নাইজেরিয়ার যমজদের শহর
দক্ষিণ পশ্চিম নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা শহরে গেলে যে কেউ ধন্ধে পড়বেন৷ কেননা জোড়া চেহারার বহু মানুষের দেখা মিলবে সেখানে৷
যমজদের রাজধানী
নাইজেরিয়ার ওইয়ো রাজ্যের ইগবো ওরা শহরে পর্যটকরা পথে পথে একটি ব্যানারের দেখা পাবেন৷ তার মূল কথা একটাই, ‘স্বাগত বিশ্বের যমজদের রাজধানীতে৷’ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে তার প্রমাণও মিলবে৷ দেখা মিলবে অনেক যমজ মানুষের সাথে৷
হাজারে ৫০
ছবির এই যমজ ভাইদের নাম কেহিন্দে এবং তাইয়ু কোলাওলে৷ কার নাম কোনটি সেটি মনে রাখাটা অবশ্য মুশকিল হতে পারে৷ ১৯৭০ এর দশকে এক ব্রিটিশ গাইনি বিশেষজ্ঞের গবেষণা অনুযায়ী এই অঞ্চলে প্রতি হাজারের মধ্যে যমজ জন্মের হার ৫০টি, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বেশি৷
নামের বাহার
কেহিন্দে এবং তাইয়ো আদেরগোবা ভাইয়ের মধ্যে মিল ও ভাব দুইই বেশ৷ শুধু চেহারা নয়, সেখানকার যমজদের নামেও থাকে মিল৷ ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের মানুষেরা যমজদের একটি নামই রাখেন৷ নামের আগে একজনের ক্ষেত্রে তাইয়ু আরেকজনকে কেহিন্দে বলে ডাকেন, যা দিয়ে বোঝা যায় কে আগে জন্ম নিয়েছে, কে পরে৷
চেনে কী করে!
ইগবো ওরা শহরেই যমজ জন্মের প্রবণতা বেশি, কিন্তু তার মধ্যেও এগিয়ে ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তাদের ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এসেম্বলিতে নয় যমজের দেখা পেয়েছেন রয়টার্সের সাংবাদিক৷ বন্ধুবান্ধব আর শিক্ষকরা তাদের গুলিয়ে ফেলে নাতো!
কেন এত জোড়া?
নবজাতক যমজ শিশুকে কোলে নিয়ে ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন এক মা৷ এই শহরের মানুষদের বেশিরভাগের বিশ্বাস ওকরা পাতা খাওয়ার অভ্যাসের কারণেই এত যমজ শিশুর জন্ম দেন তাঁরা৷ এই পাতা পানিতে সেদ্ধ করে খাওয়াটা ইগবো ওরার মানুষদের খুবই প্রিয়৷
কারণ একটাই নয়
ওকরা পাতার বিষয়টি ঠিক সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ অনেকের ধারণা আমালা নামের আরেক খাবার এর জন্য দায়ী৷ লাল আলু আর কাসাভা থেকে তৈরি আটা দিয়ে এই খাবার বানানো হয়৷ এর পেছনে একটি ব্যাখ্যাও আছে৷ খাবারটি নাকি বিশেষ হরমোন তৈরি করে, যা ডিম্বাণুর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়৷
আসল কারণ কী
কারণ খুঁজতে রয়টার্স দ্বারস্থ হয়েছিল নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোসের একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে৷ তিনি বলেছেন, লাল আলুর যেই খাবারের কথাটি মানুষ বলছেন সেটি সঠিক নয়, কেননা একই ধরণের খাবার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রচলিত আছে৷ তাঁর মতে সম্ভবত নিজেদের মধ্যে বিবাহ আর জিনগত ঐতিহ্যের কারণেই এখানকার নারীদের যমজ জন্মদানের প্রবণতা বেশি৷
বিশ্বাসে মেলায় বস্তু!
কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন স্থানীয় অধিবাসীরা৷ তাঁদের মতে ওকরা পাতা খাওয়ার উপরই বিষয়টি নির্ভর করে৷ এজন্য সেটি সেদ্ধ করে জমিয়ে না রেখে সাথে সাথেই খেতে হবে৷ ওয়েনিক বেমিমোর নামের এক নারী এর প্রমাণ পেয়েছেন বলে রয়টার্সের সাংবাদিককে জানান৷ ‘‘আমি অনেক ওকরা পাতা খাওয়ায় আট জোড়া যমজ সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছি,’’ বলেন তিনি৷