নাবিকদের বিচার-পর্ব ঘিরে ভারত-ইটালি টানাপোড়েন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪কেরলের উপকূলে ২০১২ সালে দুই ভারতীয় মৎসজীবী হত্যায় অভিযুক্ত ইটালির দু'জন নাবিকের বিচার-পর্বকে কেন্দ্র করে ভারত ও ইটালির মধ্যে কূটনৈতিক চাপানউতোর চরমে পৌঁছেছে৷ সুপ্রিম কোর্ট মামলার শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২৪শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে লিখিতভাবে তাদের অবস্থান জানতে চেয়েছেন৷ ১০ই ফেব্রুয়ারির শুনানিকালে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, অ্যান্টি-পাইরেসি আইনে ফাঁসির বিধান আছে৷ কিন্তু ইটালির নাবিকদের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হবে না, বড় জোর ১০ বছরের জেল হতে পারে৷ তবে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মত জানতে চাওয়া হয়েছে৷
মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে ইটালি সরকার তার নতুন দিল্লির রাষ্ট্রদূত দানিয়েল মানসিনিকে পরামর্শের জন্য স্বদেশে ডেকে পাঠায়৷ পাশাপাশি রোমের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বসন্ত গুপ্তকে সেখানকার পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেকে পাঠিয়ে ভারতীয় আদালতে মামলাটির বিচারের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ইটালির অসন্তোষ ব্যক্ত করে বলা হয় যে, পরিস্থিতির সুরাহা করতে ভারতের অক্ষমতাই ফুটে উঠছে৷ এখনও পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি৷ তবে জানা গেছে, ইটালি থেকে আসা নাবিকদের বিচার অ্যান্টি-পাইরেসি বা জলদস্যুতা-বিরোধী আইনে করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না৷ গত সপ্তাহে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেটা৷ উল্লেখ্য, এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের ফাঁসির সাজাও হতে পারে৷
আসল বিরোধটা এইখানেই৷ প্রশ্ন হলো, কোন আইনে তাঁদের বিচার হবে? অ্যান্টি-পাইরেসি নাকি সমুদ্র জলপথ অঞ্চল আইনে৷ আইনি জটিলতার প্রেক্ষিতে, রোম যুক্তি দেখায় যে ঐ ঘটনাটি ঘটেছিল আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমায়৷ তাই এর মীমাংসা হবে আন্তর্জাতিক আদালতে৷ ভারত অবশ্য সেই যুক্তি খণ্ডন করে বলে যে, ঘটনাটি হয়েছিল ভারতীয় জলসীমার মধ্যে৷ ইটালির নাবিকরা ভারতীয় ধীবরদের জলদস্যু বলে মনে করে গুলি চালায় – প্রথমদিকে এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করে ইটালি৷ কিন্তু সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি৷
এরপর ইটালির অ্যান্টি-পাইরেসি আইন প্রয়োগকে চ্যালেঞ্জ করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী মুকুল রোহতগি৷ শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে মনস্থির না করা পর্যন্ত তিনি আসামিদের স্বদেশে ফেরৎ যাবার অনুমতি প্রার্থনা করেন শীর্ষ আদালতের কাছে৷ জানা যায়, আইন মন্ত্রণালয় সাধারণ ফৌজদারি আইনে বিচারের কথাই বলেছে৷ সমুদ্র জলপথ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তথা প্রাক্তন নৌ-অফিসার উদয় ভাস্কর মনে করেন, ইটালির নাবিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে বা ঠান্ডা মাথায় বা শত্রুতাবশত ভারতীয় মৎসজীবীদের হত্যা করেননি৷ এটা মর্মান্তিক হলেও সংবেদনশীলতার সঙ্গে তাঁদের বিচার করা উচিত৷
কিছু বিশেষজ্ঞ আবার মনে করেন, পুরো ব্যাপারটায় জলঘোলা হয়েছে রাজনীতি ঢোকায়৷ ২০১২ সালের বড়দিন উপলক্ষ্যে ইটালির ঐ দুই নাবিককে স্বদেশে যাবার অনুমতি দিয়েছিলেন সুপ্রীম কোর্ট৷ তবে সেটা দেয়া হয়েছিল এই শর্তে যে, তাঁরা স্বেচ্ছায় দুই মাসের মধ্যে ফিরে আসবেন৷ কিন্তু তাঁরা ভারতে ফিরতে অসম্মত হন৷ স্বাভাবিকভাবেই দেখা দেয় ভারতের জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় সম্মানের প্রশ্ন৷ শীর্ষ আদালত ইটালির রাষ্ট্রদূতকে বিনা অনুমতিতে ভারত ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন৷ বলা বাহুল্য, চাপের মুযখে পড়ে ২০১৩ সালের ২৪শে মার্চ ঐ দু'জন নাবিক দিল্লিতে ফিরে আসতে বাধ্য হন৷