ্বালানো হতো৷ সেখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে৷ পিট সংরক্ষণ করলে সেই গ্যাস বায়ুমণ্ডল থেকে দূরে রাখা যায়৷ ইউহা হুলকো লি শহরের মানুষ এবং ব্যবসায়ী৷ তিনি কাছের জলাভূমির বড় অংশ কিনে নিয়ে সেগুলিকে সংরক্ষিত এলাকা করে তুলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষ ও প্রত্যেক পরিবার সাধ্যমতো নিজস্ব দায়িত্ব পালন করলে তবেই পরিবর্তন সম্ভব৷ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করতে হলে ছোটবড় সব রকম পদক্ষেপ নিতে হবে৷’’

বায়ুশক্তির ব্যবহার

গোটা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের টারবাইনগুলির মধ্যে কয়েকটি লি শহরে অবস্থিত৷ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, এমন জ্বালানী শহরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ হিটিং সিস্টেমের জন্য তেল ব্যবহার করা যায় না৷ নিজস্ব বায়ু ও পানির উপর নির্ভর করে চাহিদার তুলনায় দশ গুণ জ্বালানী উৎপাদন করে সেই শহর৷ উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে বছরে ৪০ লাখ ইউরো আয় হয়৷ লি পৌর পরিষদের সদস্য টেইয়ো লিডেস বলেন, ‘‘বায়ুশক্তি নিয়ে আমাদের অনেক আলোচনা হয়েছে, যেমন শব্দদূষণ, গ্রামাঞ্চলে গাছপালার রোগ এবং উইন্ড টারবাইন কীভাবে সামাজিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায়৷’’

একটি আদিম জঙ্গলের বাইরের দিকে ৬০টি নতুন উইন্ড টারবাইন নির্মাণের পরিকল্পনা হচ্ছে৷ গত একশো বছরে সেখানে একটি গাছও কাটা হয় নি৷ জঙ্গলের মালিক ইউহা ভেয়েটাইয়া মনে করেন, উইন্ড টার্বাইন লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়৷ প্রায় ৩০০ মিটার উচ্চতার বস্তুগুলি কয়েকশো মিটার দূরে গড়ে তোলা হবে৷ পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধি লিনা ভুয়োটোভেসি বলেন, ‘‘লি শহরে প্রকৃতির সুরক্ষা আমাদের সাধারণ লক্ষ্য৷ আমাদের বায়ুশক্তির প্রয়োজন রয়েছে৷ কিন্তু আশেপাশের এলাকার সংরক্ষণের কথাও ভাবতে হবে৷ ব্যাপারটা অনেকটা ধাঁধার মতো৷ শেষে সব টুকরোগুলি জোড়া দিয়ে আপোশের সেরা পথ বেছে নিতে হবে৷’’

জলবায়ুর সুরক্ষা সত্যি বিশাল এক ধাঁধার মতো৷ ছোট একটা শহর এমন বৈশ্বিক সমস্যার উপর কতটা প্রভাব রাখতে পারে? লি শহরের মানুষের মতে, বড় অবদান রাখার অবকাশ রয়েছে৷ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বাকি বিশ্বকেও সেই পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগাতে পারে লি৷

ফিলিপ আবরেশ/এসবি