নারীর সৌন্দর্যের সংজ্ঞা নারীরাই পাল্টে দিচ্ছেন!
জার্মানির লাইপজিগ শহরের এক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে, টাম্বলর ও ইন্সটাগ্রাম প্রজন্মের শিল্পীরা কীভাবে নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে তাঁদের চিন্তাভাবনা ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পেশ করছেন৷
আরেক নন্দনতত্ত্ব
‘ভার্চুয়াল নরম্যালিটি – ওমেন নেট আর্টিস্টস ২.০’ প্রদর্শনীতে যে ১৩ জন শিল্পী তাঁদের শিল্পকর্ম পেশ করছেন, তাঁরা সবাই ‘ডিজিটাল নেটিভ৷’ তাঁদের শিল্পের প্রেরণা আসে অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এবং তাঁরা বিভিন্ন লিঙ্গ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ও আরোপিত সত্তা পাল্টে দিতে চান৷ জাপানি আলোকচিত্রী ইজুমি মিয়াজাকি (ছবি) তাঁর শিল্পকর্মে সেল্ফি সংক্রান্ত প্রচলিত ধ্যান-ধারণা নিয়ে খেলা করে থাকেন৷
প্ররোচনামূলক রোল-প্লেয়িং
মিয়াজাকির পরাবাস্তববাদী শৈলী সত্যিই অবাক করে৷ যেমন, এই ছবিটি, যার শিরোনাম ‘টমেটো’৷ মিয়াজাকি ও তাঁর সতীর্থরা ভার্চুয়ালিটির বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে খেলা করেন ও সেজন্য নিজেদের শরীরকে নানাভাবে উপস্থাপন করেন, নতুন চরিত্র ও ভূমিকা সৃষ্টি করেন৷ নিজেদের এই ‘রূপান্তরের’ মাধ্যমে তাঁরা প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে তুলে ধরেন ও ব্যঙ্গ করেন৷
লিঙ্গান্তরী বিদ্বেষ
আলোকচিত্র ছাড়া লাইপজিগের প্রদর্শনীতে একাধিক ভিডিও রাখা হয়েছে, যেমন অ্যালি কোট্স ও সিনিয়ে পিয়ার্সের ‘অ্যামেরিকান রিফ্লেক্স’৷ ২০১৩ সালের এই শর্ট ফিল্মটি একটি সামাজিক এক্সপেরিমেন্ট৷ পিয়ার্স মুখোস পরে সাউথ ক্যারোলাইনার মির্টল বিচ দিয়ে হাঁটছেন; পথচারীরা তাঁর লিঙ্গ বা যৌনতা সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করতে পারেন৷ ভিডিওটি শেষ হচ্ছে লাগামছাড়া বহিরাগত বিদ্বেষ ও সহিংসতার একটি দৃশ্য দিয়ে৷
শরীর নিয়ে খেলা
লাইপজিগ প্রদর্শনীর শিল্পীদের মধ্যে নারীদেহ নিয়ে এমন কিছু শিল্পকর্ম আছে, যা অনেকের কাছে মাত্রাতিরিক্ত বলে মনে হতে পারে৷ সুইডেনের শিল্পী আর্ভিডা বাইস্ট্র্যোম আডিডাস কোম্পানির একটি প্রচার অভিযানে তাঁর না কামানো পা দু’টি প্রদর্শন করে এমনকি ধর্ষণের হুমকি পেয়েছিলেন৷
লাস্যময়ী
বাইস্ট্র্যোম বা তাঁর নিউ ইয়র্কের সতীর্থ লিয়া শ্রাগার অনলাইনে অশ্রাব্য মন্তব্যে ভয় পাবার পাত্রী নন৷ তাঁদের শিল্পকর্মের একটি উদ্দেশ্য যেমন প্ররোচনা, তেমনি অপর একটি লক্ষ্য হলো নারীদেহের স্বাধীনতা৷ তার ফলে যদি এ ধরণের ‘লাস্যময়ী’ ছবি সৃষ্টি হয়, তো তাই সই৷
চুলও একটা বক্তব্য হতে পারে
পশ্চিমে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কৃষ্ণকেশীদের কিভাবে প্রভাবিত করেছে? নাকেয়া ব্রাউন তাঁর শিল্পকর্মে সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন৷ বহু কোঁকড়ানো কালো চুলের অধিকারিণী তাঁদের চুল ইস্তিরি করে সোজা করার ব্যবস্থা করতেন এককালে৷ ২০০০ সালে মার্কিন মুলুকে যে ‘স্বাভাবিক চুল আন্দোলন’ শুরু হয়, তার পর থেকে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মহিলাদের তাঁদের নিজস্ব কেশবিন্যাস বজায় রাখার উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে৷
ঘৃণা নয়, বিদ্বেষ নয়
‘ভার্চুয়াল নরম্যালিটি – উওমেন নেট আর্টিস্টস ২.০’ প্রদর্শনীর শিল্পীরা সকলেই অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ সমালোচনা ও মন্তব্যের শিকার হয়েছেন৷ তবুও তাঁরা তাঁদের জোরালো নারীবাদী মনোভাব ও শিল্প পরিত্যাগ করতে রাজি নন৷ অপরদিকে তাঁদের ঘোষিত লক্ষ্য হলো, ‘যাবতীয় ঘৃণা ও বিদ্বেষ দূর হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাও৷’ লাইপজিগের মিউজিয়াম অফ ভিজুয়াল আর্টস-এ প্রদর্শনীটি চলবে আগামী এপ্রিলের ৮ তারিখ অবধি৷