পরমাণু সমৃদ্ধকরণ শুরু করবে ইরান, ক্ষুব্ধ পশ্চিমা বিশ্ব
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০২০ ভাগ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার বিষয়টি ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-কে জানিয়েছে তেহেরান৷ জানিয়েছেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলি আকবর সালেহি৷ তাঁর কথায়, ‘‘ইরান শতকরা ২০ ভাগ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম, তার আগের এই দাবিকে পশ্চিমা দেশগুলো যেন রাজনৈতিক ভাঁওতা বলে মনে না করে, সেজন্যই প্রেসিডেন্ট এই সমৃদদ্ধকরণের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন৷''
তাই মঙ্গলবার থেকে আইএইএ-এর পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে ইরানে৷ শুধু তাই নয়, আগামী বছরের মধ্যে ইরানে মোট ১০টি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্ট চালু করা হবে বলেও জানিয়েছেন সালেহি৷
এদিকে, ইরানের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ পশ্চিমা বিশ্ব৷ এ ব্যাপারে মার্কিন সেনেটের প্রধান জন কেরি জানিয়েছেন, ‘‘আমার মনে হয়, পরমাণু জ্বালানি নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের বার্তাটা কি - তা এখনও সঠিকভাবে বুঝতে পারে নি তেহেরান৷ আহমাদিনেজাদ এর মধ্যে শুধু পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে সংঘাত দেখতে পাচ্ছেন৷ ফলে তিনি যেভাবে এগোচ্ছেন, তাতে সংঘাত শুধু বৃদ্ধিই পাবে৷''
স্বাভাবিকভাবেই, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের এহেন সিদ্ধান্ত খুব ভাল চোখে দেখছে না আন্তর্জাতিক সমাজ৷ ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি প্রস্তাবনার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ, বলছে ব্রিটেন৷ প্যারিস সফররত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস এ ব্যাপারে ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এর্ভ মোরিন, প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারনার্ড কুশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন৷ আলোচনা হয়েছে ইরানের ওপর আরো একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে৷ কুশনারের কথায়, ‘ইউরেনিয়াম ২০ ভাগ সমৃদ্ধ করার মতো প্রাযুক্তিক ক্ষমতা ইরানের নেই৷' এছাড়া, ‘তেহরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধৈর্য পরীক্ষা করে দেখছে' বলে জানিয়েছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্ল থিওডোর সু গুটেনব্যার্গ৷ তিনি মনে করেন, এবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সক্রিয় হওয়া দরকার৷ তাঁর কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে চীনাদের এবং রুশদের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন৷ নিষেধাজ্ঞার স্ক্রুটাকে এবার এখানে ওখানে আরও টাইট করা যেতে পারে৷ এবং টাইট করতে হবে৷''
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়াও ইরানের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন৷ আস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফেন স্মিথ এ সিদ্ধান্তকে একটি ‘গুরুতর প্ররোচনা' বলে আখ্যা দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, ইরান ভবিষ্যতে রাশিয়ার এস-৩০০-এর চেয়েও বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে চলেছে - এ খবরে চিন্তিত মস্কোও৷ তাদের কথায়, ইরানের উচিৎ অবিলম্বে পরমাণু বিনিময় প্রস্তাব মেনে নেওয়া৷ প্রসঙ্গত, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের আড়ালে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে - গোড়া থেকেই এ সন্দেহ করে এসেছে পশ্চিমা বিশ্ব৷
প্রতিবেদক : দেবারতি গুহ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক