1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিফিনল্যান্ড

নির্বাচন: ফিনল্যান্ডেও কি ক্ষমতায় ডানপন্থিরা?

২ এপ্রিল ২০২৩

রোববার ফিনল্যান্ডের সংসদ নির্বাচন ঘিরে উৎসাহ বাড়ছে৷ ক্ষমতায় আসা নিয়ে তিনটি দলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4PbVF
২২টি দলের ২৪০০ জনের বেশি প্রার্থী ২০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন
২২টি দলের ২৪০০ জনের বেশি প্রার্থী ২০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেনছবি: Roni Rekomaa/Lehtikuva/REUTERS

জাতীয় নির্বাচনে রোববার ভোট দিচ্ছেন ফিনল্যান্ডের মানুষ৷ দেশে এবং দেশের বাইরে তুমুল জনপ্রিয় সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দলের সানা মারিন দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে লড়ছেন৷ তাকে সরিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ডানপন্থি এবং অভিবাসনবিরোধী দলগুলি৷

প্রতিবেশী সুইডেনে জাতীয়তাবাদীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ পাশাপাশি, গত বছর ইটালিতে জয়ী হয়েছেন অতি ডানপন্থিরা৷ ইউরোপের এই জাতীয়তাবাদী তরঙ্গে ফিনল্যান্ডও যোগ দেবে কি-না তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে৷ সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হতে পারে স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায়৷

ন্যাটো প্রতিরক্ষা জোটে ফিনল্যান্ডের আনুষ্ঠানিক যোগদানের মাত্র কয়েকদিন বাকি৷ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট৷ এরপরই ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় যোগ দেয়া নিশ্চিত হয়৷ এর মাঝে ফিনল্যান্ডের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে৷

ই-২ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জুহো রাহকোনেন এএফপিকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে জরিপগুলোয় দেখা গেছে ফিনল্যান্ডে ডানপন্থি রাজনৈতিক প্রবণতা আরো শক্তিশালী হচ্ছে৷''

নিয়ম অনুযায়ী, সংসদে আটটি প্রধান দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ পায় এবং ১৯৯০ সাল থেকে সেই দলটি সবসময় প্রধানমন্ত্রিত্বের পদের দাবি করে আসছে৷

শনিবার হেলসিঙ্কিতে তার চূড়ান্ত প্রচারণা সভায় মেরিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই নির্বাচনে জয়ী হওয়া এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য৷''

বৃহস্পতিবার পাবলিক ব্রডকাস্টার ওয়াইএলই-এর প্রকাশিত সবশেষ জরিপে দেখা যায়, কেন্দ্রীয়-ডান জাতীয় জোট ১৯ দশমিক আট শতাংশ এগিয়ে আছে, জাতীয়তাবাদী ইউরোসেপ্টিক ফিন্স পার্টি ১৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷

মারিন নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি) ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসে৷ মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি৷ সমীক্ষায় তার দল ১৮ দশমিক সাত শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে৷

 শনিবার একটি প্রচার সমাবেশে ন্যাশনাল কোয়ালিশন নেতা পেটেরি অর্পো এএফপিকে বলেন, ‘‘আমাদের প্রচার দুর্দান্ত ছিলো৷ ফিনল্যান্ডে আমাদের সেরা প্রার্থীরা রয়েছেন৷ আমরাই সমীক্ষায় এগিয়ে রয়েছি৷ আমি আশাবাদী৷''

 মারিন এই শতকে ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্থান পেয়েছেন একটি জরিপে৷ তিনি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এসডিপির আসন বাড়াতে তীব্র লড়াই করছেন তিনি৷

রাহকোনেনের মত, ‘‘মারিন যদিও ব্যতিক্রমীভাবে জনপ্রিয়, তবে তার বিরোধিতাও রয়েছেভ তাই রাজনৈতিক বিভাজন আরো জোরদার হয়েছে৷''

মারিনকে অনেকেই একজন শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে দেখেন৷ কারণ তিনি কোভিড-১৯ মহামারি এবং ন্যাটো সদস্যপদ প্রক্রিয়া দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন৷ কেউ বলছেন তার প্রতি ক্রমবর্ধমান ঘৃণার কথাও৷ লিঙ্গপরিচয়ের দিকটি নিয়েও কথা উঠেছে নানা সময়৷ মারিনের পার্টি করার ভিডিও ক্লিপগুলির প্রতিক্রিয়াও অনেক ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতার পরিচয় বলে মনে করছেন কেউ কেউ৷

ভোটদাতারা কী বলছেন?

২৯ বছর বয়সি ভোটার ক্যাসপার কিলমালা তার ভোট দেওয়ার পর এএফপিকে বলেন, ‘‘আমি মারিনকে পছন্দ করতাম৷ তবে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে তার ধারণাগুলি বাস্তবায়িত করা সম্ভব বলে মনে হয় না৷ সরকার এমন কিছু অর্জন করতে পারবে বলে মনে হয় না৷''

ফিনল্যান্ডের ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ২০১৯ সালে ৬৪ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা অর্পোর ন্যাশনাল কোয়ালিশন ৬০০ কোটি ইউরো খরচ কমিয়ে সমাধান করতে চায়৷

মারিন অভিযোগ করেছেন যে ন্যাশনাল কোয়ালিশন ‘গরিবদের থেকে নিয়ে ধনীদের দিতে চায়'৷ ফিনল্যান্ডে উগ্র ডানপন্থি দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তা হবে প্রথমবার তাদের ক্ষমতায় আসা৷

ইউরোসেপ্টিক পার্টি অভিবাসন বিষয়ে কঠোর নিয়ম আরোপ করতে চায়৷ প্রতিবেশী সুইডেনের সঙ্গে ‘গ্যাং ভায়োলেন্স‘-এর মতো সমস্যার কথা বলে সতর্ক থাকার কথা বলছে তারা৷

পুররা শনিবার এএফপিকে বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে।'' রাহকোনেন বলেন, গত গ্রীষ্ম থেকে পপুলিস্ট পার্টির প্রতি সমর্থন বেড়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সমর্থন আরো বাড়ছে।

দলটি ২০১৫ সালে একটি কেন্দ্র-ডান সরকারে থাকার সময় পরবর্তীতে দুটি উপদলে ভেঙে যায়৷ একটি হার্ড লাইন এবং অন্যটি মধ্যপন্থি৷ তবে সংসদে শুধু কট্টরপন্থিরাই আছেন।

ফিনস পার্টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সঙ্গে ফিনল্যান্ডের বিচ্ছেদ ঘটানোকে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হিসাবে দেখে৷ ২০৩৫ সালের জন্য ফিনল্যান্ডের কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য স্থগিত করতে চায় তারা৷

হেলসিঙ্কির একটি ভোটকেন্দ্রে ৩১ বছর বয়সি ভোটার মার্কাস হলস্টেন এএফপিকে বলেছেন, ‘‘জাতীয়তাবাদী ডানপন্থি দলটি সম্ভবত জয়ী হতে চলেছে তাই আমি এটি বন্ধ করার জন্য ভোট দিতে এসেছি৷''

মারিন ফিনস পার্টিকে ‘বর্ণবাদী'  দল হিসাবে উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে সরকার গঠনের সম্ভাবনা অস্বীকার করেছেন৷ অন্যদিকে অর্পো জানান, অভিবাসন, ইইউ এবং জলবায়ু নীতি নিয়ে ফিনস পার্টির সঙ্গে বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি বিকল্পগুলি উন্মুক্ত রাখবেন৷

ফলে পরবর্তী সরকার গঠনে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা থাকতে পারে তার৷ কারণ ফিন্স পার্টি এবং এসডিপি উভয়েরই সম্ভবত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য অর্পোর প্রয়োজন হবে। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।

আরকেসি/এফএস (এএফপি, রয়টার্স)