নির্বাচনি প্রচারে বিজেপি নেতাদের মুখে ‘কুকথা’
২৮ জানুয়ারি ২০২০দুই হাত ওপরে তুলে অনুরাগ ঠাকুর চিৎকার করে বলছেন, 'দেশ কি গদ্দারো কো', সামনে সমবেত বিজেপির কর্মী, সমর্থকরা ততোধিক জোরে বলছেন, 'গুলি মারো, গুলি মারো'৷ এরপর অনুরাগ প্রশ্ন করছেন, কে এই গদ্দার? উত্তর আসছে, ''কেজরি, কেজরিওয়াল৷'' অনুরাগের পরের প্রশ্ন, ''পাপুর নাম যদি করি তা হলে?'' জবাবে হইহই করে চিৎকার করলেন সামনের বিজেপি সমর্থকরা৷ অনুরাগ বললেন, সেই ইমরান খান থেকে শুরু হয়ে পাপু, কেজরিওয়ালরা সব একদিকে৷ দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন বলে আদর্শ আচরণবিধি চালু রয়েছে৷ তার মধ্যে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কি এই ধরনের কথাবলতে পারেন?
এই প্রশ্ন ওঠার ২৪ ঘন্টার মধ্য়েই দিল্লির সাংসদ প্রবেশ বর্মা আরেকটি জনসভায় বলেছেন ''লাখো লোক জমায়েত হচ্ছেন(শাহিনবাগ)৷ দিল্লির লোককে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ ওরা এ বার আপনার ঘরে ঢুকবে৷ আপনার বোন-মেয়েকে ধর্ষণ করবে, হত্যা করবে৷ এখনও আপনাদের হাতে সময় আছে৷ কাল কিন্তু নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা থাকবেন না৷'' দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত সাহেব সিং বর্মার ছেলে প্রবেশ আরও বলেছেন, দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার একমাসের মধ্য়ে সরকারি জমিতে থাকা মসজিদ ভেঙে দেওয়া হবে৷ ক্ষমতায় এলে শাহিনবাগের বিক্ষোভ একদিনে শেষ করে দেওয়া হবে৷
দিল্লিতে একদিকে কেজরিওয়াল ও তাঁর দল প্রচারে শুধুমাত্র নিজেদের কাজের কথা বলছে, এর উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতারা এই ধরনের কথা বলছেন কেন? তৃণমূলের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, বিজেপি এখন সর্বত্র এটাই করবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''দিল্লিতে নেতা মন্ত্রীরা যেমন এই ধরনের কথা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে দিলীপ ঘোষও বলছেন৷ বিজেপির চূড়ান্ত কর্মসূচি এটাই৷ হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা৷ হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ঘটিয়ে তার সুবিধা নিয়ে ভোটে জেতা৷'' মুসিলম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য কাসিম রসুল ইলিয়াসের মতে, এর পিছনে দুটি কারণ আছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, একটা কারণ নিঃসন্দেহে হিন্দু মুসলিম বিভাজন৷ দ্বিতীয় কারণ হল শাহিনবাগের বদনাম করা৷
বিজেপির মুখপাত্র সুদেশ বর্মা আবার মন্ত্রী ও সাংসদের কথার মধ্য়ে কোনও ভুল দেখতে পারছেন না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,''অনুরাগ নিজে বলেননি গুলি মারো৷ ওটা ছিল লোকের বক্তব্য৷ দেশবিরোধীদের বিরুদ্ধে ওই সাজাই চেয়ছেন তাঁরা৷ আর প্রবেশ যে কথাটা বলেছেন, সেটা ক্রিমিনাল বা অপরাধীদের নিয়ে৷ আর তাঁর নিজের কেন্দ্রে বেআইনি জমিতে প্রচুর মসজিদ আছে তা নিয়ে৷ এতে ভুল কোথায়?''
আপ, কংগ্রেস এখন নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে৷ বিজেপির মন্ত্রী ও সাংসদের মন্তব্য নিয়ে তারা কী ব্যবস্থা নেয় তার অপেক্ষায় থাকছে দুই দল৷