নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন পা হারানো এক ‘যোদ্ধা
সন্তান জানতে চেয়েছিল, ‘‘তোমার পা কোথায়?’’ কো ফিও বলেছিলেন, ‘‘কুকুর নিয়ে গেছে৷’’ অনিচ্ছায় হলেও যাদের কুকুর বলেছিলেন মিয়ানমারকে এখনো তাদের হাত থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখেন কো ফিও৷ ছবিঘরে তার জীবনের গল্প....
এক ছা-পোষার প্রতিবাদী হয়ে ওঠা
ইয়াঙ্গনে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির যানবাহনের লাইসেন্সিং বিভাগের কর্মী কো ফিও৷ কিন্তু গত দুই ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনি অং সান সু চিকে আটক করে ক্ষমতা দখলের পর যে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু হলে চাকরি, নিরাপদ জীবন ইত্যাদিকে গুরুত্ব না দিয়ে কো ফিও-ও নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়৷
সেদিনের কথা
মার্চের সেই দুপুরে সেনাবাহিনীর অপসারণ এবং সু চি-র মুক্তির দাবিতে চলমান বিক্ষোভে কো ফিও-ও ছিলেন৷ হঠাৎ তার পা লক্ষ্য করে গুলি চালায় এক সেনাসদস্য৷ পায়ে গুলি লাগায় উপুড় হয়ে পড়ে যান কো ফিও৷ এক পুলিশ সদস্য তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গেলে হয়ত প্রাণ নিয়েই আর ফেরা হতো না৷
অনুমতি দিলেন পা কাটার
পায়ে গুলি লাগলেও একেবারে কেটে ফেলতে হবে তা ভাবতেও পারেননি কো ফিও৷ কিন্তু হাসপাতালে যত দিন যাচ্ছিলো ব্যথা তত তীব্র হচ্ছিলো৷ একটা সময় কো ফিও নিজেই ডাক্তারদের বললেন, ‘‘এত ব্যথা সহ্য করা যায় না৷ আপনারা আমার পা কেটে ফেলুন৷’’
সন্তানকে প্রবোধ
নিজের কাটা পা সবসময় ঢেকে রাখেন ২৪ বছর বয়সি কো ফিও৷ কিন্তু ঢেকে রাখলেই তো কষ্ট আড়াল হয় না! প্রথম দিন দু বছরের সন্তান জানতে চেয়েছিল, ‘‘বাবা, তোমার পা কোথায়?’’ মা-হারা ছেলেটাকে সত্যি কথা বলতে পারেননি৷ বলেছিলেন, ‘‘আমার এই পা-টা একটা কুকুর নিয়ে গেছে৷ একদিন এসে আবার ফিরিয়ে দিয়ে যাবে৷’’
সহযোদ্ধাদের প্রতি আস্থা
সেনশাসনবিরোধী চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৮০০ মানুষ মারা গেছেন বলে জানিয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স৷ এখনো চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ৷ পা হারানোয় কো ফিও-র বিক্ষোভে যোগ দিতে পারেন না৷ তার গণতন্ত্রকামী সহযোদ্ধারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, একদিন সাফল্য আসবেই- এ আশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লড়াই চালিয়ে যেতে হবে৷ শহীদদের প্রতি সুবিচারের স্বার্থেও এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে৷’’