1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নৌযান, বাস, ট্রেন সবখানেই সেফটি কালচারের অভাব’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে কোন দুর্ঘটনার ঘটলেই নিরাপত্তা ও সচেতনতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷ কয়েকদিন পর সবকিছু থেমে যায়৷ লঞ্চ ডুবে গেলে বা বাস দুর্ঘটনায় পড়লে চালক বা মালিককে দায়ী করা হয়৷

https://p.dw.com/p/4HZoP
ছবি: STR/AFP/Getty Images

কিন্তু যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব তারা কতটা দেখছে বা তাদের কী শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে?

এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান৷

ডয়চে ভেলে : পঞ্চগড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেল৷ ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও মানুষ কেন এভাবে নৌকায় উঠে?

আলী আহমেদ খান : বাংলাদেশ জনবহুল দেশ৷ এখানে যানবাহনের সমস্যা আছে৷ সেফটি কালচার তো এখানে নেই৷ শুধু নৌযান না, বাস, ট্রেন সবখানেই সেফটি কালচারের অভাব আছে৷ পাশাপাশি এত মানুষের দেশে যানবাহনের সংকটও তো আছে৷ ফলে মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই ওঠেন৷ যারা এনফোর্সমেন্ট করবেন তাদেরও তদারকির অভাব রয়েছে৷ প্রয়োজনীয়তার কারণে মানুষ রিস্ক নিয়েই এভাবে যানবাহনে উঠছে৷

অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণেই তো এত দুর্ঘটনা, তারপরও মানুষ কেন সচেতন হচ্ছে না?

সচেতনতার জন্য জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের দায়িত্বও আছে৷ বিশেষ করে ফায়ার সার্ভিসের সচেতনতার দরকার আছে৷ দুর্ঘটনার আগে যদি জেলা প্রশাসনের এনফোর্সমেন্ট ঠিক মতো থাকতো তাহলে মানুষ এত ঝুঁকি নিতো না৷

‘পঞ্চগড়ের দুর্ঘটনার পেছনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের অবহেলা ছিল’

ফায়ার সার্ভিসের কাজের একটা অংশ তো মানুষকে সচেতন করা৷ এই কাজটা কীভাবে করে?

এটা একটা পুরানো সংস্থা৷ এদের সক্ষমতার ঘাটতি আছে এটা সত্যি৷ সিভিল টেনিং তারা দিচ্ছে৷ কিন্তু জনবলের ঘাটতি তো রয়েই গেছে৷ আমি যখন মহাপরিচালক ছিলাম, তখনও আমি দেখেছি৷ যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন দ্রুতই তারা রেসপন্স করে৷ কিন্তু দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেটাতেও তাদের একটা দায়িত্ব আছে৷ সেই কাজটা তারা স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় মানুষকে সচেতন করতে বা প্রশিক্ষণে কাজ করে৷ এটা কিন্তু দুর্ঘটনা রোধে অনেকখানি সাহায্য করে৷ পঞ্চগড়ে যে দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল সেখানে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটা অবহেলা ছিল বলে আমি মনে করি৷

ফায়ার সার্ভিসের এই প্রচারণার কৌশলটি কি? এটা কী তারা নিজেরাই করে নাকি প্রশাসনের অন্য বিভাগকে সম্পৃক্ত করে এটা করে?

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই ফায়ার সার্ভিস কাজটা করে৷ ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই৷ ফলে জেলা প্রশাসনের সাহায্য নিয়েই তাদের কাজটা করতে হয়৷ ফায়ার সার্ভিসের কাজের জন্য তাদের সহায়তার প্রয়োজন আছে৷

গ্রামের মানুষ কী ফায়ার সার্ভিসের প্রচারণা সম্পর্কে জানে?

উপজেলা পর্যায়েও এখন ফায়ার স্টেশন হচ্ছে৷ বর্তমান সরকার এটা করেছে৷ সবগুলো এখনও চালু হয়নি৷ পঞ্চগড়ে যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে তার আশপাশে কোন ফায়ার স্টেশন নেই৷ অনেক দূর থেকে গিয়ে কাজটা করেছে৷ সক্ষমতার ঘাটতির কারণে হয়তো তারা ঠিকমতো রেসপন্স করতে পারিনি৷

নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী উঠালে শাস্তি কী? এটা দেখভাল করার দায়িত্বই বা কার?

এগুলো দেখার জন্য নৌপুলিশ আছে৷ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়েরও একটা অথরিটি আছে৷ এখানে যেহেতু ফেরিঘাট আছে ফলে সেখানে ঠিকমতো ফেরিগুলো চলাচল করছে কিনা সেটা দেখার জন্য লোকাল প্রশাসনেরও একটা ভূমিকা আছে৷ বিআইডাব্লিউটিএ, বিআইডাব্লিউটিসি তো এখানে দায়িত্ব পালন করবেই৷ কিন্তু ঘাটটা কিন্তু দেখার দায়িত্ব লোকাল প্রশাসনের৷ এখানে যে ফেরিগুলো চলছে সেটা কিন্তু মানসম্পন্ন না৷ সবমিলিয়ে এটা জেলা প্রশাসনের একটা উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা৷ 

প্রতি বছর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই কী এর জন্য দায়ী?

অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই তো বড় ফ্যাক্টর৷ সব পরিবহনের একটা সক্ষমতা থাকে৷ তার চেয়ে বেশি যাত্রী নিলে তো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে৷ বিশেষ করে নৌযানে তো অনেকগুলো সেফটি ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ এখানে আদৌ সেগুলো ছিল কিনা সেটা দেখতে হবে৷

এতসব দুর্ঘটনা থেকে কী আমরা কোন শিক্ষা নিচ্ছি?

এটা দুর্ভাগ্যজনক৷ আমরা টকশোতে বলছি, বিভিন্ন জায়গায় মন্তব্য করছি৷ কিন্তু এর দায়দায়িত্ব তো কেউ নিচ্ছে না৷ মন্ত্রণালয়গুলোর দায়বদ্ধতা আমরা নিশ্চিত করতে না পারলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে৷

আমরা দেখি লঞ্চ ডুবে গেলে চালক বা মালিককে দায়ী করা হচ্ছে৷ বাসের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার৷ কিন্তু যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব তারা কতটা দেখছে বা তাদের কী শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে?

বাস, লঞ্চ বা ট্রেন যাই বলেন না কেন, সব জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্ব কিন্তু নৌ পুলিশ বা হাইওয়ের পুলিশ বা রেল পুলিশের৷ তাদের তো নিরাপত্তার জন্য সরকার নিয়োগ করেছে৷ তাদের তো সেই দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে৷ অন্যদেরও দায়িত্ব আছে৷ কিন্তু পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া আছে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য৷ আইন তাদের আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে৷ যাতে মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়৷ যারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না তাদের পেনাল্টি করতে হবে৷ তাহলেই হয়ত এসব অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি৷

অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ফলে যে দুর্ঘটনা, সেটা থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে?

এত মানুষের দেশে প্রথমত যানবাহনের সংখ্যা বাড়াতে হবে৷ পাশাপাশি বাস-লঞ্চ যেগুলো চলাচল করছে সেগুলো সঠিকভাবে চলছে কিনা, তাদের ফিটনেস আছে কিনা এগুলোও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে৷ পঞ্চগড়ের যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কোন নৌযান ছিল না৷ কোন রেসকিউ বোট ছিল না৷ যেখানে নৌযান চলে সেখানে রেসকিউ বোট থাকতে হবে৷ সড়ক পথেও এই ধরনের ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ পাশাপাশি এনফোর্সমেন্টও থাকতে হবে৷

নিরাপত্তা ও সচেতনতার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে?

রেসপন্স করার ক্ষেত্রে তাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে৷ এখন উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে৷ সেফটির ব্যাপারে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে৷ কিন্তু এটা অগ্রাধিকার পায় না৷ পুলিশ যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের জনবল বাড়ছে না, সরঞ্জাম বাড়ানো হচ্ছে না৷ জনসচেতনতা বাড়ানোর মতো জনবল তাদের নেই৷ সক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷