নাভালনির ঘটনায় পুটিনের যা হতে পারে
আলেক্সেই নাভালনিকে বিষ খাইয়ে মারার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন৷ নাভালনির নামই উচ্চারণ করেন না পুটিন৷ এমন অস্বীকার ও তাচ্ছিল্যের কৌশলের পরিণাম কী হতে পারে? ছবিঘরে বিস্তারিত...
রাশিয়ার রাজনীতিবিদ জার্মানিতে
রাশিয়ার বিরোধী রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী আলেক্সেই নাভালনি গত ২০ আগস্ট টোমাস্ক থেকে মস্কো যাওয়ার পথে বিমানে অজ্ঞান হয়ে যান৷ ১৮ দিন হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে গোপনে জার্মানিতে নিয়ে আসা হয় তাকে৷ বার্লিনে দীর্ঘ চিকিৎসার পর নাভালনি এখন সুস্থ৷
রাশিয়ার ‘অস্বীকার’ ও ‘আদেশ’
রাশিয়ার বিরোধী দল এবং পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, রুশ গোয়েন্দা সংস্থা নাভালনিকে বিষ খাইয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করা হচ্ছে৷ সম্প্রতি রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালের এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত নাভালনিকে অবিলম্বে সশরীরে হাজির হতে বলে, তা না হলে পরে দেশে ফেরামাত্র জেলে পোরা হবে তাকে৷
কৌশলী পুটিন
গত চার মাসে নাভালনির ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে৷ কিন্তু ভ্লাদিমির পুটিন একটিবারের জন্য নাভালনির নাম উচ্চারণই করেননি৷ জার্মানিতে নিয়ে আসার পর থেকে নাভালনিকে পুটিন বর্ণনা করছেন স্রেফ ‘বার্লিনের হাসপাতালের একজন রোগী’ হিসেবে৷
সবার কৌতূহল
রাশিয়া দায় অস্বীকার করলেও, পুটিন ‘বার্লিনের হাসপাতালের রোগী’ বলে তাচ্ছিল্য করলেও ঘটনার বিস্তার থেমে থাকেনি৷ নাভালনির বিষয়ে মানুষের কৌতুহলও কমেনি৷ অজ্ঞান হয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে দুটি ভিডিও অনুসন্ধানী নেটওয়ার্ক বেলিংক্যাট এবং দ্য ইনসাইডারে ছেড়েছিলেন নাভালনি৷ একটি ভিডিও এক সপ্তাহে দেখা হয়েছে দু কোটি বার, অন্যটি মাত্র দু দিনেই এক কোটি ৭০ লাখ বার! ওপরের ছবিতে বার্লিনে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে নাভালনি৷
রুশ নিরাপত্তা সংস্থার চরম ব্যর্থতা
ব্রিটেনের ইতিহাসবিদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্ক গালেওট্টি মনে করেন ‘নাভালনিকাণ্ড’ রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবিকে সের্গেই ক্রিপাল ও তার মেয়েকে বিষ খাওয়ানোর ঘটনার চেয়েও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, কারণ, ‘‘এফএসবি নাভালনিকে শুধু হত্যা করতে ব্যর্থই হয়নি, বড় একটা প্রমাণও রেখে দিয়েছে তারা, কেননা নাভালনিকে জার্মানিতে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে৷’’
পুটিনের কী হবে?
মার্ক গালেওট্টির ধারণা এত বড় ঘটনাকেও হয়ত কৌশলে সামাল দিয়ে ফেলবেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ ক্রেমলিন এখনো মনে করে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট দক্ষ৷ ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে যখন রুশ গোয়েন্দা সংস্থার নাম আসে, তখনও ধারণা করা হয়েছিল পুটিন হয়ত কোণঠাসা হবেন, বিব্রত হবেন৷ অথচ পরে সেই ঘটনার জন্য পুটিনকে ‘কিংমেকার’ ভেবেছেন অনেকে৷
‘রাশিয়া হতে চায় কঠোর খারাপ ছেলে’
রাশিয়ার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে গালেওট্টির মনে হচ্ছে, রাশিয়ায় যারা ক্ষমতাসীন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, ‘‘ওকে, আমরা যেহেতু ভালো ছেলে হতে পারবো না, চল তাহলে সবচেয়ে কঠোর খারাপ ছেলে হয়ে যাই৷’’ ব্রিটিশ ইতিহাসবিদের মতে, ‘‘ক্রেমলিনের নিয়ন্ত্রণ এখন এমন নিষ্ঠুর রাজনীতিবিদদের হাতে, যারা কিছুতেই থামবে না৷’’