1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারায়ণগঞ্জে আইভীর হ্যাটট্রিক

১৬ জানুয়ারি ২০২২

বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবারো বিজয়ী হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী৷ আরো একবার স্বপ্নভঙ্গ তৈমুর আলম খন্দকারের৷ হারের জন্য ‘প্রশাসনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইভিএম কারচুপির’ অভিযোগ করেছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/45bam
টানা তৃতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পথে সেলিনা হায়াৎ আইভীছবি: bdnews24.com

মোট ১৯২টি কেন্দ্রের সবগুলোর ফলে আইভী প্রায় ৬৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন৷ নৌকা প্রতীকে তিনি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট পেয়েছেন৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকারের হাতিতে পড়েছে ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট৷ পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তৈমুর আলম৷ আর আইভী বলেছেন নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে আগামী দিনে তিনি তৈমুর আলমের সঙ্গেও কথা বলবেন৷

এর আগে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়৷ এবারই প্রথম নারায়ণগঞ্জে সম্পূর্ণ ভোট ইভিএম-এ নেয়া হয়েছে৷ ভোট দিতে গিয়ে অনেকের আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় কিছু জটিলতা দেখা দেয়৷ এ কারণে কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটে ধীরগতি দেখা যায়৷   

সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের ফল ঘোষণার শুরু থেকেই আইভী এগিয়ে যান৷ একেকটি কেন্দ্রের ফলাফলে ক্রমশ ভোটের ব্যবধান বাড়তে থাকে৷ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই জয় আঁচ করে উল্লাস শুরু করে আইভী শিবির৷ তার বাসভবন ‘চুনকা কুটির’ এর পাশে প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পে সমবেত হন হাজারো সমর্থক৷

 Bangladesch Narayanganj Städte Kooperation Wahlen 2022
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারই প্রথম সম্পূর্ণ ভোট ইভিএম-এ নেয়া হয়েছেছবি: bdnews24.com

বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, রাত ৮টার দিকে আইভী সমর্থকদের একটি মিছিল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে ঢুকছিল, যেখানে তখনও নির্বাচনের ফল পরিবেশন করছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার৷ মিছিল দেখে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান মাইকে বলেন, নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ মিছিল নিয়ে ঢুকলে তা বরদাশত করা হবে না৷ এরপর মিছিলটি ঘুরে চলে যায়৷

তবে রাত নয়টা নাগাদ দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান পঞ্চাশ হাজার ছাড়ালে আইভীর জয় সুনিশ্চিত হয়৷ 

নির্বাচনে মোট সাতজন মেয়র প্রার্থী ছিলেন৷ বাকিদের মধ্যে এবিএম সিরাজুল মামুন (খেলাফত মজলিস) পেয়েছেন ১০ হাজার ৭২৪ ভোট, মাছুম বিল্লাহ (ইসলামী আন্দোলন) পেয়েছেন ২৩ হাজার ৯৮৭ ভোট, কামরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ ভোট, জসীম উদ্দিন (খেলাফত আন্দোলন) পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৯ ভোট, রাশেদ ফেরদৌস (কল্যাণ পার্টি) পেয়েছেন ১ হাজার ৯২৭ ভোট৷

তৈমুর কাকার কথাও শুনব: আইভী

বিজয়োল্লাসের মধ্যে নিজবাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান আইভী৷ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে আলোচনা করেও কাজ করার কথা বলেন তিনি৷  

নির্বাচনী প্রচারে নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে সুযোগ দিয়েছে কাজ করব, উন্নয়ন যেটা করছি সেটা করব৷ যেগুলো বলেছি, সেগুলো করব৷ এছাড়া তৈমুর কাকা যেগুলো বলেছে, সেটাও চিন্তাভাবনা করে তার সঙ্গে কথা বলে সে কাজগুলো করার চেষ্টা করব৷’’

তাকে জয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আইভী৷ বলেন, ‘‘আগামী পাঁচ বছর আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে চাই৷ জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তাদের উৎসর্গ করতে চাই৷ সব ধরনের বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আমি জনগণের জন্য কাজ করতে চাই৷’’

এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ ও দলটির নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান৷ 

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত শামীম ওসমানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী৷ ২০১৬ সালে দলের প্রতীক পেয়ে আবার বিজয়ী হন তিনি৷ এবার টানা তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ জয় করলেন আইভী৷

ইভিএম আর প্রশাসনের কারণে পরাজয়: তৈমুর

আইভী সমর্থকরা যখন জয়োল্লাসে মেতে ওঠেন তখন সংবাদ সম্মেলন করে নিজের হারের কারণ ব্যাখ্যা করেন তৈমুর আলম খন্দকার৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইভিএমের কারচুপির জন্য আজকে আমাদের এ পরাজয় বরণ করতে হয়েছে৷ এ পরাজয়কে পরাজয় মনে করি না৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘জনগণের উপস্থিতি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল৷ তারা ভোটটা দিতে পারেনি৷ মেশিনটা স্লো৷ ভেতরে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে; নাহলে এত ডিফারেন্স হতে পারে না৷

 Bangladesch Narayanganj Städte Kooperation Wahlen 2022
ইভিএম কারচুপি ও প্রশাসনিক ইঞ্চিনিয়ারিংয়ের অভিযোগ করেছেন তৈমুর আলম খন্দকারছবি: bdnews24.com

বিএনপি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তৈমুর৷ তবে দলের স্থানীয় নেতারা তার সঙ্গেই ছিলেন৷ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আমার জন্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন, পুলিশের আচরণ৷ সেটারই প্রমাণ হয়েছে৷ সকাল থেকে বলে এসেছিলাম ইভিএম মেশিনটা ত্রুটিপূর্ণ, স্লো৷ কোথাও কোথাও অকেজো, হ্যাং হয়ে যায়৷’’

গ্রেপ্তার-হয়রানির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে যারা ব্যস্ত ছিলেন, তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের লোক আসার পর থেকে গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে৷ এ অবস্থায় একজন মানুষ স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে কিভাবে ঠিক থাকতে পারে?’’

এদিকে ইভিএম কারচুপি নিয়ে তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘‘এত মিডিয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল৷ ইঞ্জিনিয়ারিংটা কোথায় হল? আমি অভিযোগ করছিলাম, ভোট স্লো হচ্ছিল৷ যদি স্লো না হতো তাহলে এক লাখ ভোটের ডিফারেন্স হতো৷... কী ধরনের সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে, আমি জানি না। দেশবাসী দেখেছে, মিডিয়া দেখেছে, নারায়ণগঞ্জবাসী দেখেছে, এখানে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে৷ ভোট কাস্টিং দ্রুত হলে ভালো হতো৷’’

সর্বোত্তম সিটি নির্বাচন: মাহবুব তালুকদার

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে নিজেদের পাঁচ বছর মেয়াদের ‘সর্বোত্তম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার৷ রোববার ভোট শেষে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে তিনি লিখিত বক্তব্যে উপস্থাপন করেন৷

‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ‘নির্বাচন সম্পর্কে-আমার কথা’ শীর্ষক বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আমাদের কার্যকালে সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন৷ এটি ছিল আমার অনেক প্রত্যাশার স্থান৷ কারণ, আমি ইতোপূর্বে বলেছি যার শেষ ভালো, তার সব ভালো৷’’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘‘বিগত ৫ বছরে যতগুলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, আমার বিবেচনায় আমাদের প্রথম কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সর্বোত্তম৷''

২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাঁচ সদস্যের ইসিতে নানা কর্মকাণ্ডে বারবার আলোচিত ছিলেন মাহবুব তালুকদার৷ বর্তমান কমিশনের অধীনে বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়ে এসেছেন মাহবুব তালুকদার৷ নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যে তিনি ‘গায়েবি মামলার' সমালোচনা করেন৷ বলেন, ‘‘আমি নিজে সবসময় গায়েবি মামলার বিরোধিতা করেছি৷ নির্বাচনকালে গায়েবি মামলার হিড়িক পড়ে যায় কেন, তা এক প্রশ্ন৷ এই নির্বাচনকালেও পুরোনো মামলায় আটক অব্যাহত রয়েছে, যা দুঃখজনক৷’’

এফএস/জেডএ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য