নিজেদের কথা নিজেদের গানে
২৯ মার্চ ২০২১ভোটের আগে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করে শিল্পীদের কাছে নতুন কিছু নয়৷ বিশেষত এবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে শাসক দল এবং বিরোধী, দুই শিবিরেই এক ঝাঁক তারকা৷ তাঁদের কেউ সরাসরি ভোটে নেমেছেন প্রিয় দলের টিকিটে, কেউ প্রার্থী না হয়েও পছন্দের দলের সমর্থনে প্রচার করে যাচ্ছেন৷ সেই প্রেক্ষিতেও কিন্তু এই মিউজিক ভিডিওটি ব্যতিক্রমী হওয়ার দাবি রাখে৷ কারণ বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দল, বা নেতা–নেত্রীর পক্ষে কথা বলছে না ভিডিওটি৷ তবে এর শেষ থেকে শুরু, বলা হচ্ছে বহুত্ববাদী ভারতের কথা, এ দেশের সহাবস্থানের ঐতিহ্যের কথা৷ এবং কোনও দলের নাম না করেই বিরোধিতা করা হচ্ছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিভিন্ন নীতির, যা ভারতীয়ত্বের মূল ধারণার ক্ষতি করছে বলে মনে করছেন শিল্পীরা৷
‘‘তুমি পুরাণকে বলো ইতিহাস, আর ইতিহাসকে বলো পুরানো /তোমার কাজ শিক্ষাকে লাঠিপেটা করে মূর্খের জ্বালা জুড়ানো!''— অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের লেখা এই গানটির রেকর্ডিং হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে৷ কেন, এখন ভোটের আগে তার মিউজিক ভিডিও হঠাৎ প্রকাশিত হল, সেই কৈফিয়তও তারা দিয়েছেন শুরুতেই, যে, ‘‘আমাদের দেশ ভারতবর্ষ বৈচিত্র ও ভালবাসার দেশ৷ মিলে মিশে থাকার দেশ৷ সেখানে মিথ্যে আর ঘৃণার চাষ বাড়লে মুখ খুলতে হবে বই কি!''এবং শুধু দেশ নয়, ভোটের বাংলাকে নিয়েও যে তারা সমান উদ্বিগ্ন, ঘৃণার চোখে চোখ রেখে কথা বলার যে সময় এবার এসেছে, সেটাও তারা বলে দিচ্ছেন শুরুতেই৷ অনুপম রায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচির মতো চলতি সময়ের জনপ্রিয় শিল্পীরা গলা দিয়েছেন এই গানে৷
মিউজিক ভিডিওতে ওদের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে সব্যসাচী চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাহুল অরুণোদয় ব্যানার্জি, শান্তিলাল মুখার্জির মতো অভিনেতা, সুমন মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, রেশমি সেনের মতো নাট্যকর্মীদের৷ দুই বর্ষীয়াণ নাট্যকর্মী অরুণ মুখোপাধ্যায় এবং রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত রয়েছেন ভিডিওতে, যারা জোর গলায় বলছেন, শাসকের কোনও কথা আর তারা শুনতে রাজি নন৷ এবং গানের এই চরণটির শেষে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলছেন— আমি অন্য কোথাও যাব না, আমি এই দেশেতেই থাকব৷
ঋদ্ধি সেন, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সুরঙ্গমা বন্দ্যোপাধ্যায়— এই তিন নবীন অভিনেতা এবং নাট্যকর্মী এই মিউজিক ভিডিওর চিত্রনাট্য এবং পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন৷ ওদের পক্ষ থেকে ঋদ্ধি জানালেন, ‘‘এই মিউজিক ভিডিও থেকে এটা প্রমাণ হল, যে নিজেদের মতো করে বক্তব্য রাখতে গেলে কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ার প্রয়োজন পড়ে না৷
সেটা নিজেদের গানের মাধ্যমে, কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো যায়৷'' এবং এই ভিডিও যে এত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল, সে সম্বন্ধে ঋদ্ধির বক্তব্য, ‘‘এই ভাইরাল হওয়ার মধ্যেই মানুষের প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে৷ এটা কোনও সিনেমার গান নয়, বিনোদনমূলক গান নয়, কিন্তু গানটার যে মূল বার্তা, যে ভারতবর্ষ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, তাকে অক্ষত রাখাটা প্রয়োজন— এটা মানুষকে ছুঁয়ে গেছে৷ যাদের ভেতরে ভেতরে এই কথাগুলো জমছিল, কিন্তু বলতে পারছিলেন না, তাঁরা কোথাও একটা জোর পেয়েছেন৷''
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, যে এমনই ব্যাপক এবং গভীর হয়েছে এই গানের প্রভাব, যে বিপক্ষ শিবির পাল্টা গান বাঁধার তোড়জোড় শুরু করেছে, যা কয়েকদিনের মধ্যেই গণমাধ্যমে চলে আসবে৷ বিজেপির তারকা প্রার্থী, গায়ক বাবুল সুপ্রিয় নাকি সেই গান গাইবেন৷