1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নদী ভাঙন ও বন্যায় অসহায় মানুষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেশের ১৩ জেলা এখন বন্যা কবলিত৷ বন্যার পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি যেমন তলিয়ে গেছে, তেমনি নদী ভাঙনেও সর্বস্ব হারাচ্ছে মানুষ৷ ব্রহ্মপুত্র, যমুনা আর তিস্তা নদীর ভাঙন তাদের সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3zpSr
পদ্মার উপচে পড়া পানিতে মানিকগঞ্চের প্লাবিত অঞ্চল৷ ছবিটি ২৩ আগস্টের৷ ছবি: Fatima-Tuj Johora/picture alliance/ZUMAPRESS.com

বন্যা পূর্ভাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি বেশ খারাপ৷
দেশের আটটি নদীর পানি ১৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে৷ দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের ১৩ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত আছে৷ ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও গঙ্গা, পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে৷
কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং শরীয়তপুর- এই ১১ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে৷ এর সাথে মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বলে জানান বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া৷

মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া

তিনি বলেন, ‘‘এবারের এই বন্যার কারণে উজানে প্রবল বৃষ্টিপাত৷ আসামে অনেক বৃষ্টি হয়েছে৷ সেই পানির ঢলে বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে৷’’

তিনি জানান, আরো দুই-তিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে৷ তারপর উন্নতির আশা করা যায়৷ তিনি আরো জানান, যেসব জেলায় বন্যা হচ্ছে হচ্ছে সব জেলায়ই কম বেশি নদী ভাঙন হচ্ছে৷

ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ এর তীরবর্তী কুড়িগ্রামের উলিপুরের হাতিয়া এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন এবং চিলমারীর নয়ারহাট ইউনিয়নসহ আরো অনেক এলকায় তীব্র নদী ভাঙন চলছে৷ কয়েকশ’ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে৷ উলিপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘উলিপুরের মোল্লারহাট নদী গর্ভে চলে গেছে৷ সেখানে ৩৫০টির মতো দোকান ছিল৷ ৬ নাম্বার ওয়ার্ডে সাড়ে তিনশ'র মতো পরিবার ছিল৷ তাদের সবার বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে৷ ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের ১০০ বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে৷’’

তিনি জানান, ‘‘যাদের বাড়িঘর ভেঙে গেছে, তারা পাশের গ্রামগুলোর খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন৷ কোনো সহায়তা তারা এখনো পাননি৷’’

মিজানুর রহমান

একই জেলার রাজাহাটে তিস্তার ভাঙনও তীব্র হয়েছে৷ ত্রাণ বরাদ্দ হলেও তা বিতরণ এখনো শুরু হয়নি৷ তালিকাও করা হয়নি৷

যমুনার তীরেও তীব্র ভাঙন চলছে৷ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নেও ভাঙন চলছে৷ ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ‘‘জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর , পাকড়তলা,ঘাটামারি, পুটিপাড়া ও ঘেটা গ্রামের ৭৫০টির মতো বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে৷ প্রায় আড়াই-তিন হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন৷ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ কেউ আবার নাটোরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন৷ দূরের বাঁধেও পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ৷” তিনি বলেন, বন্যার চেয়ে নদী ভাঙন বেশি বিপদে ফেলেছে৷

‘‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার মাত্র ৫০০ জনের জন্য পাঁচ মেট্রিক টন চাল দিয়ে গেছে৷ কিন্তু অনেক মানুষের সহায়তা দরকার,’’ বলেন তিনি৷

প্রতিবছরই এখানে নদী ভাঙে৷ কিন্তু ভাঙন রোধের কোনো উদ্যোগ অতীতে নেয়া হয়নি৷ এ বছর একনেকে নদী শাসনের জন্য ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়েছে৷ তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় কোনো এমপি-মন্ত্রী নাই, তাই আমাদের দেখার কেউ নাই৷’’

সুলতান মাহমুদ

বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ-ছয় হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমপক্ষে এক লাখ মানুষ৷ ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী শরীফ জামিল বলেন, ‘‘ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর উজানে ভারতে বাঁধ দেয়ায় নদীর স্বাভাকিক গতিপ্রবাহ নষ্ট হয়ে গেছে৷ আর আমাদের দেশে এই নদীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে , যার পরিণতি এই নদী ভাঙন৷ কারণ, নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করায় নদী ভরাট হয়ে যায়৷ নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে৷ বর্ষা মৌসুমে যখন পানি ছেড়ে দেয়া হয়, তখন নদীর ওই পানি নেয়ার সক্ষমতা থাকে না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বগুড়ার শারিয়াকন্দিতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাতবার নদীভাঙন হয়েছে৷’’ তিনি জানান, নদী ভাঙনসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর চার লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকা শহরে আসেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান