ধর্মঘটে অচল ফ্রান্স
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ প্রস্তাবিত পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে নেমেছেন দেশটির পাবলিক সেক্টরের কর্মীরা৷ বন্ধ হয়েছে স্কুল, পরিবহণব্যবস্থা, হাসপাতালের জরুরি ব্যবস্থাগুলোও চলছে স্বল্প কর্মীদের দ্বারা৷
প্রচণ্ড যানজট
গণপরিবহণ শ্রমিকরা ধর্মঘটে যাওয়ায় অনেকেই সাইকেল বা স্কুটার ভাড়া করেছেন৷ তবে বেশিরভাগই গাড়ি ভাড়া করে বা নিজের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন৷ অতিরিক্ত গাড়ির চাপে অনেক বড় শহরেই যানজট সৃষ্টি হয়৷ প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে প্যারিস অঞ্চল৷
প্রভাব পড়েছে রেল-বিমানেও
হাইস্পিড ট্রেনের ৯০ শতাংশ এবং আঞ্চলিক ট্রেনের ৭০ শতাংশ বাতিল করেছে ফরাসি রেলওয়ে৷ ফরাসি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিমান সংস্থাকে বিমানের কেন্দ্রীয় বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ২০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে৷
মাক্রোঁ দাবি
সরকারি খাতের কর্মীরা এই সংস্কার নিয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট৷ প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়ন হলে এখনকার খাতভিত্তিক ৪২টি পেনশন প্রকল্প বাতিল হয়ে পয়েন্টভিত্তিক পেনশন পদ্ধতিচালু হবে৷ বর্তমানে, রেল শ্রমিক, নৌশ্রমিক এবং কিছু ব্যালে নৃত্যশিল্পী অন্যান্য খাতের শ্রমিকের তুলনায় ১০ বছর আগে অবসর নিতে পারেন৷ এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, তার প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি আগের চেয়ে ভালো হবে৷
সব প্রস্তাবেই আন্দোলন
প্রায় তিন দশক ধরে ফরাসি সরকার অবসরভাতার ব্যবস্থাটিকে সংস্কারের চেষ্টা করে আসছে৷ কিন্তু বারবরই তীব্র আন্দোলনের মুখে তাদের সেখান থেকে পিছু হটতে হয়েছে৷
কম বয়সে অবসর
অতীতের সব আন্দোলনেরই মূল কারণ ছিল অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা কম রাখা৷ ফ্রান্সে পেনশনের বয়স বাড়িয়ে ৬২ বছর করা হয়েছিল৷ অনেক চেষ্টার পর ২০১০ সালে ৬০ বছর থেকে তা বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল৷ কিন্তু ওইসিডি দেশগুলির মধ্যে এটি সর্বনিম্ন৷ জার্মানিতে অবসরে যাওয়ার বয়স ৬৭ বছর৷
আন্দোলনে ভিন্নমত
ফরাসি বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারাই এই আন্দোলন পরিচালনা করছেন৷ তবে তাদের মধ্যে একতার ঘাটতি রয়েছে৷ সিজিটি নামের ইউনিয়নটি এ বিষয়ে কট্টর৷ সরকারের সব পেনশন সংস্কার প্রস্তাবই এটি প্রত্যাখ্যান করেছে৷ দেশটির আটটি তেল শোধনাগারের সাতটি এটি বন্ধ করে দিয়েছে৷ কিন্তু সিএফডিটি ইউনিয়ন এক্ষেত্রে একটু উদার এবং পয়েন্ট-ভিত্তিক সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করতে রাজি৷
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে
বৃহস্পতিবার আন্দোলন শুরুর দিনে বিক্ষোভকারীরা শান্তই ছিলেন৷ কিন্তু প্যারিসের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু মুখোশধারী বিক্ষোভকারী বাস স্টপ, দোকানে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে, পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণও চালায়৷ এরপর শুক্রবারও বিভিন্ন স্থানে এমন সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে৷
যোগ দিতে পারে ইয়েলো ভেস্ট
বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বিখ্যাত হওয়া ইয়েলো ভেস্টও এই ধর্মঘটে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের সময় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়েছিল প্যারিস জুড়ে৷ ফলে এই আন্দোলনে ইয়েলো ভেস্ট কর্মীরা যোগ দিলে তা আরো সহিংস হয়ে উঠতে পারে৷ অনেকে ফ্রান্সে এই সাধারণ ধর্মঘটকে কেবল অবসরভাতা সংরক্ষণের জন্য নয়, দেশের সামাজিক সুরক্ষাকে রক্ষার আন্দোলন হিসাবেও দেখছেন৷
দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন
সহিংসতা রোধে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার সামনে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে আরো নতুন কৌশল অবলম্বন করার কথা জানিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীও৷