ধোনি: রেলের চেকার থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
হঠাৎই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি৷ যিনি টিম ইন্ডিয়াকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়৷ ছবিঘরে থাকছে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের গল্প৷
রেলের চাকরি
২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ধোনি ভারতের সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ের অধীনে টিকেট ট্রাভেলিং টিকেট এক্সামিনার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন৷ তার কাজ ছিল এক প্লাটফর্ম থেকে অন্য প্লাটফর্মে কোটা তালিকা হস্তান্তর করা৷ এজন্য কোন ডেস্কও তার ছিল না বলছে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া৷ এই কাজ নিয়ে তার মধ্যে ছিল হতাশাও৷
ক্রিকেটে যাত্রা
১৯৯৮ সাল পর্যন্ত স্কুল আর ক্লাব পর্যন্তই ছিল ধোনির ক্রিকেটে দৌড়৷ সেসময়ই তিনি বিহারের সেন্ট্রাল কোল ফিল্ডস লিমিটেড দলে যোগ দেন৷ পরবর্তীতে বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে৷ অভিষিক্ত হন রঞ্জি ট্রফিতে৷ খেলেছেন বিহারের অনূর্ধ্ব ১৯ দলেও৷
নজর কাড়া
২০০৩ সালে ধোনি জায়গা পান ভারতের এ দলে৷ যান জিম্বাবোয়ে ও কেনিয়া সফরে৷ ব্যাটিং আর উইকেট কিপিং দিয়ে জাতীয় দলের নজর কাড়তে শুরু করেন তিনি৷
জাতীয় দলের টিকেট
এ সময় সৌরভ গাঙ্গুলির অধীনে ভারতীয় দল একজন উইকেট কিপার-ব্যাটসম্যানের সন্ধান করছিল৷ তৈরি ছিলেন ধোনি৷ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সফরে সৌরভ গাঙ্গুলির টিম ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত হন তিনি৷ যদিও প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে তাকে ফিরতে হয়েছিল সাজঘরে৷ পরবর্তীতে পাকিস্তান সিরিজেও জায়গা পান তিনি৷
এগিয়ে চলা
এরপর আর তেমন একটা পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে৷ এক বছরের মাথায় তার টেস্ট ডেব্যু হয় শ্রীলংকার বিপক্ষে৷ ২০০৬ সালে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন প্রথম টি-টোয়েন্টি৷
ম্যাচ জয়ী
ধোনি হয়ে ওঠেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অপরিহার্য সদস্য৷ বহুবার তিনি দলকে টেনে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে৷ রান তাড়া করে দলকে জেতানোয় তার জুড়ি মেলা ভার৷ সঙ্গে ট্রেডমার্ক হেলিকপ্টার শট তো ছিলই৷
ক্যাপ্টেন কুল
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টিতে ধোনিকে অধিনায়ক করে ভারত৷ নেতৃত্ব আর ব্যাটিং দিয়ে ধোনি এনে দেন ট্রফি৷ সেবছরই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাতটি ম্যাচের জন্য প্রথম ওডিআই এর অধিনায়কত্ব পান৷ কুম্বলের অবর্তমানে ২০০৮ সালে মিলে যায় টেস্ট অধিনায়কত্বও৷
সফলতম অধিনায়ক
তার অধীনেই ভারতীয় ক্রিকেট দল ২০০৯ সালে আইসিসি ব়্যাংকিং এর এক নম্বরে উঠে৷ ২০১১ সালে ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসান তিনি৷ জেতান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপও৷ তার অধীনে মোট ২০০ ওডিআই, ৭২ টি টোয়েন্টি আর ৬০ টি টেস্টের ১৫১ টিতে জয় পেয়েছে ভারত৷ আইসিসি ট্রফি আর ম্যাচ জয়ে তার উপরে আছেন শুধু রিকি পন্টিং৷
টেস্ট ক্যারিয়ার
নব্বইটি টেস্ট ও ১৪৪ টি ইনিংসে ধনীর মোট রান চার হাজার ৮৭৬৷ আছে ছয়টি শতক আর ৩৩ টি অর্ধশতক৷ সর্বোচ্চ রান ২২৪৷
ওয়ানডে ক্যারিয়ার
ওয়ানডেতে মোট ৩৫০ টি ম্যাচ খেলে করেছেন ১০ হাজার ৭৭৩ রান৷ আছে দশটি শতক আর ৭৩ টি অর্ধশতক৷ ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৮৩৷
বিদায় বেলা
২০১৪ সালেই টেস্টকে বিদায় জানান তিনি৷ ২০১৭ সালে সীমিত ওভার ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব ছাড়েন৷ সবশেষ খেলেছেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে৷ ১৫ আগস্ট ইনস্টাগ্রামে ভিডিও বার্তায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন ক্যাপ্টেন কুল৷
ক্রিকেটের বাইরে
ধোনির এই বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারকে খেলা ছাড়ার আগেই চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছে বলিউড৷ ফোর্বসের ধনী খেলোয়াড়দের তালিকাতেও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন৷ ২০১৫ সালে তার সম্পদের পরিমান ছিল ৩ কোটি ডলারের উপরে৷ ভারতীয় সেনাবাহিনী ২০১১ সালে তাকে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট কর্নেল উপাধি দিয়েছে৷