অবসান হয়নি ‘ওড়না' আর ‘ছাগল' বিতর্কের
৩০ ডিসেম্বর ২০১৭প্রাথমিকের পাঠ্য বইয়ে যে ওড়না বিতর্ক ছিল তার অবসান হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না৷ ‘ও তে ওড়না দাও' এটা প্রাথমিকের বইয়ে থাকছে না৷ তবে জানা গেছে, এবার ওড়না জায়গা করে নিয়েছে প্রাক প্রাথমিকে৷ সেখানে আছে ‘ও তে ওড়না'৷
অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের শিক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদক রশিদ আল রুহানী ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘নানা সূত্র থেকে যোগাড় করে আমার নতুন বছরের কিছু বই দেখার সুযোগ হয়েছে৷ চলতি বছরের প্রাথমিকের বাংলা পাঠ্যপুস্তকে ওড়না এবং ছাগলের গাছে উঠে আম খাওয়া নিয়ে বিতর্ক ছিল৷ নতুন বছরে বইয়ে সেই ওড়না পড়া মেয়েটিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ সেখানে ওজনের একটি চিত্র দেয়া হয়েছে৷ ওজনের ওপর মেয়েটিকে রাখা হয়েছে৷ পাঠও পরিবর্তন করা হয়েছে৷ আর যেখানে ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছিল তার জায়গায় ছাগলটিকে গাছ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে৷
রুহানী বলেন,‘‘প্রাথমিক থেকে ওড়না সরানো হলেও প্রাক প্রাথমিকে নতুন করে তা জায়গা করে নিয়েছে৷ প্রাক প্রাথমিকে ‘ও' দিয়ে ওড়না চেনানো হয়েছে এবং একটি মেয়েকে ওড়না পরিয়ে রাখা হয়েছে৷ আর ছাগলকে গাছ থেকে নামানো হলেও ছাগলকে আগের মত ‘অজ' ই লেখা হয়েছে৷ অজ অর্থ ছাগল হলেও এমন একটি অপরিচিত শব্দ ব্যবহার নিয়ে এর আগে বিতর্ক হবার পরও শব্দটি পরিবর্তন করা হয়নি৷ আর ছাগলের আম খাবার বিষয়টি এখানে অপ্রাসঙ্গিক এবং হাস্যকর৷''
এই সাংবাদিক আরো বলেন, ‘‘ওই একই ছাগলের ছবি আরো পাঁচ জায়গায় প্রাথমিকের একই বইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে৷ একটি পাঠ্যপুস্তকে এত ছাগল কেন?''
এছাড়া চলতি পাঠ্যপুস্তক নিয়ে রয়েছে আরো গুরুতর অভিযোগ৷ যেমন অনেকে মনে করছেন, পাঠ্যপুস্তকে হেফাজতে ইসলামের নানা আবদার মানা হয়েছে৷ তাদের দাবিতে হিন্দু এবং প্রগতিশীল লেখকদের কিছু লেখা বাদ দেয়া হয়৷ নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তকে তার কোনো পরিবর্তন আছে কিনা জানতে চাইলে রুহানী বলেন, ‘‘না সেখানেও কোনো পরিবর্তন বা পরিমার্জন আসেনি৷ নতুন বইয়ে তা আগের বইয়ের মতই আছে৷ যাদের লেখা বাদ দেয়া হয়েছিল তাদের লেখা নতুন করে আবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷''
নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক বিতর্ক নিয়ে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের(এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন,‘‘ওড়না আসলে কোনো ভুল ছিলো না৷ এটা নিয়ে বিরূপ সমালোচনা হয়েছে৷ তাই আমরা নতুন প্রাথমিকের বইয়ে ওড়না রাখিনি৷ আর ছাগল গাছ থেকে নামিয়ে দিয়েছি৷''
প্রগতিশীল ও হিন্দু লেখকদের যেসব লেখা বাদ দেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘ওই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই৷ আর তাদের লেখা নতুন বছরের বইয়েও থাকছে না৷'' তিনি দাবি করেন, এবার শিক্ষার্থীরা ভুল ভ্রান্তি মুক্ত বই পাচ্ছে৷
নানা সমালোচনা থাকলেও জানা গেছে এবারের বইয়ের ছাপা এবং কাগজের মান ভালো৷ আর সব বইয়ের কাভারই মোটা কাগজে লেমিনেটিং করা৷
প্রতিবছরের মত এবারও সারাদেশের স্কুলগুলোতে পাঠ্যপুস্তক উৎসব হবে৷ বছরের প্রথম দিনেই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীরা পাবে বিনামূল্যে সরকারি বই৷ এরইমধ্যে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নতুন বই পৌঁছে গেছে৷ এবার প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার চার কোটি ৪২ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ৩৫ কোটি বই বিতরণ করা হবে৷
এ বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷